সংক্ষিপ্ত
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন (Uttar Pradesh Elections 2022) যত এগিয়ে আসছে, বিজেপি (BJP) নেতাদের বক্তৃতায় ঢুকছে নতুন নতুন শব্দ। এখন থেকেই শুরু 'মেরুকরণ'এর খেলা।
আসন্ন উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে (Uttar Pradesh Elections 2022) খোলাখুলি হিন্দুত্বের তাস খেলতে চলেছে বিজেপি (BJP)। ইতিমধ্যেই বিজেপি নেতাদের বক্তৃতায়, 'লুঙ্গিছাপ'-এর মতো নতুন নতুন শব্দ, বিশেষ করে মুসলমান (Muslims) বিষয়ক শব্দ শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন বিজেপি নেতাদের, এই ধরণের ভাষার ব্যবহার থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে চড়া ধর্মীয় 'মেরুকরণ'এর চেষ্টা করছে বিজেপি। নিজেদেরকে তারা হিন্দু (Hindus) ধর্মের মসিহা হিসাবে উপস্থাপন করতে চাইছে।
বিজেপি নেতাদের সভা-সমাবেশে ক্রমাগত ধর্মান্তরকরণ, গোহত্যা এবং হিন্দু পরিবারদের ঘরছাড়া হওয়ার বিষয়গুলি উঠে আসছে। সভায় সভায় তাঁরা বলে চলেছেন, সমাজবাদী পার্টির (Samajwadi Party) শাসনে হিন্দুদের নাকি ধর্মীয় হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে, হিন্দু সংস্কৃতির উপর নেমে এসেছে আক্রমণ। আগেই, মথুরায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি (Shri Krishna Janmabhoomi in Mathura) উদ্ধারের জন্য দলীয় সমর্থকদের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন বিশিষ্ট বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য (Keshav Prasad Maurya)। সম্প্রতি, তিনি আবার বলেছেন 'সপা'র আমলে 'লুঙ্গিছাপ' গুন্ডারা সশস্ত্র অবস্থায় জনগণ এবং ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাতো, জোর করে জমি দখল করত।
আরও পড়ুন - Digital India: ৬ বছরে আধারে বাঁচল ১.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা, চালু হয়ে গেল ৫৮টি আধার কেন্দ্র
আরও পড়ুন - SP in Uttarpradesh: কংগ্রেসে না, চব্বিশের রণকৌশল সাজাতে মমতারই হাত ধরতে চান অখিলেশ
আরও পড়ুন - Uttar Pradesh - যোগীকে হারাতে মহিলারাই ভরসা কংগ্রেসের, বড় ঘোষণা করলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
প্রয়াগরাজের ওই জনসভায় মৌর্য আরও বলেছেন, এখন থেকে তিনি সপা সভাপতি অখিলেশ যাদবকে (Akhilesh Yadav), 'অখিলেশ আলি জিন্না' বলে সম্বোধন করবেন। আরেক ধাপ এগিয়ে, উত্তরপ্রদেশ বিজেপির সভাপতি স্বতন্ত্র দেও সিং (Swatantra Deo Singh), অখিলেশ যাদবের শাসনকালকে গজনীর সম্রাট মাহমুদ (Mahmud of Ghazni) এবং মহম্মদ ঘোরির (Muhammad Ghori) সময়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। দশম শতাব্দীতে ভারতবর্ষে ব্যাপক লুণ্ঠন চালিয়েছিলেন মাহমুদ। আর দ্বাদশ শতকে মহম্মদ ঘোরিই ভারতে মুসলিম শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। স্বতন্ত্র দেও সিং-এর দাবি, অখিলেশ যাদব গজনি এবং ঘোরির মতোই উত্তরপ্রদেশ রাজ্যকে লুঠ করেছেন এবং হিন্দুদের ধর্মীয় পরিচয়কে আক্রমণ করেছেন।
তাঁর অভিযোগ, সপার আমলে উত্তরপ্রদেশে, দুর্গা পূজার জন্য প্যান্ডেল তৈরি করার ক্ষেত্রেও বাধা পেতেন হিন্দুরা। অখিলেশকে, 'মরসুমি হিন্দু' বলে কটাক্ষ করে স্বতন্ত্র দেও বলেছেন, ২০১৭ সালে রাজ্যে যোগীর শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। এখন কানওয়াড় যাত্রায় (Kanwad Yatras) পুষ্পবৃষ্টি করা হয়, অযোধ্যায় রাম মন্দির (Ram Temple, Ayodhya) তৈরি হচ্ছে, কাশী বিশ্বনাথ করিডোরও (Kashi Vishwanath Corridor) তৈরি হয়ে গিয়েছে। অযোধ্যায় করসেবকদের উপর 'অত্যাচার' এবং হিন্দু ধর্মের সাংস্কৃতিক প্রতীককে 'আক্রমণের' জন্য অখিলেশ যাদবকে তিনি, ভগবান রাম ও শিবের কাছে ক্ষমা চাওয়ার উপদেশ দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, প্রচারের শুরুর দিনের এই প্রবণতা লক্ষ্য করে বলছেন, উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, বিজেপি নেতাদের তে প্রচারে মুসলিম আক্রমণকারীদের উল্লেখ আরও বেশি বেশি করে দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে, সমাজবাদি পার্টির বক্তব্য, বিজেপি নেতাদের এইসব মন্তব্য বলে দিচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে পরাজয়ের ভয় পাচ্ছে বিজেপি। তারা বুঝতে পেরেছে, রাজ্যের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চলেছে এবং তাই তারা নির্বাচনে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কি বিজেপির এই কৌশল কাজে দেবে উত্তরপ্রদেশে? সেটাই এখন দেখার।