বিহারের গয়া জেলার রেনগাইনি গ্রাম গণতন্ত্রের এক দারুণ উদাহরণ। এখানকার প্রায় ৪০০ ভোটার প্রতি নির্বাচনে ৫ কিমি দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ভোট দেন। তাঁরা এটিকে নিজেদের অধিকার মনে করে গ্রামের কাছে ভোটকেন্দ্র তৈরির দাবি জানাচ্ছেন।

গয়া: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর আবহে, যেখানে অনেক ভোটার সুবিধার অভাবের অজুহাতে ভোট দিতে চান না, সেখানে গয়া জেলার ফতেপুর ব্লকের রেনগাইনি গ্রাম এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে অবস্থিত এই প্রত্যন্ত গ্রামের প্রায় ৪০০ ভোটারের জন্য, ভোট দেওয়া শুধু অধিকার নয়, এটি একটি महापর্ব, যার জন্য তাঁরা প্রতিবার ৫ কিলোমিটার দুর্গম পথ হাসিমুখে পাড়ি দেন।

এবড়োখেবড়ো পথ পেরিয়ে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত

রেনগাইনি গ্রামটি ঘন জঙ্গল এবং উঁচু-নিচু পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত। এই সীমান্তবর্তী গ্রামে পৌঁছানোর রাস্তা খুব সরু এবং এবড়োখেবড়ো, যা বর্ষাকালে আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এই কঠিন ভৌগোলিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও, গ্রামবাসীদের উৎসাহ প্রতিটি নির্বাচনে তুঙ্গে থাকে। গ্রামবাসীদের ভোট দেওয়ার জন্য আজও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে চোढ़ी গ্রামে অবস্থিত ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাতে হয়। গ্রামের লোকেরা খুব সকালে তাদের যাত্রা শুরু করে, কাঁধে লাঠি বা শিশুকে কোলে নিয়ে তারা উৎসাহের সাথে ভোটকেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যায়। গ্রামের মহিলা ও বয়স্করাও এই গণতান্ত্রিক যাত্রায় পিছিয়ে থাকেন না।

ভোটদান ভবিষ্যতের সুরক্ষার মাধ্যম

গ্রামবাসীরা জানান যে গণতন্ত্রের প্রতি তাদের এই অটুট বিশ্বাস কয়েক দশক পুরোনো। বয়স্করা মনে করেন যে "ভোট দেওয়া আমাদের অধিকার শুধু নয়, ভবিষ্যতের সুরক্ষার মাধ্যমও।" এই দৃঢ় বিশ্বাসের কারণে, কঠিন পথ এবং সীমিত সুবিধার মধ্যেও তারা ভোটের হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবসময় নজির তৈরি করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে আগে ভোটকেন্দ্র আরও দূরে ছিল, যা প্রশাসন এখন কিছুটা কাছে এনেছে, কিন্তু পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

গ্রামবাসীদের দাবি- ভোটকেন্দ্রের পুনর্বিবেচনা

রেনগাইনি গ্রামের ভোটাররা সরকার ও প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন যে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্রগুলি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। যদি ভোটকেন্দ্র গ্রামের কাছাকাছি স্থাপন করা হয়, তাহলে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং মহিলাদের ভোট দিতে অনেক সুবিধা হবে এবং এটি অবশ্যই ভোটের হারকে আরও শক্তিশালী করবে। রেনগাইনি গ্রাম আজও প্রমাণ করছে যে জনগণের ইচ্ছা যখন দৃঢ় হয়, তখন পাহাড় এবং জঙ্গলের মতো বাধাও গণতন্ত্রে অংশগ্রহণের পথে বাধা হতে পারে না। এই গ্রামটি সমগ্র বিহারের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।