সংক্ষিপ্ত
- প্রথম দিন থেকেই বোঝাপড়ায় ঘাটতি, জোট সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল
- সিদ্দারামাইয়া সহ অধিকাংশ কংগ্রেস নেতা জোটের বিপক্ষে ছিলেন
- কুমারস্বামীর হয়ে লড়ে যান একমাত্র ডি কে শিবকুমার
- আগামী দিনে কি হবে জোটের ভবিষ্যৎ- সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল
ঘড়িতে তখন রাত দশটা। কোনও ক্রমে টিকে রয়েছে জোট সরকার। বিধানসভায় আস্থা ভোটের দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিজেপি বিধায়কেরা। এমন সময় বিধানসভার মাইক্রোফোনে স্পষ্ট ধরা পড়ল পরিষদীয় দলনেতা সিদ্দারামাইয়ার উক্তি- "রাজিনামে কট্টু হোগালু হেলি", যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় সরকার সামলাতে না পারলে কুমারস্বামীকে বলো পদত্যাগ করে চলে যেতে! দলীয় সতীর্থের প্রতি করা এই ছোট্ট তির্যক উক্তিটি মনে হতেই পারে সাময়িক হতাশার বহিঃপ্রকাশ, কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই উক্তিই প্রমাণ করে দেয় যে জোট সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল। প্রথম দিন থেকেই প্রভূত পরিমাণে মনন্তর এবং মতান্তর ঘটেছে দুই দলের মধ্যে। পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌঁছয় যে কুমারস্বামী সাংবাদিক সম্মেলনে কেঁদে ফেলে বলেন কংগ্রেস তাঁকে সরকার চালাতে দিচ্ছে না। সে যাত্রায় কোনক্রমে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে পারলেও, ঝুলি থেকে বেড়াল বেড়িয়ে পড়েছিল ।
সরকার গঠনের প্রথম দিন থেকেই পারস্পরিক বোঝাপড়া মোটেও মসৃণ ছিল না দুই দলের মধ্যে, যা এরকম বহু ছোট ঘটনার মাধ্যমে বারবার সামনে এসে পড়েছে। একটি মহল থেকে এমনও অভিযোগ করা হয়েছে যে কংগ্রেস প্রথম থেকেই সরকার বাঁচানোর ব্যাপারে আন্তরিক ছিল না। প্রসঙ্গত বহু কংগ্রেস বিধায়ক জোট সরকারের পতনের পরে রীতিমত আনন্দ প্রকাশ করেন বলেও কংগ্রেস সূত্রে দাবি।
এক বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার দাবি জেডিএস-এর সঙ্গে জোটের ফলে কংগ্রেসের প্রভূত পরিমাণে রাজনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। কেবলমাত্র দেবেগৌড়া পরিবার এবং কংগ্রেসের ডি কে শিবকুমার ছাড়া এই জোটের ফলে কেউই লাভবান হননি। তিনি আরও দাবি করেন যে রাজ্যে, বিশেষ করে 'ওল্ড মাইসোর' অঞ্চলে জোটের ফলে কংগ্রেসের সংগঠনে ব্যাপক ধস নামে। কংগ্রেসের অপর একটি সূত্রের দাবি, লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরেই দলের একটা বড় অংশ জেডিএসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে দলের ভেতরেই চাপ বাড়াচ্ছিলেন।
২০১৮ সালের মে মাসের নির্বাচনের পরে বিজেপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে কংগ্রেস এবং জেডিএস জোট সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হাইকমান্ডের সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে প্রথমে সহমত না হলেও পরে তা মেনে নেন সিদ্দারামাইয়া সহ রাজ্য কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। যার ফলে মাত্র ৩৭ জন বিধায়ক নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর মসনদে বসেন কুমারস্বামী।
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হজম করতে বাধ্য হলেও, সিংহভাগ কংগ্রেস নেতাই প্রকাশ্যেই বহুবার তাঁদের অপছন্দের কথা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সমস্যাটা কিন্তু একতরফা নয়! জেডিএসও প্রথম থেকেই কংগ্রেসের সদিচ্ছা সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। কুমারস্বামী এবং তাঁর পিতা দেবেগৌড়া বহুবার কংগ্রেসের সম্পর্কে তাদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন মিডিয়ার সামনে। একমাত্র ডি কে শিবকুমার ছাড়া কোনও কংগ্রেস নেতার সঙ্গেই তাদের সুসম্পর্ক ছিল না।
মাত্র দেড় বছরের মধ্যে এই সম্পর্কের ফাটল নজর এড়ায়নি বিজেপির অভিজ্ঞ 'ভোট ম্যানেজারদের'। পারষ্পরিক বোঝাপড়ার এই গলদকেই কাজে লাগান তাঁরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌঁছয় যে সিদ্দারামাইয়ার নিজের হাতে তৈরি বিধায়কেরাও তাঁর ন্যুনতম কোনও অনুরোধ রাখতে রাজি হননি একটা সময়! ভবিতব্য তখনই লেখা হয়ে গিয়েছিল। যেটুকু আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল সেটিরও অবসান ঘটে গিয়েছে মঙ্গলবার।
রাজনৈতিক মহলে এই মুহূর্তে যেই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে সেটি হল আগামী দিনে কংগ্রেস জে ডি এস জোটের ভবিষ্যৎ। সরকারের পতনের সাথে সাথেই সেটিরও অবসান ঘটবে, না বিধানসভার ভেতরে এবং বাইরে শক্তিশালী বিরোধীর ভূমিকা পালন করবে তারা সেটিই এখন লাখ টাকার