সংক্ষিপ্ত

সোমবার রাতে গালওয়ান উপত্যকায় রক্তাক্ত সংঘর্ষে জড়িয়েছিল ভারত ও চিন

৪৫ বছর আগে এই উপত্যকাতেই চিন সেনার হাতে শহিদ হয়েছিলেন ৪ ভারতীয় জওয়ান

কীভাবে এই উপত্যকার নাম হল গালওয়ান

আসুন জেনে নেওয়া যাক এই উপত্যকার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

 

গত বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে গ্যালওয়ান উপত্যকা। পূর্ব লাদাখের চিন ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে এই উপত্যকা। সোমবার রাতে যা চরমে পৌঁছায়। দুইপক্ষের সংঘর্ষে ভাকতীয় সেনার অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, চিনা সেনাবাহিনীরও অন্তত ৪৫ জন হয় নিহত নয়তো গুরুতর আহত। তবে এই ছবির মতো পাহাড়ি উপত্যকায় যে এই প্রথম রক্ত ঝরল তা নয়। ৪৫ বছর আগেও এখানে শহিদ হয়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদজস্যরা। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই উপত্যকার ইতিহাস।

ভারত-চীন সীমান্তে এই উপত্যকার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এই উপত্যকার নাম হয়েছে কাশ্মীরি যাযাবর লুটেরা সম্প্রদায় গালওয়ান এবং সেই সম্প্রদায়েরই এক অসম সাহসী অভিযাত্রী তথা 'সার্ভেন্টেস অব সাহিবস' বইয়ের লেখক গোলাম রসুল গালওয়ান-এর নাম থেকে। ১৮৯৯ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রীদের সঙ্গে এই গোলাম রসুল গালওয়ানই ভারত-চিন সীমান্ত ধরে বয়ে চলা নদীটির উৎস আবিষ্কার করেছিলেন। আবিষ্কারক দলটির নেতৃত্বে ছিলেন গোলাম রসুল গালওয়ান। তাই ওই নদী এবং উপত্যকা - দুটিরই নাম হয় গালওয়ান। ব্রিটিশ দলটিকে নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন চ্যাং চেনমো উপত্যকার উত্তরের অঞ্চলগুলিতে অভিযানে। এভাবেই ওই নদীর উৎসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।

এবার আসা যাক গালওয়ান সম্প্রদায়ের কথায়। এই সম্প্রদায় মূলত কাশ্মীরি ঘোড়া ব্যবসায়ী সম্প্রদায় হিসলাবে পরিচিত। তবে স্থানীয় কিছু সমাজবিজ্ঞানীর মতে, তাঁরা শুধু ঘোড়া ব্যবসা করতেন তাই নয়, গালওয়ান উপত্যকা দিয়ে যাওয়া অন্যান্য ব্যবসায়ীদের আটকে তাদের লুঠপাট করতেন। গোলাম রসুল গালওয়ানও লিখে গিয়েছেন তাঁর পূর্বপুরুষদের লুঠের কথা। তবে তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা ধনিদের কাছ থেকে সম্পদ লুঠ করে তা দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করে দিতেন। ওই উপত্যকাতেই মূলত তারা লুঠপাট চালাত বলেই তাদের নাম থেকে উপত্যকাটির নাম হয়ে যায় গালওয়ান উপত্যকা।

এই গালওয়ান সম্প্রদায়ের কথা ফরাসী অভিযাত্রী ইয়ং হাসবুন্ড-এর লেখাতেও পাওয়া যায়। তিনি জানিয়েছেন, হিমালয় অঞ্চলের এই মানুষরা অত্যন্ত পরিশ্রমী ও নির্ভীক। জীবনে ঝুঁকি নিতে তারা সর্বদা প্রস্তুত। একই সঙ্গে তারা বেশ চালাক এবং সাহসী। যে কোনও বাড়ির দেওয়ালে তারা তারা বিড়ালের দক্ষতায় চড়তে পারে। তবে একজায়গায় বাড়ি  বানিয়ে থাকাটা তাদের ধাতে নেই।

গোলাম রসুল গালওয়ানের লেখা থেকে পাওয়া যায়, একবার ওই অঞ্চলের এক মহারাজা তাঁর পূর্বপুরুষদের এক বিশ্বস্ত ব্যক্তির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তাঁর বাবার ঠাকুর্দাকে বন্দি করেছিলেন। তাঁকে রাজার বাড়িতে ডেকে এনে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। তারপর তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এরপরই গালওয়ান সম্প্রদায়ের বহু লোক প্রাণ বাঁচাতে ওই অঞ্চল ছেড়ে কাশ্মীরে পালিয়ে গিয়েছিল। কাশ্মীরের বুদগামে এখনও গালওয়ানপোরা নামে একটি গ্রাম রয়েছে। যেখানে গালওয়ান সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন।

এবার আসা যাক এই উপত্যকায় ভারত-চিন দ্বন্দ্বের ইতিহাসে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে এই উপত্যকায় সরাসরি দুই দেশের সেনারা মুখোমুখি হয়নি। তবে লড়াই হয়েছিল নিকটবর্তী চুসুল উপত্যকায়। গালওয়ান উপত্যকায় প্রথম ভারতীয় সেনার রক্ত ঝরেছিল ১৯৭৫ সালে। অসম রাইফেলস-এর একটি টহলদার বাহিনী এই উপত্যকায় ভারতীয় সীমানা বারবর কর্তব্য পালন করছিল। ফাঁদ তৈরি করে ভারতীয় সেনাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছিল চিনা সেনারা। তারপর হয় এক রক্তাক্ত সংঘর্ষ। চিন সেনার হাতে প্রাণ গিয়েছিল ৪ জন জওয়ানের।