দিল্লি বিস্ফোরণের পর তদন্তে বড় তথ্য ফাঁস হয়েছে। ধৃত জঙ্গিরা জানিয়েছে যে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা এবং বারাণসী তাদের নিশানায় ছিল। জঙ্গিরা হাসপাতাল এবং ভিড়যুক্ত এলাকায় বিস্ফোরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

দিল্লিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর তদন্তকারী সংস্থাগুলো এখন চমকপ্রদ তথ্য পাচ্ছে। ধৃত জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যে এই মডিউলের নেটওয়ার্ক শুধু দিল্লি নয়, উত্তরপ্রদেশের ধর্মীয় স্থান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ইন্ডিয়া টিভির রিপোর্ট অনুযায়ী সূত্র মারফত জানা গেছে, জঙ্গিদের পরবর্তী নিশানা ছিল অযোধ্যা এবং বারাণসী, যেখানে তারা বড় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেশে আতঙ্ক ছড়াতে চেয়েছিল। এরই সঙ্গে জানা গিয়েছে দিওয়ালিতেই দিল্লি কাঁপিয়ে দেওয়ার ছক ছিল 'হোয়াইট কলার টেররিস্ট মডিউল'-এর। আলোর উৎসবে গোটা ভারতকে কাঁপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ছিল জঙ্গিদের। সেই উদ্দেশ্যে লালকেল্লায় বারবার রেকিও করা হয়েছিল। আল ফালাহ মেডিক্যাল থেকে ধৃত চিকিৎসক মুজাম্মিলকে জেরা করেই মিলেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য, দাবি এনডিটিভি-র প্রকাশিত রিপোর্টে।

এখানেই শেষ নয়, লালকেল্লা বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়িতে থাকা চিকিৎসক উমর উন নবি এবং ডাঃ মুজাম্মিল শাকিল একাধিক বার লালকেল্লায় গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই দিল্লি এসে লালকেল্লা ও লালকেল্লা সংলগ্ন অঞ্চলে বার বার ঢুঁ মেরেছে সন্দেহভাজন মুজাম্মিল, সেই তথ্য মিলেছে তাঁর ফোনের কল ডিটেলস ও লোকেশন থেকেই।

অযোধ্যাতে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল!

তদন্তে জানা গেছে যে ধৃত জঙ্গি শাহীন অযোধ্যায় একটি স্লিপার মডিউল সক্রিয় করে রেখেছিল। জঙ্গিরা সেখানে বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই পুলিশ বড় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এই মডিউল পুরোপুরি সক্রিয় হওয়ার আগেই, দিল্লি বিস্ফোরণের পর শুরু হওয়া অভিযানে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন ধরা পড়ে এবং জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

দিল্লিতে তাড়াহুড়ো করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়

তদন্তকারী সংস্থাগুলির সূত্র বলছে, ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় ৭টায় দিল্লিতে হওয়া বিস্ফোরণটি সম্ভবত তাড়াহুড়ো করে ঘটানো হয়েছিল। বিস্ফোরকে কোনও টাইমার বা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি। আধিকারিকদের মতে, লাল কেল্লার কাছে বিস্ফোরণ ঘটানোর মূল পরিকল্পনা ছিল না, বরং এই কাজটি তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছিল।

হাসপাতাল ও ভিড়ের জায়গা ছিল হিট লিস্টে

জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও একটি বড় তথ্য সামনে এসেছে। এই মডিউলের উদ্দেশ্য শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, হাসপাতাল এবং ভিড়যুক্ত এলাকাকেও টার্গেট করা ছিল। তদন্তে জানা গেছে, জঙ্গিরা চেয়েছিল যাতে দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য যতটা সম্ভব বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

দিল্লি বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু, ২০ জন আহত

১০ নভেম্বর দিল্লির লাল কেল্লার কাছে একটি গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং ২০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের কবলে পড়ে বেশ কয়েকটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং জম্মু-কাশ্মীরে এনআইএ এবং দিল্লি পুলিশের দল তল্লাশি অভিযানে নেমেছে।

তিন সন্দেহভাজন ডাক্তারের নাম সামনে এসেছে

এই ঘটনায় তিনজন প্রধান সন্দেহভাজনের পরিচয় পাওয়া গেছে -

  • ডঃ মুজাম্মিল,
  • ডঃ আদিল আহমেদ দার,
  • ডঃ উমর।

তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে, ডঃ উমর বিস্ফোরণের সময়ই মারা গিয়েছিলেন, অন্যদিকে ডঃ মুজাম্মিল এবং ডঃ আদিল আহমেদ দারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, যা থেকে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক এবং ফান্ডিং সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

অযোধ্যা ও বারাণসীতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে

দিল্লি বিস্ফোরণের পর উত্তরপ্রদেশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অযোধ্যা, বারাণসী, লখনউ, প্রয়াগরাজ এবং গোরখপুরে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি শাহীন এবং তার সঙ্গীদের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত নেটওয়ার্ক খতিয়ে দেখছে।