সংক্ষিপ্ত

সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নৃশংসতম লড়াই

একেবারে হাত ছোঁয়া দূরত্বে সেনা ও জঙ্গি

ভারতীয় সেনার হাতে খতম পাঁচ পাক জঙ্গি

শহিদ হলেন পাঁচ জওয়ানও

 

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এত নৃশংস লড়াই দেখা যায়নি। সারা দেশে যখন চিকিৎসক, নার্সরা করোনাভাইরাস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, সেই সময়, প্রায় সকলের অগোচরে রবিবার ভারতীয় সেনার এক বিশেষ বাহিনী, কাশ্মীরের কুপওয়াড়া জেলায় উচ্চ তুষারবৃত এলাকায় রীতিমতো হাতে-হাতে লড়াই করে খতম করল ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাঁচ পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীকে। তবে দুঃখের বিষয়, এই অভিযানে পাঁচজন ভারতীয় সেনারকও প্রাণ গিয়েছে।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত গত ১ এপ্রিল। ওইদিন নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছে, সেনাবাহিনী কিছু পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছিল। তারপরই সম্ভাব্য জঙ্গিদের খোঁজে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। গত দুদিন ধরে কাশ্মীর উপত্যকায় তীব্র তুষাড়পাতের পর, ওই এলাকার প্রতিরক্ষামূলক কাঁটাতাড়ের বেড়াগুলি বরফের তলে ডুবে য়ায়। আর এলাকাটি অন্যান্য সব জায়গার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। আর এই খারাপ আবহাওয়াকেই  কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিল সন্ত্রাসবাদীদের দলটি।

১ এপ্রিল দুপুর ১টার সময় প্রথম সন্ত্রাসবাদীদের খোঁজ পেয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। কিন্তু, তারা পাঁচটি ব্যাগ ফেলে পালায়। এরপরই অতিরিক্ত সেনা আনা হয়েছিল এবং পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেরা হয়। ৩ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভারতীয় সৈন্যরা ফের ওই জঙ্গিদের পায়ের ছাপ খুঁজে পায় এবং সেই পায়ের ছাপের সূত্র ধরে এগিয়েছিল অভিযান। এলাকার প্রকৃতিগত ও আবহাওয়াগত চ্যালেঞ্জগুলির কথা বিবেচনা করে সেনাবাহিনী, প্যারা স্পেশাল ফোর্স-কে ডেকে আনে। ভারতীয় সেনার পদাতিক বাহিনীর মধ্য়ে এই বাহিনীই সর্বাধিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ।

একটি ড্রোন ক্যামেরার পাঠানো ছবির ভিত্তিতে, বিশেষ সামরিক হেলিকপ্টারে করে তারা নিকটতম ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে চলে আসে। ৫ এপ্রিল একেবারে ভোরে তারা জঙ্গিদের পথ ধরে চলতে শুরু করে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যক্রমে না বুঝেই তারা জমাট বরফের একটি কার্নিশের উপর দিয়ে চলছিল। একসময়, কার্নিশটি ভেঙে তাঁরা নিজে পড়ে যান। সেনার সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা যে জায়গাটিতে পড়েছিলেন, ঠিক সেখানেই ঘাঁটি গেড়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা। ফলে আচমকা দুইপক্ষ একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে চলে আসে।

পড়ে যাওয়া সত্ত্বেও পরমুহূর্তেই সেনাবাহিনীর বিশেষ দলটি ওই পাঁচ সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে হাতাহাতি ও গুলির লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছিল। আর দূর থেকে গোলা ছোড়া বা গায়ে বোমা বেঁধে সাধারণ মানুশকে হত্যা করায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জঙ্গিরা ভারতীয় সেনার সঙ্গে হাতে-হাতে লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারেনি। দ্রুতই পাঁচজন সন্ত্রাসবাদীরই মৃত্যু হয়। তবে সেই সঙ্গে পাঁচ সেনাসদস্যও শহিদ হন। মাত্র দুই থেকে তিন মিটারের মধ্যেই সেনা ও সন্ত্রাসীবাদীদের দেহগুলি পড়ে ছিল।

এই ঘটনায় শহিদ সেনা সদস্যরা হলেন  -

সাবইন্সপেক্টর সঞ্জীব কুমার, হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা

হাবিলদার দেবেন্দ্র সিং, উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা

সেপাই বাল কৃষ্ণাণ, হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা

সেপাই অমিত কুমার, উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা

সেপাই ছত্রপাল সিং, রাজস্থানের বাসিন্দা