সংক্ষিপ্ত
রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা নিয়ে ইতিমধ্যেই ভারতের উপরে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে ইউরোপ। এই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ইউরোপের স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলো বিশেষ করে ভারতকে সুযোগ পেলে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। এহেন পরিস্থিতিতে এবার ইউরোপকে কড়া বার্তা দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
স্লোভাকিয়ায় গ্লোবসেক ২০২২-এর আলোচনায় বৃহস্পতিবার কড়া ভাষায় ইউরোপকে বার্তা দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এই আলোচনাচক্রের মঞ্চে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেখানে জয়শঙ্কর স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, ইউরোপকে সবার আগে বুঝতে শিখতে হবে যে তাদের সমস্যা মানেই বিশ্বের সমস্যা, আর বিশ্বের সমস্যা তাদের সমস্যা নয়। এই ধরনের অবস্থান যদি ইউরোপ বারবার করার চেষ্টা করে তাহলে কূটনৈতিক স্তরে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবেই। এই ধরনের মানসিকতা থেকে সবার আগে ইউরোপকে বেরিয়ে আসতে হবে। এমনকী রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে যেভাবে ভারত-চিন-এর সীমান্ত সমস্যাকেও সংযোগ করা হচ্ছে তার কড়া সমালোচনা করেন জয়শঙ্কর। তিনি পরিস্কার জানান, ভারত-চিনের মধ্যে যে ঘটনা ঘটছে তা অনেক পুরনো এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই ঘটছে। এই ভাবে কোনও দেশের সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনায় খুব একটা বুদ্ধিদীপ্ত নয় বলেও মন্তব্য করেন জয়শঙ্কর।
এই আলোচনার মঞ্চে জয়শঙ্করকে এমন প্রশ্নও করা হয় যে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোটে কি ভারত রয়েছে না চিনের নেতৃত্বে আর একটি জোট রয়েছে তাতে ভারত সামিল হবে। এমন প্রশ্নের উত্তরেও সটানে জয়শঙ্কর জানান যে, ভারত এই ধরনের সামরিক শক্তিতে বলিয়ান রাষ্ট্রজোটে বিশ্বাস করে না। ভারত সব সময় বিশ্ব শান্তির পক্ষে সওয়াল করেছে। আর যে রাষ্ট্রজোট আন্তর্জাতিকস্তরে মূল্যবোধ এবং একে অপরের স্বার্থকে সুরক্ষিত করার পক্ষে সওয়াল করে ভারত তেমন কোনও জোটেই বিশ্বাসী।
সেই সঙ্গে জয়শঙ্কর এও উল্লেখ করেন যে চিনের সঙ্গে সমস্যার সমাধানে ভারত নিজে থেকেই সমর্থ। এর জন্য তৃতীয় কোনও পক্ষের মধ্যস্থতার দরকার নেই। বরং ভারত যদি তার আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অবস্থানে বিশ্বের সমর্থন ও সহানুভূতি পায় তাহলে তা স্বাগত। কিন্তু, এমন কোনও মতামতকে ভারত সমর্থন করে না বা বিশ্বাস করে না যেখানে একজন বলছে আমি একজনের জন্য সমস্যায় রয়েছি, তাই তুমি ওর সঙ্গে আর সম্পর্ক রেখ না, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক স্তরে এই ধরনের ভাবনা ঠিক কার্যকরি নয়। এমন মন্তব্যও করেছেন জয়শঙ্কর।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়েও জয়শঙ্কর বলেন যে এখানে ভারত কোনও পক্ষেই নেই। ভারতের বৈদিশিক নীতি শুধুমাত্র সীমান্ত দিয়ে নির্ধারিত হয় না। এর মানেই এই নয় যে ভারতের বৈদেশিক নীতি অন্যদেশ সমর্থন করে না বলেই যে সেখানে সীমানার প্রাচীর তুলে দিতে হবে এমন কোনও বিষয় নেই। আপনার সঙ্গে আমার মতের মিল হচ্ছে না বলেই আমি প্রাচীর তুলে দেব এর জন্য আমি বসে নেই। আমাদের কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের যে আমরা মিলিত হয়ে কীভাবে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব, আমার কাছে সমস্যা জলবায়ুর পরিবর্তন--- এমন আরও অনেক বিষয় রয়েছে। যেগুলো নিয়ে বিশ্বকে চিন্তা করতে হবে।