সংক্ষিপ্ত
- তাঁরা অশোক পারমার ও কুতুবুদ্দিন আনসারি
- গুজরাত দাঙ্গার দুই মুখ বলা যায় তাঁদের
- বর্তমানে অবশ্য দুজনে একযোগে শান্তিু সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছেন
- মহরমের দিন অশোকের জুতোর দোকান উদ্বোধন করলেন আনসারি
প্রথম ছবি - পিছনে জ্বলছে আগুন। আর তার সামনে কালো গেঞ্জি, হলুদ প্যান্ট আর মাথায় গেরুয়া ফেট্টি বাঁধা, একমুখ দাড়ি গোঁফ-ওয়ালা এক যুবক। হাতে উদ্যত লোহার রড। মুখে জান্তব উল্লাস।
দ্বিতীয় ছবি - দুই চোখ ভেসে যাচ্ছে জলে। কাঁদো কাঁদো মুখে দুই হাত জড়ো করে প্রাণবিক্ষা চাইছেন এক যুবক।
২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ উঠলে সকলেরই এই দুটি ছবি মাথায় আসে। প্রথমজন অশোক পারমার আর দ্বিতীয়জন কুতুবুদ্দিন আনসারি - সন্ত্রাস ও সন্ত্রস্ত - গুজরাত দাঙ্গার দুই মুখ বলা যেতে পারে তাঁদের। অথচ ঘটনার ১৭ বছর পর তাঁদের দুইজনের গলাতেই আজ একতার বাণী। হিংসা নয়, হিন্দু- মুসলমান দুই সম্প্রদায় মিলেমিশেই থাকুন, এটাই তাঁদের কামনা।
মঙ্গলবার মহরমে মাসের আশুরার দিনে আহমেদাবাদে অশোক পারমার তাঁর জুতোর দোকান খুললেন, নাম 'একতা চপ্পল শপ'। আর সেই দোকানই উদ্বোধন করতে এদিন তিনি আমন্ত্রণ জানান একসময়ের শত্রু, এখনকার ভালো বন্ধু আনসারিকে। আনসারি সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করেছেন। অশোকের দোকান উদ্বোধন করে তিনি একটি চটিও কেনেন।
অশোক জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে আয়োজিত একটি সেমিনারে তাঁদের দুজনকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে গিয়েই তাঁদের দুইজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এরপর কুতুবুদ্দিন আনসারি একটি বই লেখেন। সেই বই প্রকাশের জন্য আনসারি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অশোককে। এবার তিনি সেই সৌজন্য ফিরিয়ে দিলেন নিজের দোকানের উদ্বোধন আনসারির হাত দিয়ে করিয়ে।
গুজরাত দাঙ্গার সময়, গুজরাতের সন্ত্রস্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের মুখ হয়ে উঠেছিলেন কুতুবুদ্দিন। তারপর প্রাণভয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাম-শাসিত পশ্চিমবঙ্গে। দীর্ঘদিন সেকানে থাকার পর আবহাওয়া ঠান্ডা হলে ফিরেছিলেন বাড়িতে। তবে সেই দিনের জন্য অশোক পারমারদের প্রতি আর কোনও ক্ষোভ বা রাগ মনের মধ্যে পুষে রাখেননি আনসারি। সাফ জানিয়েছেন, অতীত আঁকড়ে বসে থাকলে জীবনে এগোনো যাবে না।
বর্তমানে শুধু গুজরাত নয়, ভারত জুড়েই সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ বা়ড়ছে। এই অবস্থায় দাঙ্গার দুই মুখই এখন একযোগে শান্তি-সম্প্রীতির বার্তাই দিতে চান। অশোক পারমার জানিয়েছেন আহমেদাবাদ এখন আর আগের আহমেদাবাদ নেই। বর্তমানে এই শহরে হিন্দু মুসলমান একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করেন। এই একতার শক্তিকে তুলে ধরতেই তিনি দোকানের নাম 'একতা চপ্পল শপ' রেখেছেন। আর কুতুবুদ্দিনের বক্তব্য, ধর্ম, জাতি, ভাষা সব ভুলে সমাজের প্রত্যেকের প্রত্যেকের কথা ভাবা উটিত। এটাই ভারতের আসল পরিচয়।