সংক্ষিপ্ত
ফরাসি পোর্টাল মিডিয়াপার্টে ৫৯ হাজার কোটি টাকার রাফাল দুর্ণীতির তদন্ত করছে। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে একটি জাল চালান প্রকাশ করা হয়েছে।
আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এল রাফাল (Rafale) যুদ্ধবিমান। তবে এবার আর দেশের কোনও সংবাদ মাধ্যমের কারণে নয়। এবার ফরাসি সংবাদ মাধ্যমের একটি প্রতিবেদনই আবার রাফাল যুদ্ধ বিমানকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। মিডিয়াপার্ট নামে ফরাসি একটি পোর্টালের দাবি, যুদ্ধ বিমান নির্মাতা সংস্থা ডাসাল্ট (Dassault) ভারতে ৩৬টি যুদ্ধবিমান বিমান বিক্রি করার জন্য একজন মধ্যসত্ত্বভোগীতে কমপক্ষে ৭.৫ মিলিয়ন ইউরো অর্থাৎ ৬৫০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬৫কোটি টাকা দিয়েছে। তৈরি করা হয়েছিল নকল চালান। একই সঙ্গে সেই মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় তদন্তকারীদের হাতে এইসব তথ্য থাকা সত্ত্বেও তারা তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফরাসি পোর্টাল মিডিয়াপার্টে ৫৯ হাজার কোটি টাকার রাফাল দুর্ণীতির তদন্ত করছে। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে একটি জাল চালান প্রকাশ করা হয়েছে। যেটিতে দাবি করা হয়েছে, মধ্যসত্ত্বভোগী হিসেবে জনৈক সুশেন গুপ্তাকে কমিশন দিয়েছিল ডাসল্ট। নথিগুলির অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেই ভারতের ফেডারেল পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কোনও অনুসন্ধান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই তদন্ত শুরু হয়নি। মিডিয়া রিপোর্টে স্পষ্ট করে দাবি করা হয়েছে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, ইডি, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে এই তথ্য ২০১৮ সাল থেকেই রয়েছে। কিন্তু তারপরেও তারা বিষয়টি নিয়ে কোনও রকম নাড়াচাড়া করেনি।
প্রতিবেদনে অনুসারে ২০১৩ সালের আগেই এজাতীয় বেশিরভাগ অর্থই প্রমাণ করা হয়েছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও সিবিআই মুখ খোলেনি। অন্যদিকে রাফাল কাগজপত্র নিয়ে মিডিয়াপার্টের তদন্ত জুলাই মাসে ফ্রান্সে দুর্নীতি, প্রভাব বিস্তার ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে।
সুশেন গুপ্তা এজাতীয় কেলেঙ্কারিতে রীতিমত পরিচিত নাম। কারণ ইন্টারস্টেলার টেকনোলজিসে নথিভুক্ত একটি শেল কোম্পানির মাধ্যমে অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড থেকে ঘুস নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই তদন্তের জন্য মরিশাস কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিক সমস্ত তথ্য সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কাছে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে রাফাল চুক্তিতে দুর্ণীতির অভিযোগে এজেন্সির একটি অফিসিয়াল অভিযোগ পাওয়ার একসপ্তাহ পরই ১১ অক্টোবর ২০১৮ সালেই সমস্ত নথি সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল। যদিও অজ্ঞাত কারণে সিবিআই তা নিয়ে তদন্ত করতে রাজি হয়নি। কিন্তু এটি প্রমাণিত যে গোপনে ঘুষের অর্থ প্রদান করা হয়েছিল।
Fisherman Shot Dead: ভারতীয় মৎসজীবীকে গুলি করে হত্যা, পাকিস্তানের কার্যকলাপ নিয়ে তদন্ত শুরু
সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে সুশেন গুপ্তা ডাসল্টের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ফরাসি এভিয়েশন ফার্ম থেকে ২০০৭-২০১২ সালের মধ্যে কক্ষপক্ষে ৭.৫ মিলিয়ন ইউরো পেয়েছে সে। ফান্স থেকে বেশিরভাগ অর্থই ঘুরপথে মরিশাসে পাঠান হয়েছে। কিছু চালানে ডাসাল্ট অ্যাভিয়েশনের নামও উল্লেখ রয়েছে।
মিডিয়াপার্টের রিপোর্টে বলা হয়েছিল তাদের হাতে থাকা তথ্য ২০০৭-২০১২ সালের নিলাম প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। যা ডাসল্ট জিতেছিল। সেই সময় ভারতের মসনদে ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএস সরকার। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে ভারতের সঙ্গে রাফাল চুক্তি হয়েছেন তার অনেক পরে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর।
সিবিআইএর হাতে থাকা চালান আর ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট বলছে, সুশেন গুপ্তার শেল কোম্পানি ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যেই ৯ লক্ষেরও বেশি ইউরো নিয়েছিল। অর্থ স্থানান্তরিত করার জন্য একটি বেআইনি সাপ্লাই চেইনও তৈরি করেছিল। অ্যাভিয়েশন কোম্পানিটি সিঙ্গাপুরের একটি সংস্থার মাধ্যমে কেনাবেচা শুরু করে। সেই সংস্থাটিকে এশিয়াতে ডাসল্টের সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে এটি গুপ্তা পরিবারের দ্বারা পরিচালিত হয়। বর্তমানে যারা দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তথ্য অনুযায়ী সুশেন গুপ্ত বলেছেন তিনি ডাসল্টের একজন কর্মকর্তারকাছে টাকা পাঠিয়েছেন। ২০১২ সালে সেই মধ্যস্থতাকারী লিখেছেন, ঝুঁকি নেওয়া হয়েছে। আপানার কাছে একজন এজেন্ট আছেয যাকে আমরা অর্থ প্রদান করেছি। এখনও নিশ্চিত করুণ এটি আইনসংগত কাড। তিনি আরও বলেছেন এখন তারা যদি টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে সেই লোকেরা তাদের জেলে পুরবে।
সিবিআই ও এনফোর্স ডিরেক্টরেটের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের রাফাল চুক্তির সময় সুশেন গুপ্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছ থেকে একটি গোপনীয় নথি সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। যেখানে ভারতীয় আলোচকদের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। যদিও ডাসল্টের এই নথিগুলি সম্পর্কে আলোচনা করতে রাজি হয়নি ডাসল্ট।