সংক্ষিপ্ত
- পর্যটকদের পায়ে বেড়ি পরিয়েছে করোনা
- সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে আসছে সেই চিত্র
- ২০ শতাংশেরও কম মানুষ এবার ঘুরতে যাবেন
- আসন্ন উৎসবের মরশুমেও ভ্রমণে ভাটা
বাঙালির পায়ে নাকি রয়েছে সর্ষে। সুযোগ পেলেই ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি কাঁধে রুকস্যাক আর গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়তে ভালবাসে। কিন্তু মারণ ভাইরাস করোনা বাঙালির সেই প্রিয় শখের উপরেই ফেলে দিয়েছে ফুলস্টপ। তাই মাসখানেক পর যখন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো, তখন এবার বেশ নিস্পৃহ ভ্রমণপিপাসুদের দল। অন্যবার অক্টোবর–নভেম্বরের ছুটির জন্য এখন থেকেই ম্যাপ দেখা, টিকিট কাটা, টুকটাক শপিং এবং সঙ্গী বেছে নেওয়া গোটা প্রক্রিয়া জোরকদমে চলতে থাকে। কিন্তু এবার বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির আবহে সেই গোটা প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়েছে।
এদেশে অক্টোবর, নভেম্বর মাসে আবহাওয়া থাকে মনোরম। ঘুরতে যাওয়ার পক্ষে একেবারে আদর্শ। তারমধ্যে এইসময়ে দুর্গাপুজো, দশেরা, দীপাবলি, ছটপুজো একের পর এক উৎসব লেগে রয়েছে। ফলে ছুটিও যেমন থাকে তেমনি উৎসবের রঙে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে গোটা ভারত। আর এই সময়ই অধিকাংশ ভ্রমণ পিপাসু মানুষই নিজের ট্রাভেল ডায়েরি বানিয়ে ফেলেন। কিন্তু করোনা আবহে এবার সেই পর্যটন শিল্পেই চরম অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভ্রমণ পিপালুদের মাত্র ২০ শতাংশেরও কম মানুষ এবছর বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
আনলক ভারত ধীরে ধীরে ফিরছে স্বাভাবিক জীবনে। একে একে খুলছে পর্যটনস্থলও। কিন্তু আশঙ্কা বাড়িয়ে দেশে বাড়ছে সংক্রমণও। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই তাই ইচ্ছে থাকলেও এবছরের ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করছেন। অনেকে আবার ভ্যাকসিন পরবর্তী সময়ে কীভাবে ঘুরতে যাবেন তার পরিকল্পনা কষা শুরু করে দিয়েছেন এখনি। তবেএদের মধ্যেও অনেকে সাহসী মানুষই মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে এবছরে ঘুরতে বেরনোর ভাবনাচিন্তাও করছেন। যাঁরা ভাবছেন, ঘর থেকে বেরিয়ে একটু মুক্ত হাওয়ার দরকার তাঁরাও অবশ্য অপেক্ষা করে রয়েছেন। দূরে ঘুরতে যাওয়ার টিকিট এখনই কাটছেন না কেউই। পাছে করোনার কারণেদেশ জুড়ে ফের লকডাউন শুরু হলে মাঠেই মারা যাবে পরিকল্পনা এই ভয়েও কাজ করছে অনেকের।
ভ্রমণ পিপাসুরা কী ভাবছেন, আগামী দিনে পর্যটন শিল্পের হালত কী দাঁড়াবে তা জানতেই লোকাল সার্কলসের উদ্যোগে একটি সমীক্ষার আয়োজন করা হয় । অনলাইনে করা এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন দেশের ২৩৯ টি জেলার ২৫ হাজার মানুষ। তাতে দেশবাসী যা মতামত দিচ্ছে, তাতে পর্যটন শিল্পর কপালের ভাজ আরও চওড়া হতে বাধ্য। এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ কারীদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই পুরুষ, বাকি ৩৪ শতাংশ ছিলেন মহিলা। সমীক্ষায় মেট্রো শহরের বাসিন্দা যেমন ৬১ শতাংশ ছিলেন তেমনি ২৮ শতাংশ টায়ার-২ শহেরর বাসিন্দা। বাকিরা ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলের।
এই সমীক্ষায় ১৯ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, মহামির কালেই তাঁরা বেড়াতে যাবেন। সেইমতো পরিকল্পনা শুরু করেছেন। তবে আগে থেকে টিকিট কাটার পক্ষপাতী নন অনেকেই। তাই ছুটিটা আরেকটু কাছাকাছি আসার পর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবার পরিকল্পনা করছেন অধিকাংশ পর্যটকই।
এদিকে ৬৯ শতাংশ দেশবাসী জানিয়েছেন, করোনা আবহে তাঁরা কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চান না। সেকরাণে এবছরটা বাড়িতেই কাটাবেন। অবশ্য সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৩ শতাংশ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পরিবার বা আত্মীয়সজনের বাড়িতে সময় কাটিয়ে আসবেন।
কীরকম বেড়ানোর কথা ভাবছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে কেবল ৩ শতাংশ মানুষের বক্তব্য, কোনও পর্যটন কেন্দ্রেই বেড়াতে যাবেন। ৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা পর্যটন কেন্দ্র ও আত্মীয়সজনের বাড়ি দুটো অপশনই খোলা রাখছেন। যদিও ১২ শতাংশের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়, তাঁরা কী করবেন। কোনও অপশনের কথাই তাঁরা ভেবে ওঠেননি।
তবে উৎসবের মরশুমে যারা বাড়ি থেকে দূরে থাকেন অথবা লকডাউনের সময়ে বাড়ি আসতে পারেননি তারা আনেকেই বাড়ি ফেরার কথা ভাবছেন। এঁদের মধ্যে ২৩ শতাংশ মানুষ বিমান যাত্রাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এদিকে ৩৮ শতাংশ মানুষ নিজস্ব গাড়ি এবং ট্যাক্সিকে ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়েছেন।