সংক্ষিপ্ত

  • কলকাতার পর এবার মুম্বইতে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব
  • সকাল থেকে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে চলছে বৃষ্টি
  • আরব সাগরে ৬ ফুট লম্বা ঢেউ ওঠার আশঙ্কা
  • উপকূল অঞ্চলে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা


ঘূর্ণিঝড় আমফান লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গিয়েছিল শহর কলকাতাকে। চারদিকে ছিল ধ্বংসের ছবি। কোথাও রাজপথে গোড়া উল্টে পড়ে রয়েছে গাছ, আবার কোথাও গাড়ির উপর মুখ থুবড়ে পড়েছে মহীরূহ। তবে আমফানের  ধ্বসংলীল মারাত্নমক হলেও তিলোত্তমা কিন্তু আগেও বহু ঝড়ের স্বাক্ষী থেকেছে। কিন্তু মুম্বইবাসীর কাছে এই অভিজ্ঞতা একেবারেই বিরল। দেশের পশ্চিম উপকূলে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ। আজ দুপুরের মধ্যেই মুম্বইয়ের সন্নিকটস্থ আলিবাগে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার কথা এই মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের। যার প্রভাব পড়বে দেশের বাণিজ্য রাজধানীর উপরেও। যার মায়া নগরীর জন্য বিরল ঘটনাই হতে চলেছে বলা যায়।

 

 

প্রায় ১৩৮ বছর কোনো ঘূর্ণিঝড় হয়নি মুম্বইতে।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূলে রয়েছে একাধিক ভৌগোলিক কারণ। এমনিতেই আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় কম তৈরি হয়, আবার তৈরি হলেও ভৌগোলিক অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক কারণে তা মুম্বইয়ে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না।

আরও পড়ুন: মুম্বইয়ের আরও কাছে নিসর্গ, শুরু হয়ে গিয়েছে ঝড়-বৃষ্টি, কিছুক্ষণের মধ্যেই আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়টি

আরও পড়ুন: দেশে আক্রান্তের সংখ্যা এবার ২ লক্ষ ছাড়িয়ে গেল, মৃতদের ৫০ শতাংশই ষাটোর্দ্ধ

তাই আরব সাগরের উপকূলে গড়ে ওঠা মুম্বই শেষ ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় দেখেছিল ১৮৮২ সালে। এখনকার মতো সেই সময় ঘূর্ণিঝড়ের আলাদা করে নামকরণ করা হত না। মূলত যেখানে উপকূলে আছড়ে পড়ত, সেই জায়গার নামানুসারেই নাম হত। তাই সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘বম্বে সাইক্লোন’। বম্বে সাইক্লোনে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় এক লক্ষ মানুষের। তার আগে ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড বুকে মায়ানগরীতে সাইক্লোনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।

 

 

তবে ২০০৯ সালে একটি ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডব দেখিয়েছিল মহারাষ্ট্রের কিছু জায়গায়। তবে সেই ঘূর্ণিঝড় ফিয়ানের শক্তি খুব একটা বেশি ছিল না। ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় বায়ু গুজরাত উপকূলে হানা দেয়। তাতেও অবশ্য মহারাষ্ট্রের তেমন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। এমনিতেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ভয়াবহ অবস্থা মুম্বইয়ের। করোনা সংক্রমণে দেশে এক নম্বরে রয়েছে মহারাষ্ট্র। মহারাষ্ট্রের মধ্যেও আবার ভয়াবহ পরিস্থিতি মুম্বই ও মুম্বই শহরতলির।এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে বিপদ আরও বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আমপানের পর যেমন পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল, তেমনটা হতে পারে মুম্বই তথা মহারাষ্ট্রেও। তাই হাসপাতালগুলিতে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মুম্বইতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।  আশঙ্কা করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মুম্বই উপকূলে ৬ ফুট লম্বা ঢেউ উঠতে পারে। সেই কারণে মানুষ যাতে সমুদ্রের পারে না যায় তার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। 

 

 

মুম্বইতে ইতিমধ্যে এনডিআরএফ-এর ৮টি দল পৌঁছে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪৫ হাজার মানুষকে মুম্বইয়ের নীচু অঞ্চলগুলি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিসর্গের কারণে ইতিমধ্যে মুম্বই টার্মিনাল থেকে ৫ ট্রেনের যাত্রা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মুম্বই থেকে ১৭টি বিমান বাতিল করেছে ইন্ডিগো। এই পরিস্থিতিতে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দিকে বাড়তি জোড় দেওয়া হচ্ছে।  যাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, জলের পাম্প সবই খতিয়ে দেখা হয়েছে ৷ প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে বিমানবন্দরে জল যাতে না জমে যায়, তার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে ৷ আমফান পরবর্তী কলকাতা বিমানবন্দরের পরিস্থিতি দেখে শিক্ষা নিয়ে বিমানবন্দরে যে ছোট বা হালকা বিমানগুলি রাখা হয়েছে, সেগুলিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷