সংক্ষিপ্ত

  • গালওয়ান উপত্যকায় অধিপত্য বিস্তারের লড়াই
  • চিন ও ভারতের মধ্যে বাড়ছে সীমান্ত উত্তাপ
  • আকসাই চিন থেকে এসেছেন গালওয়ান নদী 
  • এই এলাকায় ভারত একটি রাস্তা তৈরি করেছে 
     

গালওয়ান নদীর প্রবাহ নিয়ে চীন ও ভারতের বিরোধ বহুকালের। অনেকে বলেন, নদীটি চীনের আকসাই এলাকা থেকে বেরিয়ে যেভাবে ভারতের লাদাখ অঞ্চলে ঢুকেছে তাতে আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক নদীর অববাহিকার একাংশের ওপর চীনের দাবি আইনসঙ্গত। তাদের কথা অনুযায়ী; সেই অববাহিকায় রাস্তা তৈরি করে ভারতই যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে। তবে ভারত চীন সীমান্ত সমস্যা রয়েছে অনেক আগে থেকেই। তাছাড়া স্বাধীনতার পর থেকে ভারত বেশ কয়েকটি ছোট বড় যুদ্ধে জড়িয়েছে। নানা সমস্যার মধ্যে ভারতের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ দারিদ্র্য ও দুর্নীতি। তবু যেন মনে হয় যুদ্ধের ইচ্ছা ভারতের খুবই প্রবল। কারণ কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা স্বত্বেও ভারত পারমাণবিক অত্যাধুনিক অস্ত্রের জন্য জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে। করোনা মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যখাতের চেয়ে বহুগুণ গুরুত্ব পায় সামরিক ক্ষেত্রে। প্রসঙ্গত, লাদাখ সীমান্ত নিয়ে চীন-ভারত বিরোধ যখন তুঙ্গে তখন থেকেই যুদ্ধ লাগে লাগে একটা অবস্থা কিন্তু তৈরি হয়ে যায়। এর পাশাপাশি একটা প্রশ্নও জেগে ওঠে; যুদ্ধ কি সত্যি শুরু হবে? যুদ্ধ হলে তা কত বড় যুদ্ধ, কে সেই যুদ্ধে জিতবে? কেবলমাত্র প্রশ্ন নয় রীতি মতো তর্ক বিতর্ক।

প্রথমত প্রশ্ন যুদ্ধ হবে কি না? বস্তুতপক্ষে এর উত্তর অর্থ্যাত হ্যাঁ কি না নির্ভর করছে কতক্ষণ ভারত তার মেজাজ ধরে রাখতে পারবে তার ওপর। তারপর এসে যায় ১৯৬২ সালের কথা। সে দিনের তুলনায় চীন আজ যেমন শক্তিশালী, ভারতও উত্তর সীমান্তে অনেকটাই ক্ষমতাশালী। তবে আরেকটি ঘটার সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, ভারতকে একসঙ্গে অন্তত দুটি পক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। চীনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম দিক দিয়ে পাকিস্তানও আক্রমণ যে শানাবে সেটা ধতে রাখাই ভাল। 

এমনকি পাকিস্তান এবং চীন পরস্পর সামরিক শক্তি ভাগাভাগিও করতে পারে। এরকম একটা যুদ্ধ মানে বেশ বড়সড় যুদ্ধ। সেটা হলে হার জিতের চেয়েও বড় কথা ভারতের অর্থনীতি যথেষ্ট আঘাত পাবে। যদিও পাকিস্তানের অর্থনীতি বলতে তেমন কিছুই নেই। অন্যদিকে চীনের অর্থনীতিতে আঘাত করার শক্তি ভারতের নেই, যদি না শেষমেষ পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার হয়। লক্ষ্যণীয়; দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি উত্তেজনায় প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে চীন। গত দু’দশক চীন বাণিজ্যকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়ায় সরাসরি যুদ্ধ থেকে দূরে থেকেছে। তবে ৪৫ বছর পর ভারতের সঙ্গে চীন সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। অন্যদিকে চীন ও ভারতের মধ্যে লাদাখে সেনা সমাবেশ নিয়ে আকচা আকচির মধ্যেই নেপালের সঙ্গে ভারত জড়িয়ে পরেছে মানচিত্র বিতর্কে। এছাড়া গত এক বছরজুড়ে বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত আলোচিত হয়েছে কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল নিয়ে। যা নিয়ে পাকিস্তান ক্ষোভ উগড়ে যাচ্ছে দিবারাত্র। করোনা প্রাদুর্ভাব না ঘটলে এ বছর ভারতে সাংহাই করপোরেশনের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হত। যেখানে চীনের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান-ভারতের সম্পর্কের বরফ গলার সম্ভাবনা ছিল। চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল দশ হাজার কোটি ডলারের। 

ব্রিকসের মাধ্যমে দু’দেশ আন্তর্জাতিক অনেক ইস্যুতে একমত ছিল। ভারতের রেললাইন নির্মাণসহ ফোনের বাজারের ৬৫% ছিল চীনের দখলে। কিন্তু রাতারাতি চীনের
শতাধিক অ্যাপ সহ সবই বাতিল হয়েছে। তার আগে চীনের প্রস্তাবিত বিআরআই প্রকল্পে ভারতের অংশ না নেওয়া চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের অতিরিক্ত আমেরিকার গা ঘেঁষাঘেঁষি এবং করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে ট্রাম্পের নেতৃত্বে যে চীন বিরোধীতা তাতে যে চীন ক্ষুব্ধ হবে তা বলাই বাহুল্য। এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত-সহ সাতজাতি ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ভারতে চীনা বিনিয়োগ নিষিদ্ধ হয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন কোম্পানিকে চীন ছেড়ে ভারতে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে মোদি সরকার। আরও একটি রাজনৈতিক ইস্যু তাইওয়ান। চীন তাইওয়ানকে তার নিজের ভূখণ্ড দাবি করে। তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক বা আলাদা অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখা দেশগুলোকে সন্দেহের চোখে দেখে চীন। তার মধ্যে পড়ে ভারতও। 

গত দুই দশকে চীন ভারত সম্পর্কের যতটুকু উন্নতি ঘটেছে সম্প্রতি ভারতের সরাসরি চীনবিরোধী বলয়ে ঢুকে পড়া চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। ফলে ক্ষুব্ধ চীন ভারতকে শায়েস্তা করা জন্য সীমান্ত সংঘাতকেই বেছে নিয়েছে। আর এটা সবথেকে বেশী জানে ভারত। তাই এটা বুঝতে হবে সীমান্তে সেনা সমাবেশ নিয়ে সংঘর্ষ সীমান্ত থেকে বেশী দূর এগবে না। চিন-ভারত যুদ্ধ লাগছে বলে যে আওয়াজ তা আসলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা।