এক যুগান্তকারী পদক্ষেপে, ভারতীয় রেল রেললাইনে বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে হাতি, সিংহ এবং বাঘেদের সুরক্ষার জন্য একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত ইন্ট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম (IDS) চালু করেছে

এক যুগান্তকারী পদক্ষেপে, ভারতীয় রেল রেললাইনে বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে হাতি, সিংহ এবং বাঘেদের সুরক্ষার জন্য একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত ইন্ট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম (IDS) চালু করেছে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাকোস্টিক সিস্টেম (DAS) ব্যবহার করে পশুদের উপস্থিতি শনাক্ত করে এবং লোকো পাইলট ও কন্ট্রোল রুমকে ০.৫ কিমি আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়, যা জীবন বাঁচাতে পারে।

বন্যপ্রাণ বাঁচাতে AI প্রযুক্তি

এই AI-সক্ষম ব্যবস্থাটি লোকো পাইলট, স্টেশন মাস্টার এবং কন্ট্রোল রুমের জন্য রিয়েল-টাইম সতর্কতা জারি করে, যার ফলে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। প্রাথমিকভাবে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের ১৪১ রেল কিলোমিটার (RKms) জুড়ে এই ব্যবস্থাটি প্রয়োগ করা হয়েছিল এবং এটি সফলভাবে কাজ করছে। এর কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে, ভারতীয় রেল জুড়ে আরও ৯৮১ রেল কিলোমিটারের জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, মোট কভারেজ ১,১২২ রেল কিলোমিটারে প্রসারিত হবে।

এই উদ্যোগটি বন্যপ্রাণী সুরক্ষা এবং নিরাপদ ট্রেন পরিচালনার প্রতি ভারতীয় রেলের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে। AI এবং DAS ব্যবহার করে, রেল কর্তৃপক্ষ পশুদের মৃত্যু রোধ করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা বৃহত্তর সংরক্ষণ লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এটি রেল চলাচল এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। AI-এর নজরদারিতে হাতি, সিংহ এবং বাঘেরা এখন আরও নিরাপদ পথ পাবে।

অসমে ৫টি হাতির মৃত্যু ট্রেনের ধাক্কায়

শনিবার N.F. রেলওয়ের লামডিং ডিভিশনের যমুনামুখ - কামপুর সেকশনে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পর নেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০৫০৭ ডিএন সাইরং - নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস একটি হাতির পালের সাথে ধাক্কা খায়, যার ফলে লোকোমোটিভ এবং ট্রেনের পাঁচটি কোচ লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনায় সাতটি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে, তবে কোনও যাত্রীর হতাহতের খবর নেই।

দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই N.F. রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার এবং লামডিং-এর ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার সহ ঊর্ধ্বতন রেল আধিকারিকরা এবং দুর্ঘটনা ত্রাণ ট্রেনগুলি উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

তিনি আরও জানান যে ঘটনাস্থলটি গুয়াহাটি থেকে প্রায় ১২৬ কিমি দূরে এবং এটি কোনও নির্দিষ্ট হাতির করিডোর নয়। তিনি যোগ করেন যে লোকো পাইলট হাতির পাল দেখে জরুরি ব্রেক কষেছিলেন, কিন্তু হাতিরা এসে ট্রেনে ধাক্কা মারে।

এদিকে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা শনিবারের এই মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় সাতটি হাতির (তিনটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং চারটি শাবক) মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আজকের এই মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় সাতটি হাতির (তিনটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং চারটি শাবক) মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি বন বিভাগকে এই উদ্বেগজনক দুর্ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করার এবং আমাদের বন্যপ্রাণী করিডোরগুলিকে আরও সুরক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছি, বিশেষ করে কম দৃশ্যমানতার মরসুমে।"

এছাড়াও, রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় শনিবার রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে লেখা একটি চিঠিতে এই ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে নির্দিষ্ট হাতির করিডোরে ট্রেনগুলি নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করার কারণে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। তিনি এই মৃত্যুকে দুর্ঘটনা না বলে মানুষের অবহেলার ফল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে দ্রুতগামী ট্রেনগুলি হাতি এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জন্য একটি পুনরাবৃত্তিমূলক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।