সংক্ষিপ্ত

দিল্লির বুকে ফের জাতি হিংসা। যা নিয়ে এখন তোলপাড় দেশ। কার মদতে হল এই হিংসা? কারা রয়েছে এর পিছনে? এই নিয়ে চলেছে এক অন্তর্তদন্ত। যেখানে সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই প্রতিবেদনে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই পক্ষের বয়ান। যেখান থেকে এক পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যেতে পারে এই হিংসার শুরুর কারণ সম্পর্কে।   
 

কীভাবে ঘটেছিল দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে জাতি হিংসা? কারা আগে একে অপরকে আক্রমণ করেছিল? জাতীয় এক সংবাদমাধ্যমের করা স্টিং অপারেশনে সেই তথ্য এবার সামনে এসেছে। এই মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে এই জাতি হিংসার মূল দুই বিবাদ গোষ্ঠী হিন্দু এবং মুসলিম জনজাতির লোকেদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। গোপনে তাদের বয়ান নেওয়া হয়েছে। আর সেখান থেকেই খানিকটা হলেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে হনুমান জয়ন্তীতে রাজধানীর বুকে জাতি হিংসার সূচনার কারণ। হিন্দু এবং মুসলিম- দুই জনজাতির লোকেরাই একে অন্যের উপরে প্রথমে হামলা এবং হিংসার উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। জাহাঙ্গিরপুরী হিংসার এই মিডিয়া রিপোর্টে অবশ্য হিন্দু এবং মুসলিম যাদের বয়ান নেওয়া হয়েছে তাদের পরিচয় জানানো হয়নি। 

হিন্দুদের দেওয়া বয়ান
------------------------------ 
এক হিন্দু জানিয়েছেন, তিনি হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে দলবল নিয়ে ডিজে বাজিয়ে শোভাযাত্রা বের করেছিলেন। জাহাঙ্গিরপুরী-র ইই ব্লক থেকে শোভাযাত্রা বেশ শান্তিপূর্ণভাবেই এগোচ্ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। ডিজি বাজিয়ে তারা কিছুটা আসার পরই নাকি একদল মুসলিম ছেলে তাদের পাশ দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। বয়ান দেওয়া এই ব্যক্তি জানিয়েছেন, ওরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এমন রক্তচক্ষু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল যে তা ভালো লাগেনি। এরপর নাকি তিনি নিজে ডিজের সাউন্ড বন্ধ করে দেন বলে জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। ডিজে-র সাউন্ড বন্ধ রেখেই শোভাযাত্রা এগোচ্ছিল, আর সেই সময়ই আচমকা মুসিলম ছেলেগুলো পিছন থেকে তরোয়াল নিয়ে এসে শোভাযাত্রার উপরে হামলা করে বলে অভিযোগ। এর ফলে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রা বের করা দলটিও পাল্টা প্রতিরোধ তৈরি করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই মুসলিম ছেলেদের দলটি তরোয়ালের বাট দিয়ে একের পর এক জনকে নাকে-মুখে বাড়ি মারে বলেও অভিযোগ। বয়ান দেওয়া এই ব্যক্তির আরও অভিযোগ, তাদেরকে হুমকিও দেওয়া হয়। হামলাকারী দলটি নাকি বলছিল যে সামনে যদি যাওয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে আরও উচিত শিক্ষা নাকি দেওয়া হবে। 


মুসলিমদের দেওয়া বয়ান
--------------------------------- 
জাতি হিংসার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এক মুসলিম ব্যক্তি জানিয়েছেন, দুপুর ১.৩০টা নাগাদ প্রথম মিছিলটা স্থানীয় হিন্দু মন্দির থেকে বের হওয়ার পর শান্তিপূর্ণভাবেই এগোচ্ছিল। এটা ছিল জাহাঙ্গিরপুরীর জে ব্লক। হিন্দুরা মিছিল থেকে সমানে জয় শ্রীরাম বলে স্লোগান দিচ্ছিল সমানে এমনই দাবি করেছেন এই মুসলিম প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু জে ব্লকেরর মসজিদের সামনে এসে মিছিলটি দাঁড়িয়ে পড়ে এবং সমানে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে থাকে। বয়ান দেওয়া এই মুসলিম ব্যক্তির অভিযোগ, এই স্লোগানে যতটা না স্বাভাবিক ছিল তার থেকে বেশি করে হুমকি এবং উসকানির মেজাজ ছিল। মসজিদের সামনে জোরে জোরে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল। আর সেখানে থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। বয়ান দেওয়া এই মুসলিম ব্যক্তির আরও অভিযোগ, 'হিন্দুরা সমানে বলে যাচ্ছিল হয় জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে হবে। আর মোল্লাদের হত্যা করতে হবে।'  

 কয়েকটি পয়েন্টে দেখে নেওয়া হিন্দু এবং মুসলিমদের বয়ানের সারাংশ
------------------------------------------------------------------------------------------------ 
হিন্দুর দেওয়া বয়ানের সারাংশ-------
১। মুসলিমরা আগে থেকেই হামলার পরিকল্পনা করে রেখেছিল
২। ৫-৬ জন ছেলে শোভাযাত্রার সামনে আসে এবং সশস্ত্র অবস্থায় হামলা করে
৩। এই হামলাকারীরা কোনও কারণ ছাড়াই অহেতুক আমাদের শোভাযাত্রায় হামলা করে এবং পুরো পরিস্থিতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলে
৪। বয়ান দেওয়া হিন্দুর অভিযোগ, যে তরোয়াল নিয়ে তাঁর উপরে হামলা করেছিল এক মুসলিম যুবক 
৫। যখন তৃতীয় শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল তখন রোজা ভাঙার সময়, যার ফলে প্রচুর মুসলিম এলাকায় ছিল, আর এরাই হামলা করেছিল

মুসলিমের দেওয়া বয়ানের সারাংশ-------
১। জয় শ্রীরাম স্লোগান দিয়ে পরিস্থিতিকে গরম করে তোলা হয়েছিল 
২। মসজিদের সামনে গিয়ে শোভাযাত্রা থমকে গিয়েছিল 
৩। মসজিদের সামনে উসকানি মূলক মন্তব্য করা হয়েছিল মিছিল থেকে 
৪। তৃতীয় শোভাযাত্রাকে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে ঢুকতে বারণ করা হয়েছিল, কিন্তু জোর করে হিন্দুরা তৃতীয় শোভাযাত্রা বের করেছিল
আরও পড়ুন- জাহাঙ্গীরপুরীতে ৯টি বুলডোজার আটকে দিলেন CPM নেত্রী বৃন্দা কারাত, রুখে দিলেন অবৈধ নির্মাণ ভাঙা
আরও পড়ুন- স্কুলবাস থেকে নামতেই পেটের ওপর দিয়ে চলে গেল চাকা, মর্মান্তিক মৃত্যু চার বছরের শিশুর 
আরও পড়ুন- দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে সাম্প্রদায়িক হিংসা, হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় গ্রেফতারি শুরু