সংক্ষিপ্ত

মুঘলরাই আঠারোশ শতকে রাখি উৎসব চালু করেছিল

'বিশিষ্ট ঐতিহাসিক' এই কথা লিখেছেন বলে দাবি সোশ্য়াল মিডিয়ায়

হেনস্থা করা হচ্ছে দিল্লির ওই ঐতিহাসিক রানা সাফভি-কে

সত্যিই কি এমন দাবি করেছেন ওই বিশিষ্ট ঐতিহাসিক

মুঘলরাই আঠারোশ শতকে রাখি উৎসব চালু করেছিল। এক 'বিশিষ্ট ঐতিহাসিক' এই কথা ঘোষণা করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে সোশ্য়াল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে। সঙ্গে দিল্লির ওই ঐতিহাসিক রানা সাফভি-র উপর প্রকাশিত একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রের নিবন্ধ তুলে ধরে, তাঁর বিরুদ্ধে 'নির্লজ্জ মিথ্যাচার'-এর অভিযোগ করা হচ্ছে। রাখি অবশ্যই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি উৎসব। তাকে কি সত্যিই মুঘলদের চালু করা উৎসব বলে দাবি করেছেন ওই বিশিষ্ট ঐতিহাসিক?

ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে যে সংবাদ নিবন্ধের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তার সূত্র ধরে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে বিপরীত তথ্যানুসন্ধান চালিয়েছিল এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। আর তাতেই জানা গিয়েছে এই চাঞ্চল্যকর দাবি ও ভাইরাল ওই পোস্টের পিছনে লুকিয়ে থাকা আসল সত্য। জানা গিয়েছে, রানা সাফভি-কে এমন একটি ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে, যা তিনি করেননি। তবে ভুল একটা হয়েছিল। তা ওই নিবন্ধের প্রকাশকদের তরফে।

নিবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। শিরোনাম ছিল, 'মুঘলরা কীভাবে দিল্লিতে রক্ষা বন্ধন-এর জন্ম দিয়েছিল'। এই নিবন্ধে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর সম্পর্কে একটি কাহিনি বলা হয়েছিল। ১৭৫৯ সালে উজির গাজি উদ্দিন খান ফিরোজ জং তাঁকে হত্যা করেছিলেন। আর এই ঘটনার মধ্য দিয়েই মুঘলরা রাখি উৎসব-কে তাঁদের রাজ সংস্কৃতিতে গ্রহণ করেছিল বলে দাবি করেছেন সাফভি।

বলা হয়েছে, দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় জামে মসজিদে ডেকে এনে বাদশা-কে হত্যা করেছিলেন ওই উজির। তারপর তাঁর দেহটি ভাসিয়ে দিয়েছিল পার্শ্ববর্তী এক নদীতে। পরদিন সম্রাটের দেহ নদীর তীর থেকে উদ্ধার করেছিলেন এক হিন্দু মহিলা । বাদশার পরিবার থেকেলোকলস্কর এসে তাঁকে হুমায়ূনের সমাধিতে সমাধিস্থ করা করার আগে পর্যন্ত সেই দেহ আগলে বসেছিলেন  ওই হিন্দু মহিলা। এরপরই তাঁকে বোন ঘোষণা করেছিলেন দ্বিতীয় আলমগিরের উত্তরসূরি। আর মুঘলদের মধ্যে শুরু হয়েছিল রক্ষা বন্ধন উত্সব বা সালোনা। হিন্দু মহিলারা মুঘল দরবারে এসে বাদশার হাতে রাখি বাঁধতেন, বিনিময়ে বাদশা তাঁদের দিতেন উপহার।

এই কাহিনি প্রথম ১৮৮৫ সালে মুঘল দরবারি ঐতিহাসিক মুন্সি ফয়জউদ্দিন বজম-এ-আখির নামে বইতে প্রকাশ করেছিলেন। রানা সাফভি ওই বইটিরই ইংলাজি অনুবাদ করেছিলেন ২০১৮ সালে। সেই অনুবাদকে কেন্দ্র করেই ওই বিতর্কিত নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল। অর্থাৎ নিবন্ধে কোথাও বলা নেই মুঘলরা রাখি চালু করেছিল। কিন্তু, সমস্যা রয়েছে নিবন্ধের হাইলাইটস অংশে। সেখানে রানা সাফভি-র উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, 'অনেকেই জানেন না যে রক্ষা বন্ধন আসলে মুঘলদের উত্সব যা দিল্লিতে শুরু হয়েছিল'।

নিবন্ধের সঙ্গে হাইলাইটস অংশ না মেলায় আরও সন্দান চালায় এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। আর তাতে দেখা যায়, নিবন্ধটি প্রকাশের পরই ওই হাইলাইটস অংশে ভুল লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন স্বয়ং রানা সাফভি, অর্থাৎ ভাইরাল পোস্টটিতে যে 'বিশিষ্ট ঐতিহাসিক'কে অভিযুক্ত করা হচ্ছে নির্লজ্জ মিথ্যাকথনের দায়ে। পরে ওই সর্বভারতীয় পত্রিকার তরফে ভুলটি স্বীকার করে নিবন্ধটির একটি সংশোধিত সংস্করণও প্রকাশ করেছিল। সেখানে নিবন্ধটির শিরোনাম বদলে করা হয়, 'মুঘল দরবার কীভাবে রক্ষা বন্ধনকে গ্রহণ করেছিল' আর হাইলাইটস অংশটি বদলে লেখা হয়েছিল 'দ্বিতীয় শাহ আলম একজন হিন্দু মহিলাকে সম্মান জানাতে সালোনা (রক্ষা বন্ধন) উদযাপন শুরু করেছিলেন'। (কপিরাইট সমস্য়ার জন্য সেই নিবন্ধের ছবি প্রকাশ করা গেল না)

অর্থাৎ, ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে যে দাবি করা হচ্ছে তা একেবারেই ভুল। ঐতিহাসিক রানা সাফভি, কখনই দাবি করেননি যে রাখি উৎসব মুঘলরাই চালু করেছিলেন। সংশোধিত নিবন্ধ প্রকাশের পরও এই ধরণের ভুয়ো পোস্টের মাধ্যমে ওই ঐতিহাসিক-কে কলঙ্কিত করা হচ্ছে।