সংক্ষিপ্ত
মুসলমানদের (Muslims) বিরুদ্ধে সরাসরি হিংসার প্রচার সঙ্গে হিন্দুরাষ্ট্র (Hindu Nation) গঠনের ডাক। উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) হরিদ্বারে (Haridwar) এক ধর্ম সংসদ থেকে হেট স্পিচ (Hate Speech) দেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লেও কোনও ব্যবস্থাই নিল না পুলিশ।
মুসলমানদের (Muslims) বিরুদ্ধে সরাসরি হিংসার প্রচার সঙ্গে একটি হিন্দুরাষ্ট্র (Hindu Nation) গঠনের জন্য লড়াইয়ের ডাক - উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) হরিদ্বারে (Haridwar) এক ধর্ম সংসদ বা ধর্মীয় সমাবেশের নামে এরকমই ভয়ঙ্কর ঘৃণা ভাষণ বা হেট স্পিচ (Hate Speech) দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই, হেট স্পিচের বিভিন্ন ভিডিওয় এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল (Viral Video) হয়েছে। প্রাক্তন সামরিক প্রধান থেকে সমাজকর্মী এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এই ভিডিওগুলির তীব্র নিন্দা করে, বক্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ দাবি করেছেন। কিন্তু, ঘটনার পর তিনদিন পেরিয়ে গেলেও, এখনও একটি এফআইআর পর্যন্ত করেনি পুলিশ। এই অবস্থায়, অভিযুক্ত বক্তারাও তাদের ঘৃণা ভাষণের বিষয়ে কোনও লুকোছাপা রাখছেন না।
গত ১৭ থেকে ২০ ডিসেম্বর হরিজ্বারের জ্বালাপুরের বেদ নিকেতনে (Ved Niketan, Jwalapur) ধর্মসভার নামে ওই ঘৃণা-ভাষণের আসর বসানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) নেতা তথা আরটিআই কর্মী সাকেত গোখলে (Saket Gokhle) স্থানীয় থানায় ওই ধর্ম সংসদের আয়োজক এবং বক্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে, তিন দিন পরও, এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপই নেয়নি পুলিশ। ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে বক্তা ও আয়োজকদের ঘনিষ্ঠতাই পুলিশকে নিষ্কর্মা করে রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কোনও এফআইআর পর্যন্ত না করার কারণ হিসাবে পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত নাকি এই বিষয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। হরিদ্বারের পুলিশ সুপার স্বতন্ত্র কুমার সিং শুধু বলেছেন, 'পুলিশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে'।
সমাবেশের আয়োজক এবং বক্তা সকলেরই অবশ্য অতীতে উস্কানিঘৃণামূলক বক্তব্য রাখার ইতিহাস রয়েছে। আয়োজক যতি নরসিংহনন্দের (Yati Narasimhanand) বিরুদ্ধে এর আগে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন পূজা শকুন পান্ডে (Pooja Shakun Pandey), ওরফে 'সাধ্বী অন্নপূর্ণা' (Sadhvi Annapurna)। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তিনি হিন্দুদের অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে মহাত্মা গান্ধীর (Mahatma Gandhi) কুশপুত্যলিকায় গুলি চালিয়ে ও আগুন ধরিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। ছিলেন, বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়ও (Ashwini Upadhyay), যিনি একটি হেচ স্পিচের মামলাতেই জামিন পেয়ে জেলের বাইরে রয়েছেন।
সাকেত গোখলের অভিযোগ অনুসারে, সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত অন্যদের মধ্যে ছিলেন, হিন্দু রক্ষা সেনার (Hindu Raksha Sena) প্রবোধানন্দ গিরি (Prabodhanand Giri), বিজেপি মহিলা শাখার নেত্রী উদিতা ত্যাগী (Udita Tyagi) প্রমুখ। একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে প্রবোধানন্দ গিরিকেও হিন্দুদের হাতে অস্ত্র তুলে নিতে ডাক দিতে দেখা গিয়েছে। আরেকটি ভিডিওতে, স্বামী ধরমদাস মহারাজকে (Swami Dharam Das Maharaj), সংসদের ভিতর 'নাথুরাম গডসে হয়ে ওঠা'র আহ্বান জালাতে দেখা গিয়েছে।
ভিডিওগুলির সত্যতা যাচাই করতে পরেনি এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। তবে, এনডিটিভির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বক্তারা কেউ তাঁদের ঘৃণামূলক বক্তব্যের জন্য এতটুকু অনুতপ্ত নন, এমনকী পুলিশ-প্রশাসনের ভয়ও পাচ্ছেন না তাঁরা। নিজেদের ভাষণ নিয়ে লজ্জা দূরে থাক, বক্তব্যে অটল তাঁরা। এমনকী ভারতের সংবিধান ভুল, এমন কথাও বলছেন এই বক্তারা। এঁদের সকলের সঙ্গেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (yogi Adityanath), উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর ধামি-সহ (Pushkar Dhami) বিজেপি নেতাদের দারুণ ঘনিষ্ঠতা।
তবে, এই নিয়ে দারুণ ক্ষোভের জন্ম হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রাক্তন নৌসেনা (Indian Navy) প্রধান অরুণ প্রকাশ (Arun Prakash) এই বিষয়ে টুইট করে বলেছেন, এই ধরণের বক্তব্য, জাতীয় ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে। এর ফলে জওয়ানদের বাইরের শত্রুর পাশাপাশি ঘরের শত্রুদেরও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রাক্তন সেনাপ্রধান (Indian Army) জেনারেল ভিপি মালিকও (General VP Malik) এই ধরনের বক্তৃতার বিরুদ্ধে অসামরিক প্রশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দাবি করেছেন। অভিনেত্রী স্বরা ভাস্বরও (Swara Bhaswar) টুইট করে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। এমনকী, এই সকল ভিডিও দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাও (Martina Navratilova)।