সংক্ষিপ্ত
গ্যালওয়ানে সোমবার রাতে ভারতীয় ও চিনা সেনার সংঘর্ষ
উত্তেজনা বাড়তে থাকে রবিবার থেকেই
চিনা সেনারা ভারতীয় ভূখণ্ডে তৈরি করেছিল ক্যাম্প
ক্যাম্প ভেঙেদেয় ভারতীয় সেনা
পূর্ব লাদাখের গ্যালওয়ান উপত্যকায় কী হয়েছিল সোমবার রাতে? কীভাবে আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশের অখণ্ডতা বাজায় রাখতে পেরেছিল ভারতীয় সৈন্য? সেনাবাহিনীর সূত্র থেকে পাওয়া সেই তথ্যই দেখে নিন এক ঝলকে।
এক নজরে গ্যালওয়ানঃ
প্রায় এক মাস ধরেই উত্তেজনা রয়েছে ভারত-চিন সীমান্তে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই দেশের মধ্যেই সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে কথাবার্তা চলছে। সেইমত দুই দেশই লাইন অব অ্যাক্চুয়াল কন্ট্রোল থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছিল।
চলতি সপ্তাহ আবারও ফিরে আসে চিনা সৈন্যরা। ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে ক্যাম্প তৈরি করে। ওই ক্যাম্প সরিয়ে নিতে বলে ভারত। সেনা সূত্রে খবর তাতে রাজি হয়নি চিনের পিপিলস লিবারেশন আর্মি। তারপরই থেকে উত্তেজনার সূত্রপাত।
১৪জুন রবিবার রাতের দিকেও চিনা সেনারা ভারতীয় সেনাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে। বাধা দেয় পেট্রোলিং-এ।
পরের দিন অর্থাৎ ১৫ জুন সোমবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সীমান্ত পরিস্থিতি। গ্যালওয়ান নদীর একটি উঁচু অংশে দুই দেশের সেনারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি ক্রমশই জটিল আকার নেয়। সেই সময় ভারতীয় সেনাদের গ্যালওয়ান নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।
চিনা সেনাদের ভারতীয় ভূখণ্ড খালি করতে বলা হয়। কিন্তু চিনা সেনারা রাজি না হওয়ায় বিহার রেজিমেন্টের কর্নেল সন্তোষ বাবুর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিরস্ত্র একটি দল টহল দেওয়ার পাশাপাশি চিনা সেনাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য যাত্রা শুরু করে।
কিন্তু আলোচনায় কোনও লাভ হয়নি। চিনা সেনারা ফিরে যেতে অস্বীকার করে। পাশাপাশি সীমান্তে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তোলে।
সেই সময়ই ভারতীয় সেনা প্রতিনিধিদের ওপর বোল্ডার, কাঁটাতারের মোড়ান পাথর, কাঁটাযুক্ত রড দিয়ে হামলা চালায়। পাল্টা জবাব দেয় ভারতীয় সেনাও।
চিনা সেনাদের আঘাতে প্রথম দিকেই জখম হন কর্নেল সন্তোষ বাবু। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ভারতীয় সেনারা কর্নেল ও এক হাবিলদারকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু বাকিদের সেখানেই রেখে যায়।
প্রায় ৪০ মিনিট পর এক মেজরের নেতৃত্বে আবারও ঘটনাস্থলে যায় ভারতীয় সেনার একটি দল। তারপর আবারও শুরু হয় হাতাহাতি। সেই সময়ই ভারতীয় সেনারা চিনা পোস্টটিকে গুঁড়িয়ে দেয়। অতর্কিতে হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে চিনা সেনার দল।
ভারতীয় ও চিনা সেনার হাতাহাতি প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলেছিল। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় রাতের অন্ধকারেও ভারতীয় সেনারা দেশের অখণ্ডতা বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন।
মধ্যরাতে থেমেছিল লড়াই।
গ্যালওয়ান নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেনাদের নিথর দেহ। যাঁরা গুরুতর চোট পেয়েছিলেন তাঁরা সকলেই মারা গিয়েছিলেন বলে সেনা বাহিনী সূত্রের খবর।
লে-র সেনা হাসপাতালে ভারতীয় শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে সহযোদ্ধারা। ২০ জন সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে।
সোমবার রাতে গ্যালওয়ান উপত্যাকায় চিনা সেনার সঙ্গে হাতাহাতিতে ভারেত ২০ জন বীর জওয়ান শহিদ হয়েছেন। ভারতের দাবি চিনের পিপিলস লিবারেশন আর্মির প্রায় ৪০ সেনা হতাহত হয়েছে। দুই দেশের পক্ষ থেকেই দাবি করা হয়েছে গ্যালওয়ানের সেনা সংঘর্ষে কোনও আগ্নায়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়নি কোনও বোমাও। ১৯৬৭ সালে নাথুলা পাসের পর এটাই ভারতীয় ও চিনা সেনাদের মধ্যে সবথেকে বড় হিংসাত্মক ফেসঅফ। সেই সময় ৮০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল। ৩০০ চিনা সেনার মারা গিয়েছিলেন।