সংক্ষিপ্ত
পরাধীন ভারতবর্ষের বুকে এক কুখ্যাত হত্যাকাণ্ড এই জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড। আজ থেকে প্রায় ১০২ বছর আগে ব্রিটিশ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল ইংরেজরা। বছর ঘুরে গেলেও সেই ক্ষত আজ ও ভুলতে পারে নি মানুষ।
ব্রিটিশ সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি অত্যাচারী শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার মুখ দেখেছে ভারত। এরপর মাঝে চলে গেছে অনেকগুলো বছর। বর্তমানে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে দেশ। তবে ইতিহাসের ভয়ঙ্কর কিছু ঘটনা আজ ও দগদগে দেশবাসীর হৃদয়ে। ঠিক যেমন, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড। প্রায় ১০২ বছর আগে এক নির্মম হত্যালীলার সাক্ষী হয়েছিল গোটা দেশ, যা পাঞ্জাবসহ সারা দেশে এমন প্রভাব ফেলেছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন।
ইতিহাসবিদরা মনে করেন এই ঘটনার প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের এই একটি ঘটনা দেশের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে বলে মনে করেন তারা। এমনকি অনেক ইতিহাসবিদ বলেছেন যে এই ঘটনাটি ভারতের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে একটি নতুন দিক দিয়েছেন এই জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড।
আরও পড়ুন- কলেজিয়ামের মত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া বিচারপতি নিয়োগ সম্ভব নয়-প্রধান বিচারপতি
আরও পড়ুন- চিনকে চমকে লাদাখে শক্তিশালী ভারত, সফল উৎক্ষেপণ অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইলের
আরও পড়ুন- দড়ি ছিঁড়ে পড়ে মৃত আরও ১, দেওঘরের রোপওয়ে দুর্ঘটনায় মৃত চার- শেষ হল উদ্ধারকাজ
ঠিক কী হয়েছিল সেদিন?
১৯১৯ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পাঞ্জাব যাওয়ার পথে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে আহমেদাবাদের শিল্প শ্রমিক এবং পাঞ্জাবের সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সরকার গান্ধীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এর পরও বিক্ষোভ কমেনি। ধর্মঘটে এবং বিক্ষোভের লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় সরকারী দপ্তর এবং যানবাহন। সাদা চামড়ার ইউরোপীয় কর্মকর্তা এবং অধিবাসীদের উপরও ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তাদের উপরও আক্রমণ করা হয়। এরপর ১৩ তারিখ ব্রিটিশ দমনমূলক আইন রাওলাট আইনের প্রতিবাদে দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জালিয়ানওয়ালাবাগে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিল। সেখানেই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে উপস্থিত জনগণের উপর নির্মমভাবে গুলি চালানো হয় এবং গুলি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই হত্যালীলা জারি থাকে।
কতজন মারা গেছিলেন?
এই হত্যাকাণ্ড ভারতের ইতিহাসে অন্যতম নিষ্ঠুর একটি ইতিহাস। কারণ এদিন ওই জায়গা থেকে পালানোর জন্য কেবল একটিই পথ খোলা ছিল এবং অসহায় অবস্থায় মানুষের উপর গুলি চালিয়েছিল বর্বর ইংরেজ সৈন্যদল। এই গণহত্যায় কতজন নিহত হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এদিন একটানা ১৫-২০ মিনিট ধরে ১৬৫০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাত্র ৩৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে অনেকেই মনে করেন আসলে সংখ্যাটা ১০০০-এর ও বেশি।
এই ঘটনার প্রভাব কী ছিল?
এই হত্যালীলা গোটা দেশে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এই ঘটনার ফলে তরুণদের মধ্যে এতটাই ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল যে ভগৎ সিং-এর মতো বিপ্লবীদের মধ্যে দেশসেবার বীজ রোপিত হয়েছিল। সেইসঙ্গে গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন ব্যাপক সাফল্য পেতে শুরু করে। এই ঘটনার পর দেশে-বিদেশে সর্বত্র ইংরেজ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে, 'এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ভারতে যে মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় তা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে সবার হৃদয়কে আন্দোলিত করে।সরকারের নগ্ন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।'
স্বাধীনতার ভিত্তি কী ছিল?
এই গণহত্যা যে ভারতের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলন যেভাবে বিপুল পরিসরে ভারতীয় জনগণের প্রতিটি অংশের সমর্থন পেয়েছিল, তা স্বাধীনতা আন্দোলনকে এক নতুন দিক দিয়েছিল। যেখানে নতুন মানুষ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। নেতাদের আস্থা অনেক বেড়ে যায়।