সংক্ষিপ্ত

  • বারানসীতে বসেই গুপ্তচরবৃত্তি।
  • আইএসআই-কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠানো অভিযোগে গ্রেফতার যুবক।
  • করাচিতে গিয়ে প্রেমে পড়েন এক পাক মহিলার।
  • তাকে পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই তাকে হাত করে আইএসআই।

 

এক পাক মহিলার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েই সে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর এজেন্ট হয়েছিল। গত বছরের মার্চ মাস থেকেই হোয়াটসঅ্যাপে আইএসআই-কে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নথি পাঠানো শুরু করেছিল। তাও আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দজ্র মোদীর নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারানসী-কে বসেই। দীর্ঘদিন ধরে তার উপর গোপনে নজর রাখার পর রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সেই যুবককে গ্রেফতার করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড।

সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে গত বছর জুলাই মাস থেকেই মহম্মদ রশিদ নামে ওই যুবকের উপর নজর রাখছিলেন তাঁরা। এর জন্য বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা ও উত্তরপ্রদেশ এটিএস-এর সদস্যদের নিয়ে একটি যৌথ দল গঠন করা হয়েছিল। কয়েকসপ্তাহ ধরে বিভিন্ন তথ্য বিবেচনা, নজরদারি এবং প্রাথমিক সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই তাঁরা মহম্মদ রশিদকে চিহ্নিত করেছিলেন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। তারপর তার মোবাইল ফোনও পরীক্ষা করা হয়। তারপর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে একেবারে নিশ্চিত যোগাযোগের প্রমাণ পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ২৩ বছরের মহম্মদ রশিদ-এর আইএসআই এজেন্ট হওয়ার পিছনের কাহিনিটিই। ছোটবেলাতেই তার বাবা-মা-এর তালাক হয়ে যায়। তারা দুজনেই নতুন করে বিয়ে করেন। তারপর থেকে সে তার দাদু ও কাকার সঙ্গেই বারাণসী জেলার চান্দৌলি-তে থাকতেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা সঙ্গে সঙ্গে একটি সেলাই কারখানা এবং মেডিসিন স্টোরে কাজ করত। পরে পড়াশোনা ছেড়ে ফ্লেক্স-সাইনবোর্ড লাগানোর কাজ করত। তাদের কিছু আত্মীয় পাকিস্তানের করাচি-তে থাকেন। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে দুবার আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে দু'বার করাচি গিয়েছিলেন। প্রথমবার করাচি গিয়েই নিজের এক তুতোবোনের প্রেমে পড়ে যায় রশিদ।

দ্বিতীয়বার, করাচিতে যাওয়ার পর তার খুড়তুতো ভাই শজেব তাকে দু'জন আইএসআই কর্মীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয়। আশিম এবং আমাদ নামে এই দুই পাক গুপ্তচরের সঙ্গেই মহম্মদ রশিদ-এর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহারের জন্য রশিদের কাছ থেকে ভারতীয় ফোন নম্বর জোগার করত তারা। ভারতীয় সেনা ইউনিট কোথায় মোতায়েন করা হচ্ছে ইত্যাদি সম্পর্কিত ফটো, ভিডিও ও তথ্যও সংগ্রহ করত। এর পাশাপাশি ভারতের স্পর্শকাতর এলাকাগুলির বিক্ষোভ ও সমাবেশের বিষয়েও তথ্য পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে। এর পরিবর্তে তাকে অর্থের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে রশিদের সামনে তার থেকেও বড় আকর্ষণ ছিল এবং করাচিতে তার সেই ভালোলাগা তুতোবোনকে বিয়ে করার ব্যাপারে সহায়তা করার আশ্বাস দেওয়া হয়।

জানা গিয়েছে আইএসআই-এর পক্ষে কাজ করার বিষয়ে তার করাচির কাকা-কাকিমাও একাধিকবার রশিদকে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তার গাড়ে তখন প্রেমের ভুত চেপেছে। তাই আশিম এবং আমাদ তাকে যা বলত সে তাই করে দিত। ভারতে ফেরার পর থেকে তাদের দুটি ভারতীয় মোবাইল নম্বর এবং সেই নম্বরগুলির প্রেক্ষিতে পাঠানো ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড দিয়েছিল রশিদ। এইভাবেই আইএসআই-এর হাতে ভারতীয় নম্বর দিয়ে তৈরি দুটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট চলে আসে। এই হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টগুলি পরে পাকিস্তানি এজেন্সিগুলি ভারতীয় প্রতিরক্ষা কর্মীদের ফাঁদে ফেলার জন্য ব্যবহার করেছে।

এর পাশাপাশি সে বেশ কয়েকটি জায়গার সুরক্ষা ব্যবস্থার ফটো এবং ভিডিও পাঠিয়েছিল। সেই তালিকায় রয়েছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, এয়ারফোর্স সিলেকশন বোর্ড, জ্ঞানবাপি মসজিদ, সংকটমোচন মন্দির, কনট রেলস্টেশন, আগ্রা ফোর্ট, দশাশ্বমেধ ঘাট নৈনী ব্রিজ এবং প্রয়াগের অর্ধ কুম্ভমেলা, চান্দৌলি এবং আমেঠির সিআরপিএফ শিবির, গোরক্ষপুর রেলস্টেশন , সোনভদ্রায় রেনুকুট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, দিল্লির ইন্ডিয়া গেট, রাজস্থানের আজমেরি শরিফ, মহারাষ্ট্রের নাগপুর রেলস্টেশন ইত্যাদি। এমনকী লখনউ, বিএইচইউ-তে ঘটা সাম্প্রতিক সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভের ভিডিও এবং ছবিও পাঠিয়েছিল রশিদ। শেষবার তার সঙ্গে আইএসআই-এর যোগাযোগ ঘটে ১৩ জানুয়ারি।

তবে এত কাজ করে দিলেও এতদিনের মধ্যে গতবছর জুলাই মাসে একবার ৫০০০ টাকা ছাড়া আইএসআই-এর কাছ থেকে কিছুই পায়নি সে। গত অক্টোবরে তাকে যোধপুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঘাঁটির কাছে একটি দোকান দিয়ে সেনার গতিবিধির উপর নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তারজন্য তাকে এককালীন ১ লক্ষ টাকা ও মাসে মাসে ১৫০০০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে সে বারবারই জানিয়েছে, অর্থ নয়, তুতোবোনকে বিয়ে করার লক্ষ্যেই সে আইএসআই-কে সাহায্য করেছে।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রেয়সীকেও পাওয়া হল না তার। তার বিরুদ্ধে এখন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার লক্ষ্যে তথ্য গোপনের অভিযোগশ আনা হয়েছে। শিঘ্রই তাকে আদালতে তোলা হবে।