সংক্ষিপ্ত

এড-টেক সংস্থার (Ed-tech Companies) অনলাইনে কোর্স নিয়ে সতর্ক করল কেন্দ্রীয় সরকার। জালিয়াতির ফাঁদে না পড়তে চাইলে কী করবেন, আর কী করবেন না - কী জানালো সরকার? 
 

বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার। বিশেষ করে গত দুই বছর ধরে করোনাভাইরাস মহমারি (Coronavirus Pandemic) চলছে। এই সময়ে, বহু এড-টেক সংস্থাই (Ed-tech Companies) অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স, টিউটোরিয়াল, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য কোচিং, ইত্যাদি অফার করছে। তবে, তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকছে বিপদও, যা আখেরে আর্থিক দিক থেকে পথে বসাতে পারে শিক্ষার্থীদের পরিবারদের। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য একটি উপদেশাবলী প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই উপদেশাবলীর মধ্যেই অনলাইন শিক্ষা পরিষেবা নিতে গেলে কী কী করনীয়, আর কী কী করা উচিত নয়, তা জানিয়েছে সরকার।

কেন্ত্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের (Union Education Ministry) পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক এড-টেক সংস্থাই এখন বিনামূল্যের কিছু পরিষেবা অফার করছে। এই বিনামূল্যে শিক্ষা লাভের ফাঁদের মধ্যে অনেক সময়ই বিপদ লুকিয়ে থাকে, বলে সতর্ক করেছে সরকার। তারা জানিয়েছে. স্কুল শিক্ষা ও সাক্ষরতা বিভাগ দেখেছে, কিছু এড-টেক কোম্পানি বিনামূল্যে অফার করার আড়ালে অভিভাবকদের প্রলুব্ধ করছে। তারা অভিভাবকদের অগোচরে তাদের দিয়ে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটি (EFT) ম্যান্ডেট স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছে বা অটো-ডেবিট ফিচার (Auto-Debit Feature) সক্রিয় করিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে, প্রাথমিকভবে ওই পরিষেবা বিনামূল্যে দেওয়া হলেও, কয়েকদিন পর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলিকে নিশানা করছে এই অসত সংস্থাগুলি। 

এই অবস্থায় অনলাইন শিক্ষা পরিষেবা পেতে গেলে, কী কী করণীয় বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রক? 

সরকার বলেছে, সাবস্ক্রিপশন ফি প্রদানের জন্য অটোমেটিক ডেবিট অপশন এড়িয়ে চলতে। কারণ, কিছু কিছু এড-টেক সংস্থা 'ফ্রি-প্রিমিয়াম ব্যবসা মডেল' অফার করে। অর্থাত, তাদের অনেক পরিষেবা প্রথম নজরে বিনামূল্যের বলে মনে হলেও, পরবর্তী কালে আরও শিক্ষার বিষয় পেতে গেলে টাকা দিতে হয়। অটোমেটিক ডেবিট অপশন চালু থাকলে, অনেক সময়ই শিক্ষার্থীরা না বুঝেই টাকা দিয়ে পাওয়া যায় এমন পরিষেবা খুলে ফেলতে পারে। অ্যাক্সেস করতে পারে না বুঝতে পারে যে সে আর এড-টেক কোম্পানির দ্বারা প্রদত্ত বিনামূল্যে পরিষেবাগুলি অ্যাক্সেস করছে না।

এর সঙ্গে সঙ্গে লার্নিং সফ্টওয়্যার বা ডিভাইসের গ্রহণযোগ্যতা স্বীকার করার আগে শর্তাবলী ভাল করে পড়ে নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নাহলে, আইপি অ্যাড্রেস বা কারোর ব্যক্তিগত তথ্যও ট্র্যাক করা হতে পারে। কনটেন্ট, অ্যাপ বা পেনড্রাইভ-এর মতো শিক্ষাগত ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে ট্যাক্স ইনভয়েস স্টেটমেন্ট নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোনও এড-টেক সংস্থার সদস্য পদ নেওয়ারা আগে সেই সংস্থার বিস্তারিত ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে, কনটেন্ট কেনার আগে সিলেবাসের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। টাকা দেওয়ার আগে কনটেন্ট নিয়ে সমস্ত সন্দেহ বা প্রশ্নের নিরসন করতে হবে। ডিভাইসে বা অ্যাপে বা ব্রাউজারে পেরেন্টাল কন্ট্রোল বা অভিভাবকীয় নিয়ন্ত্রণ সক্রিয় করা উচিত। সেই ক্ষেত্রে অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ কা সম্ভব হয় এবং অ্যাপ কেনাকাটাতে ব্যয় কমে। শিক্ষা অ্যাপের কিছু বৈশিষ্ট্য যে বেশি খরচ করাতে উৎসাহিত করে, তা সন্তানকে বোঝাতে হবে।

এবার আসা যাক কী কী না করতে বলা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে - 

এড-টেক কোম্পানির বিজ্ঞাপনে অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না। অজ্ঞাত কোনো ঋণের জন্য সাইন আপ করবেন না। সত্যতা যাচাই না করে কোনো মোবাইল এড-টেক অ্যাপ ইনস্টল করবেন না। সাবস্ক্রিপশনের জন্য অ্যাপে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড নিবন্ধন না করাই ভালো। ইমেল, যোগাযোগের নম্বর, কার্ডের বিবরণ, ঠিকানা ইত্যাদির মতো তথ্য অনলাইনে দেবেন না। কোনো ব্যক্তিগত ভিডিও বা ছবি শেয়ার করবেন না। ভিডিও ফিচার চালু করা বা যাচাই করা হয়নি এমন প্ল্যাটফর্মে ভিডিও কল করবেন না। যাচাই না করে, কোনও কোর্সে সাবস্ক্রাইব করবেন না। এড-টেক কোম্পানিগুলি যে 'সাফল্যের গল্প' বলে, তা পরখ না করে বিশ্বাস করবেন না। 

এর সঙ্গে সঙ্গে পিতামাতার সম্মতি ছাড়া শিক্ষার্থীদের কেনাকাটার অনুমতি না দিতে বলেছে সরকার। অ্যাপ-মাধ্যমে কেনাকাটা এড়াতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) নির্দেশিকা অনুযায়ী ওটিপি (OTP) ভিত্তিক অর্থপ্রদানের পদ্ধতি গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ এবং ওটিপি নম্বর কোনও মার্কেটিং কর্মীর সঙ্গে শেয়ার না করতে বলা হয়েছে। এভাবে সাইবার জালিয়াতির শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অপরিচিত উত্স থেকে আসা কোনও লিঙ্ক বা কোনও পপ-আপ স্ক্রিনে ক্লিক না করার বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে।