বাঙালি তরুণীকে খুন করে মাংস খেয়েছিল দুজন! নিঠারি মামলায় সুরিন্দর কলি এবং মনিন্দর পান্ধেরকে খালাস

প্রায় ১৭ বছর আগে দেশ ও বিশ্বকে কাঁপানো বহুল আলোচিত নিথারি মামলার অভিযুক্ত সুরেন্দ্র কলি এবং মনিন্দর সিং পান্ধেরের স্বস্তি। এলাহাবাদ হাইকোর্ট কলি ও পান্ধেরকে খালাস দিয়েছে এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে। এ বিষয়ে তথ্য দিতে গিয়ে মনিন্দর সিং পান্ধেরের আইনজীবী মনীষা ভান্ডারি বলেন, হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডের দুটি মামলাতেই পান্ধেরকে সম্মানজনকভাবে খালাস দিয়েছে। পান্ডেরের বিরুদ্ধে মোট ৬টি মামলা ছিল। যার মধ্যে দুটিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, সুরেন্দ্র কলি হাইকোর্টে দায়ের করা সব আপিলেও খালাস পেয়েছেন।

মনিন্দর সিং পান্ধেরের আইনজীবীর মতে, ট্রায়াল কোর্ট ১৪টি মামলায় সুরেন্দ্র কলিকে এবং দুটি মামলায় মনিন্দর সিং পান্ধেরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। উভয় অভিযুক্তই তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্তকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিল। তিনি আদালতকে বলেছিলেন যে এসব ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক ও পরিস্থিতিগত প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। উভয় আবেদনের ওপর দীর্ঘ শুনানি হয়। অবশেষে সোমবার সুরেন্দ্র কলি ও পান্ধেরকে নির্দোষ ঘোষণা করে খালাস দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি অশ্বিনী কুমার মিশ্র ও বিচারপতি এস এ হুসেন রিজভির বেঞ্চ কলি ও পান্ধেরের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনীষা ভান্ডারি বলেছেন যে পান্ডেরের বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা ছিল, যার একটিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই তাকে খালাস দিয়েছে। বাকি তিনটিতে নিম্ন আদালতে তিনি খালাস পান। বাকি দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড ছিল। সোমবার তাদের মধ্যে তিনি খালাস পান। এখন তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি বিচারাধীন নেই। আশা করছি তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে আসবে।

নৃশংস হত্যা ও ডজন খানেক মেয়েকে ধর্ষণের এক ডজনেরও বেশি মামলায় মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন কলি। পান্ধেরও দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন। নিথারি গ্রামের মেয়েদের নয়ডায় পান্ডেরের বাড়িতে এনে খুন করা হয়।

২০০৫-২০০৬ সাল নাগাদ নিঠারিতে একের পর যুবতী, কিশোর-কিশোরী নিখোঁজ হতে শুরু করে। তার তদন্তে নেমে ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিঠারির ব্যবসায়ী পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৯টি কঙ্কাল এবং কিছু দেহাবশেষ। এই ঘটনায় গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে তদন্তে উঠে আসে, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের উপর যৌন অত্যাচার চালিয়ে খুন করে তাদের দেহের অংশ প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে খেয়ে ফেলতেন পান্ধের এবং তাঁর বাড়ির পরিচারক সুরেন্দ্র। পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কারগুলির মধ্যে একটি ছিল বাঙালি তরুণী পিঙ্কি সরকারের কঙ্কাল। অভিযোগ ছিল, যৌন নির্যাতনের পরে খুন করা হয় তাঁকে। সেই মামলায় পান্ধের এবং কোহলিকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিলেন সিবিআই আদালতের বিশেষ বিচারক পবন তিওয়ারি।

কলি এবং পান্ধের দুজনেই ২০০৬ সাল থেকে গাজিয়াবাদের ডাসনা জেলে বন্দী। সিবিআইয়ের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন তিনি। আবেদনে তিনি নিজেকে নির্দোষ ঘোষণা করেন। হাইকোর্ট উভয়ের আবেদন গ্রহণ করেন। তাদের আপিলের ওপর দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের পর গত সেপ্টেম্বরে ডিভিশন বেঞ্চ রায় সংরক্ষিত রেখেছিল, যা আজ ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের দুজনকেই নির্দোষ ঘোষণা করা হয় এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়।