সংক্ষিপ্ত
গাড়ির মধ্যে নাবালিকার ধর্ষণকাণ্ডে সামনে আসছে আরও তথ্য। আর সেই সঙ্গে এই ঘটনায় অভিযুক্ত নাবালকদের নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কেন নাবালক বলে অভিযুক্তদের ধরা হবে তাতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
মার্সিডিজ গাড়ির মধ্যে নিজের বন্ধুদের হাতেই ধর্ষিত এক নাবালিকা। আর এই ধর্ষণে অভিযুক্তদের সকলেই হয় কোনও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিবারের সদস্য অথবা কোনও উচ্চ বিত্তবান ব্যবসায়ীর পুত্র। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক এবং দেশজুড়ে ফের একটা সামাজিক অশান্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা খবর তাতে এই ঘটনায় এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া এই অভিযুক্তের বয়স ১৮ বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তেলেঙ্গানার পশ্চিম জোনের ডিসিপি জোয়েল ডেভিস জানিয়েছেন যে, ধর্ষণে অভিযুক্তদের মধ্যে ৩ জন নাবালক। ২ জন সাবালক। তবে, এই ঘটনায় তেলেঙ্গানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাতির কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে পুলিশ। যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর নাম সাদউদ্দিন মালিক, বয়স ১৮। বাকি যে চার অভিযুক্ত তাদের মধ্যে তিন জনের বয়স ১৬ থেকে ১৭-র মধ্যে। এই নাবালকদের মধ্যে একজন আবার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছেলে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে যে, অভিযোগকারিনী নাবালিকা প্রথমে বলেই নি যে ধর্ষণের ঘটনা একাধিক জন জড়িত ছিল। শুধুমাত্র একজন অভিযুক্তর নাম সে করেছিল। সেই অভিযুক্তকে জেরা করে জানা যায় যে মার্সিডিজ গাড়ির মধ্যে একাধিক জন মিলে নাবালিকা বান্ধবীকে ধর্ষণ করেছিল। এরপরই বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ মেলে। ঘটনাস্থলের কাছ থেকে সিসিটিভি ফুটেজও উদ্ধার করা হয়। যা খতিয়ে দেখা যায় যে সব অভিযুক্তই ওই নাবালিকার সঙ্গে ছিল। সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে নাবালিকার বয়ান মেলানো হয় এবং তাতে যথেষ্টই মিল পাওয়া গিয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ২৮ মে একটি পাবের সামনে অভিযুক্তদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে অভিযোগকারিনী। অভিযুক্তরা এই সময় ওই নাবালিকাকে বাড়ি ছেড়ে দেবে বলে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। বন্ধুদের কথায় বিশ্বাস করে হাঁটা লাগিয়েছিল মেয়েটি। সেই ছবিও সিসিটিভি-তে ধরা পড়েছে। জুবলি হিলসের একটি অভিজাত এলাকায় পার্কিংলটে দাঁড় করানো ছিল লাল রঙের মার্সিডিজ এসইউভি গাড়িটি। অভিযোগ, সেখানে গাড়িতে নাবালিকাতে তুলে নিয়ে একের পর একজন ধর্ষণ করে। এক একজন করে গাড়ির পিছনের সিটে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে বলে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে। গাড়ির ভিতরে যখন এমন ভয়াবহ এক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছিল, ঠিক তখন গাড়ির বাইরে রক্ষীর মতো পাহারা দিচ্ছিল বাকিরা। পুলিশি তদন্তে সেই কথাও উঠে এসেছে।
বাড়ি ফিরে গিয়েও নাবালিকা এই ঘটনায় প্রথমে মুখ খোলেনি। ধর্ষণের সময় ঘাড়ে আঘাত পেয়েছিল নাবালিকা। বাড়ি ফিরে সেই যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। বাবা-মা-কে নিছক যন্ত্রণার কথা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বাবা একপ্রকার জোর করেই মেয়ের ঘাড়ের যন্ত্রণা পরখ করতে শুরু করেন। আর সেই সময় তিনি মেয়ের ঘাড়ের কাছে এমন কিছু আঁচড়ের চিহ্ন দেখতে পান তাতে তাঁর মনে সন্দেহ জাগে। মেয়েকে চেপে ধরতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে সে এবং তার সঙ্গে ঘটা ঘটনা বাবা-মা-কে বলে দেয়। এরপরই বাবা থানায় যান মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে। বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে পুলিশ শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু নাবালিকা পুলিশ জেরা করা শুরু করতেই তারা টের পান যে এই ঘটনাকে তাঁরা যতটা হালকা ভাবছিলেন তার থেকেও বেশি ভারি এবং অত্যন্ত স্পর্শকাতর। নাবালিকা যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে তা পুলিশ ঘটনা ক্রম সাজাতে সাজাতে বুঝে যায়। যার জন্য পরে এই ঘটনায় গণধর্ষণের মামলা রুজু করে পুলিশ।
তেলেঙ্গানার তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী কেটি রামারাও সেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ মেহমুদ আলি, ডিজিপি এবং হায়দরাবাদ সিটি পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করেছেন যাতে এই ঘটনায় অভিযুক্তদের কড়া থেকে কড়া শাস্তির বন্দোবস্ত হয়। বিচারে যেন অভিযুক্ত প্রভাবশালী পরিবারের কোনও পক্ষপাত যেন জড়িত না থাকে তাও দেখতে অনুরোধ করেছেন তিনি। এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির নেত্রী কে কবিতা। গোটা ঘটনাকে অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গণধর্ষণের শিকার নাবালিকার পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। তেলেঙ্গানা পুলিশ এই ঘটনার এক্কেবারে গভীরে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন। মহিলা নিরাপরত্তায় তেলেঙ্গানা সরকার জিরো টলারেন্স নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন কবিতা।
আরও পড়ুন-মার্সিডিজ গাড়িতে তুলে ১৭ কিশোরীরে একে একে ধর্ষণ করল পাঁচ কিশোর, হাইপ্রোফাইল গণধর্ষণের সাক্ষী হায়দরাবাদ
আরও পড়ুন- প্রলোভন দেখিয়ে নাবালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ
আরও পড়ুন- ঘুরতে নিয়ে গিয়ে ফাঁকা বাড়িতে প্রেমিকাকে লাগাতার ধর্ষণ, ধৃত যুবক