সংক্ষিপ্ত
- বিজ্ঞাপণের আয় নির্ভর করে এই টিআরপি-র উপরে
- টেলিভিশন চ্যানেলগুলির মূল ভিত্তি হল এই টিআরপি
- তাতেই জালিয়াতি হয়েছে বলে দাবি করেছে মুম্বই পুলিশ
- এই জালিয়াতির ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বেশকিছু সংস্থার
হানসা বলে একটি সংস্থার পরিচালন কর্তারা আচমকাই কিছু একটা গণ্ডগোলের হদিশ পেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই টিআরপি মানে টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট মাপাতে ফ্রন্টরোলে কাজ করে আসছে হানসা। তাদের দেওয়া টিআরপি- ডেটা থেকেই বার্ক নামক সংস্থা টিআরপি প্রকাশ করে। ভারতবর্ষে বার্ক-ই এমন এক সংস্থা যারা সরকারিভাবে টিআরপি মাপার দায়িত্বে রয়েছে। বার্ক তথা ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিল-এর দেওয়া সাপ্তাহিক টিআরপি-র উপরেই বিজ্ঞাপণের আয় নির্ভর করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলির। কোন টেলিভিশন চ্যানেল কতটা এগিয়ে তা নির্ভর করে বার্কের দেওয়া টিআরপি-র উপরে।
আরও পড়ুন- টিআরপি জালিয়াতিতে বড় বাঁক, এফআইআর-এ রিপাবলিকের বদলে নাম অন্য চ্যানেলের
মুম্বইয়ে ২০০০ এমন ব্যারোমিটারস রয়েছে যা থেকে টিআরপি মাপা হয়। আর এই সব ব্যারোমিটার বিভিন্ন বাড়ির টেলিভিশন সেটের সঙ্গে কানেক্ট করা রয়েছে। কোন টিভি সেটে কোন চ্যানেল বেশি দেখা হচ্ছে তা জরিপ করে নিয়ে তথ্য মজুত করে এই ব্যারোমিটার। হানসা বলে এই সংস্থাটির কাজ হল এই সব ব্যারোমিটারে নজর রাখা এবং সেখানে পাওয়া তথ্য বার্ক-কে সরবরাহ করে দেওয়া।
আরও পড়ুন- শিক্ষক-ছাত্রীর রোম্যান্সই আনছে TRP, 'এখানে আকাশ নীল'-কে কীভাবে টেক্কা দিল 'মোহর'
মুম্বই পুলিশ কমিশনার পরমবীর সিং-এর দাবি, তদন্তে তাঁদের সামনে উঠে এসেছে কীভাবে টিআরপি জালিয়াতি করা হতো তার পুরো ছবিটা। তিনি জানিয়েছেন, টিআরপি জালিয়াতির জন্য বেছে নেওয়া হত অশিক্ষিত এবং গরিবদেরকে। তাদেরকে বলে দেওয়া হতো গোটা দিন ধরে নির্দিষ্ট একটি চ্যাানেল টিভি-তে চালিয়ে রাখতে। পরিবারের কেউ সেই চ্যানেল দেখুক বা না দেখুক- তাতে কিছু যায় আসে না। পরমবীর সিং-এর মতে, পইপই করে এই মানুষগুলিকে বোঝানো হত নির্দিষ্ট কিছু চ্যানেল দেখতে। এর ফলে তদন্তে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ মানুষ যাদের পরিবারে সেভাবে শিক্ষার আলোই প্রবেশ করেনি, ইংরাজি বলতেই পারেন না, অথচ তারা সারা দিন ধরে নির্দিষ্ট কিছু চ্যানেল চালিয়ে রাখতেন। এমনকী, এই সব চ্যানেলের মধ্যে ইংরাজি চ্যানেলও ছিল। এর জন্য এই সব পরিবারকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মাসোহারা পর্যন্ত দেওয়া হত।
আরও পড়ুন- বিগ বসের বিকিনি বেবে, সানি থেকে হিনা, কারা আগুন ধরিয়েছিলেন সলমনের অনুষ্ঠানে
মুম্বই পুলিশ কমিশনারের দাবি মতো, বার্ক-এর কর্তাদেও এই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বার্ক-এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা সমস্ত গাইডলাইনস মেনেই কাজ করছেন। বার্কের উদ্দেশ্যই হল স্বচ্ছ এবং সত্য রিপোর্ট পৌঁছে দেওয়া বলেও জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র এবং তিনি দাবি করেছেবন বার্ক খুবই স্বচ্ছতার সঙ্গে সেই কাজ করছে। মুম্বই পুলিশের তদন্তকে স্বাগতও জানিয়েছে বার্ক। এমনকী মুম্বই পুলিশকে টিআরপি জালিয়াতি কাণ্ডে সবধরণের সাহায্য করারও আবেদন জানিয়েছে তারা।
এদিকে, হানসাও একটি বয়ান প্রকাশ করেছে, তাতে তারা জানিয়েছে, টিআরপি জালিয়াতি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় তারা বিষয়টি বার্ককে জানায়। এরপর হানসা ও বার্ক একটি যৌথ তদন্ত চালায়। এতে হানসার এক কর্মীর যোগাসাজোস মেলে। এরপরই হানসা ওই কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে বলেও এই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই টিআরপি-তে জালিয়াতি নিয়ে বিতর্ক চলছে। সম্প্রতি এক কেন্দ্রীয়মন্ত্রীও এই নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সুপ্রিমকোর্টও টিআরপি জালিয়াতি নিয়ে সরব হয়েছে সম্প্রতি। সুরদর্শনা টিভির ইউপিএসসি জিহাদ শো- নিয়ে মামলা সুপ্রিমকোর্টেও গড়িয়েছিল। সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি টিআরপি-র ঘোড়াদৌড় নিয়ে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। এমনকী ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার শক্তি এবং তা যেভাবে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে নিশানা করা হচ্ছে তা নিয়েও সরব হন ওই বিচারপতি। তিনি তাঁর বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন, টিআরপি-র জন্য একজন মানুষের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করতেও পিছপা হচ্ছে না ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া। এদিকে, মুম্বই পুলিশের কমিশনার পরমবীর সিং জানিয়েছেন, এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের সকলকেই জেরা করা হবে। কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না বলেও জানিয়েছেন পরমবীর।