সংক্ষিপ্ত
শুক্রবার সারা রাত ধরে ওড়িশার সমস্ত হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করেও কিছুতেই ছেলেকে খুঁজে পাননি বৃদ্ধ বাবা।
হাওড়া জেলায় ছোট্ট একটি দোকান চালান বৃদ্ধ হেলারাম মল্লিক। শুক্রবার নিজের ছেলে বিশ্বজিতকে শালিমার স্টেশনে গিয়ে করমন্ডল এক্সপ্রেসে তুলে দিয়ে এসেছিলেন তিনি। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি খবর পান যে, ওই ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের ছেলেকে কল করেন হেলারাম মল্লিক। ওপাশ থেকে তাঁর ছেলে কলটি রিসিভ করেছিলেন। এর ফলে হেলারাম বুঝতে পারেন যে, তাঁর ছেলে বেঁচে রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি ভয়ানক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
এই কথা বুঝতে পারার পরেই তিনি এক মুহূর্তও দেরি করেননি। তাঁর প্রতিবেশী পলাশ পণ্ডিতের একটি নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স ছিল, পলাশ নিজেই সেটা চালাতেন। ওই রাতে পলাশকে ফোন করেন হেলারাম। এরপর নিজের শ্যালক দীপক দাসকে সঙ্গে নেন। এবং শুক্রবার রাতেই ৩ জন মিলে বেরিয়ে পড়েন ২৪ বছর বয়সী বিশ্বজিত মল্লিককে খুঁজে বের করতে। ২৩০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে যখন তাঁরা বালেশ্বর পৌঁছন, তখন একেবারে মধ্যরাত। সারা রাত ধরে ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি সমস্ত হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করেও কিছুতেই ছেলেকে খুঁজে পাননি বৃদ্ধ বাবা।
কিন্তু, হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না তাঁরা কেউই। হেলারামের শ্যালক দীপক দাস বলেছেন, “আমরা ওখানকার লোকেদের জিজ্ঞাসা করতে গিয়েছিলাম। এরপর কোথায় যেতে হবে সে বিষয়ে লীড পাওয়ার আশায়। একজন ব্যক্তি আমাদের বলেছিলেন যে যদি আমরা হাসপাতালে কাউকে না পাই তবে আমাদের বাহানাগা হাইস্কুলে খুঁজে দেখা উচিত, যেখানে সব মৃতদেহগুলো রাখা হয়েছিল।” বিশ্বজিৎ যে মারা যেতে পারেন, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি তাঁর বাবা এবং মামা। তা সত্ত্বেও তাঁরা সেখানকার অস্থায়ী মর্গে লাশের স্তূপের মধ্যে নিজের ছেলেকে খুঁজতে শুরু করেন।
নিহতদের পরিবারের মানুষদের লাশ খুঁজতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে সেখানকার কর্মীরা বিশ্বজিতকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন। সেই সময়েই হঠাৎ করে মর্গের ভিতরে একটা শোরগোল শুনতে পাওয়া যায়। শোনা যায় যে, একটা লাশের হাত নড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে হেলারাম এবং দীপক সেখানে ছুটে যান এবং দেখতে পান যে, ওই ডান হাতটা বিশ্বজিতেরই, সেই সময়ে তাঁর একেবারেই জ্ঞান ছিল না এবং তিনি ব্যাপকভাবে আহত হয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মর্গ থেকে তাঁকে তুলে পলাশ পণ্ডিতের অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে বালেশ্বর হাসপাতালে নিয়ে আসেন হেলারাম এবং দীপক। সেখানে তাঁকে কয়েকটা ইঞ্জেকশন দিয়ে কটক হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। কিন্তু, হেলারাম এবং দীপক ওই হাসপাতাল থেকেই বন্ডে সই করে বিশ্বজিতকে নিয়ে শনিবার ভোররাতেই কলকাতার পথে রওনা হয়ে যান।
শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে বিশ্বজিতকে নিয়ে SSKM হাসপাতালে পৌঁছে দেন পলাশ পণ্ডিত। রবিবার তাঁর গোড়ালিতে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। সোমবার তাঁর পায়ে আরও একটি অস্ত্রোপচার করার কথা রয়েছে। তাঁর ডান হাত, যেটি সেদিন মর্গে কেঁপে উঠেছিল, সেটিতে অনেকগুলি চিড় ধরেছে বলে দেখতে পেয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন-
এবার পশ্চিমবঙ্গের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে ইডির নোটিস, দিল্লিতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ
সন্তানদের নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরাকে বাধা
Coromandel Express Driver: কেমন আছেন করমন্ডল এক্সপ্রেসের চালক? প্রকাশ পেল সেই রিপোর্ট