সংক্ষিপ্ত
দিল্লিতে নির্ভয়াকাণ্ড এখনও মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। কিন্তু তারপরেও দেশের রাজধানীতে একের পর এক মহিলার উপর নারকীয় অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসছে।
জিমে আলাপ, সেখান থেকে বন্ধুত্ব। তারপর এক ক্লাবে নিয়ে গিয়ে জোর করে মদ খাইয়ে প্রায় সংজ্ঞাহীন করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ। সেই ঘটনার ভিডিও তুলে রেখে ব্ল্যাকমেল করে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক। হোটেলে ডেকে ভাইয়ের সঙ্গে মিলে গণধর্ষণ। এরপর ক্রমাগত ভয় দেখানো, প্রভাব খাটিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার চেষ্টা। দিল্লির এক যুবকের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ এনেছেন এক মহিলা। এই ঘটনা ঘটেছে দিল্লির বসন্ত কুঞ্জ দক্ষিণ থানা এলাকায়। সম্মানহানি এবং পরিবারের সবার কথা ভেবে এই মহিলা আতঙ্কে। তবে তিনি বলছেন, ‘আমার বিচার চাই। আমি ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসব না।’
ঠিক কী হয়েছিল?
এই মহিলার আইনজীবী প্রকাশ কাশ্যপ জানিয়েছেন, 'আমার মক্কেল বিবাহিত। জিমে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। সেই আলাপ বন্ধুত্বে পরিণত হয়। একদিন ওই যুবক আমার মক্কেলকে নিয়ে গুরগাঁওয়ের এক ক্লাবে যায়। সেখানে আমার মক্কেলকে জোর করে অনেকটা মদ খাওয়ায় এই যুবক। আমার মক্কেলের পক্ষে একা বাড়িতে ফেরা সম্ভব ছিল না। তিনি ওই যুবককে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করে। ওই যুবক তখন নিজের বাড়িতে আমার মক্কেলকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। সে এই ঘটনার ভিডিও তুলে রেখে সে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে। আমার মক্কেল কাউকে এই ঘটনার কথা জানাননি। ব্ল্যাকমেলের ফলে তিনি ভয় পেয়ে গিয়ে একাধিকবার ওই যুবকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এর ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। তিনি ওই যুবকের দাবি মতো টাকা দিতেও বাধ্য হন। এরই মধ্যে ওই যুবক একদিন আমার মক্কেলকে এক হোটেলে ডাকে। সেখানে তাঁকে এক ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে ওই যুবকের ভাই ছিল। দুই ভাই মিলে ধর্ষণ করে।'
থানা-হাসপাতালে হেনস্থার অভিযোগ
নির্যাতিতা জানিয়েছেন, 'আমি পরিবারের কথা ভেবে প্রথমে চুপ করে যাই। কিন্তু যখন ওই যুবক ওর ভাইয়ের সঙ্গে মিলে আমাকে ধর্ষণ করে, তখন আর চুপ করে থাকতে পারিনি। থানায় যখন অভিযোগ করতে যাই, তখন প্রথমে আমার অভিযোগ নেওয়া হয়নি। এরপর আইনজীবীকে নিয়ে ডিসিপি সুরেন্দর চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করি। তিনি বলার পর অভিযোগ নেয় থানা। মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। কিন্তু তারপর আদালতে শুনানি হয়নি। আর পদক্ষেপ নিচ্ছে না পুুলিশ। আমাকে ধর্ষণ করা দ্বিতীয় ব্যক্তিকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। সফদরজঙ্গ হাসপাতালে আমাকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সেখানেও আমাকে ৫-৬ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। চিকিৎসকের উপর নিশ্চয়ই চাপ তৈরি করা হয়েছে। তিনি ঠিকমতো শারীরিক পরীক্ষা করেননি। আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। গভীর রাতে ফোন করে বাড়ির বাইরে যেতে বলা হচ্ছে। আমার স্বামী কিছু জানে না। ওর কাছে ধর্ষণের ভিডিও পাঠিয়ে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছে ধর্ষণকারীর আত্মীয়রা।'
বিভিন্ন মহল থেকে চাপের অভিযোগ
আইনজীবীর অভিযোগ, 'প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভের অফিস থেকে পুলিশের উপর এই মামলা ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাক্তন সলিসিটর জেনারলের কোনও এক সহকারীর আত্মীয়। উত্তরপ্রদেশের মিসরিখের সাংসদ অশোক কুমার রাওয়াত আমার মক্কেলকে ফোন করে ভয় দেখাচ্ছেন। প্রভাব খাটিয়ে তদন্তকারী আধিকারিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।' এ বিষয়ে বসন্ত কুঞ্জ দক্ষিণ থানার পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্মী জানিয়েছেন, বিভিন্ন মহল থেকে তাঁদের উপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন-
বন্ধুকে দিয়ে ঘুমন্ত স্ত্রীকে ধর্ষণ! ভিডিও করল স্বামী, ফাঁক করার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল
৭৫ বছরের ঠাকুমাকে ধর্ষণ করতে পারল নাতি? এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী উত্তর প্রদেশ
চাকরির লোভ দেখিয়ে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধর্ষণ, নির্যাতিতা ১৩ বছরের কিশোরী