সংক্ষিপ্ত

  • মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাল্টা কড়া পদক্ষেপ ইরানের
  • নতুন করে ইউরেনিয়াম পরিশোধন করার সিদ্ধান্ত
  • ইউরোপীয় দেশগুলি নিষেধাজ্ঞার বিকল্পের সন্ধানে
  • এখনই সামরিক অভিযান নয়, জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট 
     

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাল্টা কড়া পদক্ষেপ নিল ইরান। ২০১৫ সালের পরমাণবিক চুক্তিকে অগ্রাহ্য করে ইরান নতুন করে পরমাণবিক চুল্লিতে অপরিশোধিত ইউরেনিয়ামের পরিশোধন আরম্ভ করেছে। চুক্তি অগ্রাহ্য করে বেশ কিছুদিন আগেই ইরান ৩০০ কেজির বেশি 'লো এনরিচ্ড' ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। পরপর এই দুই ঘটনা ২০১৫ সালের পরমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির ভবিষ্যতকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। এই 'লো এনরিচ্ড' ইউরেনিয়ামকেই পরিশোধন করে পরমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা হয়। 
 
২০১৫ সালে আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, চিন, ইংল্যান্ড, জার্মানি এবং ফ্রান্সের  মধ্যস্থতায় পরমাণবিক চুক্তি বা জেসিপিওএ সই করতে রাজি হয় ইরান। এই চুক্তির ফলে ইরান বাধ্য হয় তাদের পরমাণবিক কর্মসূচিতে হ্রাস টানতে। তার বিনিময়ে  ইরানের ওপর লাগু করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। চুক্তি মোতাবেক ইরান তাদের পরমাণবিক চুল্লিগুলি থেকে দুই তৃতীয়াংশ সেন্ট্রিফিউজ খুলে ফেলে। এছাড়াও চুক্তি মোতাবেক তারা ঘোষণা করে যে ইউরেনিয়ামের পরিশোধনের হার  কিছুতেই ৩.৬৭ এর বেশি বৃদ্ধি পাবে না। এছাড়াও আরাক পরমাণবিক কেন্দ্রের 'কোর'টিকেও তারা খুলে ফেলে, যার ফলে একপ্রকার অকেজো হয়ে পড়ে চুল্লিটি। 
   
হঠাতই তাল কাটে ২০১৮ সালে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন ইরান ক্রমাগত বিদেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে।  এছাড়াও তারা গোপনে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইলও তৈরি করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রশাসন আশঙ্কা প্রকাশ করে  ইরান তাদের পরমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকাঠামো গোপনে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, এবং মাত্র এক বছরের মধ্যেই তারা পরমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ফেলবে। এরকম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে চুক্তি মেনে চলা বোকামি। এর ফলে একদিকে যেমন ইরান ঠিকই তাদের পরমাণবিক অস্ত্র তৈরি চালিয়ে যাচ্ছে, ওপর দিকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ওঠার সম্পূর্ণ সুফল পাচ্ছে তাদের অর্থনীতি।  

অবশেষে  মে  ২০১৮  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে, এবং নতুন করে ইরানের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই নিষেধাজ্ঞার মারাত্মক প্রভাব পড়ে ইরানের অর্থনীতির ওপর। এক ধাক্কায় ইরানের তেল রপ্তানি দৈনিক ২৫ লক্ষ ব্যারেল থেকে নেমে আসে মাত্র ৩ লক্ষ ব্যারেলে! 

এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় ইরানের তরফ থেকে চুক্তির বাকি দেশগুলিকে আবেদন জানানো হয় সমাধান সূত্র বের করবার জন্য। এরই সঙ্গে ইরানের তরফ থেকে আগেই হুমকি দেওয়া হয়েছিল ,পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে তাঁরা ২০শতাংশের বেশি হারে অপরিশোধিত ইউরেনিয়ামের পরিশোধন আরম্ভ করে দেবে। একবার ২০শতাংশ হারে ইউরেনিয়ামের পরিশোধন হয়ে গেলে, পরবর্তী স্তরে অর্থাৎ ৯০ শতাংশ পরিশোধন করা ইরানের কাছে কিছুই নয়। পরমানবিক অস্ত্র প্রস্তুত করতে ৯০শতাংশ  পরিশোধিত ইউরেনিয়ামের প্রয়োজন। 

চুক্তির বাকি দেশগুলি অবশ্য ইরানের সঙ্গে এখনই সমস্ত সম্পর্ক শেষ করে দিতে রাজি নয়। ইউরোপীয় দেশগুলির তরফ থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে এড়িয়ে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করার লক্ষ্যে ইন্সটেক্স বলে একটি অর্থনৈতিক মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ইরান জাত মূল পণ্য হল পেট্রলিয়াম। ইন্সটেক্সের মাধ্যমে যেহেতু কেবলই জল, ওষুধ প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীরই লেনদেন হচ্ছে, তাই এর ফলে তাদের অর্থনীতিতে কোনও সুফল পড়বে না বলাই বাহুল্য। গোটা প্রক্রিয়াটিকে সাধুবাদ জানিয়েও ইরানের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলি এই সমস্যা সমাধানে আরও বেশি অবদান রাখতে সক্ষম।   

ইতিমধ্যেই সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন ইরান আগুন নিয়ে খেলছে। তবে তিনি এও জানান যে ইরানের বিরুদ্ধে এখনই কোনও সামরিক অভিযান তিনি চাইছেন না। 
কিছুদিন আগেই হরমুজের কাছে একটি মার্কিন ড্রোণ বিমানকে গুলি করে নামায় ইরান, তারপর থেকেই জল্পনা চলছিল আমেরিকার ইরান আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিবৃতি যে সেই জল্পনায় জল ঢাললো তা বলাই বাহুল্য।