সংক্ষিপ্ত

পান্না জেলার মানকি গ্রামকে মানুষ মিসিং ফাদার নামে চিনতে শুরু করেছে। এর পিছনে রয়েছে অভাবী ভারতের এক করুণ ছবি। 

সন্তানদের দুই-তিন বছর বয়স হলেই পরিবারের সবাই তাদের বাবা-মায়ের কথা বলতে শুরু করে। যাতে সে তার বাবা ও মায়ের নাম মনে রাখে এবং কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারে। কিন্তু আজ আমরা এমন একটি গ্রামের কথা বলতে যাচ্ছি যেখানে শিশুরা তাদের বাবার কথাও জানে না।

শুনে অবাক লাগলেও, এটাই সত্যি। মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) পান্না জেলার (Panna District) এমন একটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে শিশুরা (Children) তাদের বাবাকে (Fathers) চেনে না। তাই সাধারণ মানুষ এই গ্রামটিকে 'মিসিং ফাদারস' (Missing Fathers) নামে চিনতে শুরু করেছে। এই গ্রামে প্রায় ৬০০ মানুষের বসবাস, এই গ্রামের কোনও সন্তান নিজের বাবার নাম দূরে থাক, তাদের ঠিক মত চেনেও না। 

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি। এর পিছনে রয়েছে অভাবী ভারতের এক করুণ ছবি। এই গ্রামের সন্তানদের বাবাদের না চিনতে পারার কারণ কর্মসংস্থানের অভাব ছাড়া আর কিছুই নয়। পান্না জেলার মানকি গ্রামকে মানুষ মিসিং ফাদার নামে চিনতে শুরু করেছে। কারণ এ গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ কাজের সন্ধানে গ্রামের বাইরে থাকেন। এই গ্রামটি খরায় আক্রান্ত, সেই কারণে এই গ্রামের ৭০ শতাংশ পুরুষ গ্রামের বাইরে  শ্রম-মজুর করে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়।

এই গ্রামের মানুষ কাজের সন্ধানে দিল্লি, রাজস্থান, হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশে পাড়ি জমায়। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে বৃষ্টি না হওয়ায় গ্রামে তীব্র খরা দেখা দিয়েছে। যে কারণে এ গ্রামে কৃষিকাজ করা সম্ভব হয়নি। এখন মহিলারাও স্বামীর সঙ্গে কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে যাচ্ছেন দুটো টাকা রোজগারের আশায়।

এই গ্রামের বেশির ভাগ মহিলাই তাদের স্বামীদের সাথে নির্মাণ সাইটে কাজ করে। ঘরের খরচ মেটাতে গর্ভবতী অবস্থায়ও কাজ করা বন্ধ করেন না তাঁরা, শুধু তাই নয়, ৭ম ও ৮ম মাসেও কাজ করেন। তার প্রসবের সময় এলে তিনি গ্রামে ফিরে আসে। একই সময়ে, শিশুরা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে গ্রামে রেখে কাজে ফিরে যায়।

এই গ্রামের মহিলাদেরও নিরাপদ প্রসবের সুবিধা নেই। যার কারণে তাদের ও তাদের সন্তানদের ভুগতে হয় নানা রোগে। এমনকী কোনো ধাত্রী না থাকায় তাকে কোনো হাসপাতালে নেওয়া যায় না। এর কারণ হল হাসপাতালগুলো গ্রাম থেকে দূরে এবং গ্রামে কোনো পুরুষ নেই। এজন্য শুধু ঘরেই নারীদেরই প্রসব করতে হয়। যাতে অনেকসময় মা ও সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। জেনে রাখা ভালো যে ২০১১ সালে মধ্যপ্রদেশে ঘরছাড়াদের সংখ্যা ছিল এক কোটি ৮৫ লক্ষ। যার মধ্যে ৫০ লাখই ছিল গ্রামীণ এলাকা থেকে। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা কোথায় দাঁড়িয়েছে, তা সহজেই অনুমান করে নেওয়া যায়।