সংক্ষিপ্ত

জন ধন- আধার, স্বচ্ছ ভারত, মেক ইন ইন্ডিয়া, আয়ুষ্মান ভারতের মতো প্রকল্পগুলি কি  করতে পেরেছে ভারতবর্ষের প্রধান সমস্যাগুলির সুরাহা ? বিশ্লেষণে এশিয়ানেট .

২০১৪ তে সংখ্যাগরিষ্ট দল  হিসাবে ভারতবর্ষের মসনদে বসার পর প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেশ কিছু সিদ্ধান্ত জনহিতকর বলে যেমন  খুব সমাদৃত হয়েছে তেমন  বেশ কিছু কার্যকলাপ সমালোচিতও হয়েছে।  প্রধানমন্ত্রীর নোটবন্দি এবং ৩টি  কৃষিবিল আইন পাশের মতো কিছু মারাত্মক সিদ্ধান্ত যেমন ভারতবর্ষের অনেককেই ভাবিয়েছে, তেমন জন ধন- আধার, স্বচ্ছ ভারত, মেক ইন ইন্ডিয়া, আয়ুষ্মান ভারত, মন কি বাত, আত্মনির্ভর ভারত, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও, নমামি গঙ্গে ইত্যাদি প্রকল্পগুলি আবার বেশ কিছু মানুষের কাছে প্রশংসিতও হয়েছে।  বিশ্লেষকরা  অবশ্য এই প্রতিটি প্রকল্পেরই চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। আর তাতে উঠে এসেছে সব প্রকল্পেরই কিছু ভালো দিক আর কিছু মন্দ দিক।  


জনধন - আধার = জন ধন-আধার-মোবাইল- এই তিনটিকে একত্রিত করার একটা প্রচেষ্টা করা হয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। সরকারি ভর্তুকি ফাঁস করতেই ভারতীয়দের ব্যাঙ্ক  অ্যাকাউন্ট, মোবাইল নম্বর এবং আধার কার্ড লিঙ্ক করার এই উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। এই প্রকল্পের ফলে একটা বিরাট সংখ্যক ভারতীয় জনগণ  ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় আসে। ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় আসার ফলে রাষ্ট্রের আর্থিক পরিকাঠামো শক্ত হয়। প্রত্যেকটি জনগণের সঞ্চিত অর্থ রাষ্ট্রায়াত্ত হওয়ায় তাদের অর্থ সুরক্ষিতও  থাকে এবং সেই অর্থ রাষ্ট্রের কাজে লাগতে পারে এবং সর্বোপরি এই অর্থ বাজারে খাটানোর ফলে যে অতিরিক্ত সুদ পাওয়া যায় তা সমগ্র দেশবাসীর মধ্যে সমবন্টন করা যায়।  

স্বচ্ছ ভারত অভিযান - তিনি এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ২ রা অক্টোবর ২০১৯ এর মধ্যে একটি 'পরিচ্ছন্ন ভারত" গড়ে তোলা । ভারতবর্ষের বেশিরভাগ  রাস্তাঘাট ও দোকানপাটই ছিল অপরিষ্কার। পথের যেখানে সেখানে স্তূপাকৃতি আবর্জনা , পরিবেশ দূষণ তো করতোই তার সাথে মানুষের মনেও ফেলতো একটি নেতিবাচক প্রভাব।  ভারতবর্ষে আসা বিদেশি পর্যটকদের কাছেও  এটি ভারতবর্ষ সম্পর্কে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতো।  তাই সমস্ত আবর্জনা সাফ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্বচ্ছ ভারত গোড়ার তোলার উদেশ্যেই প্রধানমন্ত্রী এমন একটি প্রকল্প আনেন । স্বচ্ছ ভারত অভিযান হল ভারত সরকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিচ্ছন্নতা অভিযান। শ্রী নরেন্দ্র মোদী ইন্ডিয়া গেট থেকে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানের  নেতৃত্ব দেন, যাতে সারা দেশের প্রায় ত্রিশ লক্ষ সরকারি কর্মচারী যোগ দিয়েছিলো। 

মেক ইন ইন্ডিয়া =মেক ইন ইন্ডিয়া হল ভারত সরকারের একটি প্রধান জাতীয় কর্মসূচি। এটি প্রধানত  বৃহৎ সংখ্যক উৎপাদনের পরিকাঠামোকে গড়ে তোলার উদ্যেশ্যে বানানো হয়েছিল।দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এন্ট্রেপ্রেনারদের উৎসাহ দিতেই এমন প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কথা ভাবা হয়।  বিভিন্ন নতুন উদ্ভাবনী ব্যবসাতে বিনিয়োগের সুবিধা করে দিয়েছিলো এই প্রকল্প।  এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের সাথে সাথে বিভিন্ন শ্রেণীর দক্ষতার বিকাশ ঘটেছিলো। সরকার অবশ্য দাবি করেছিল যে বিশেষত দেশের মেধাসম্পদ রাখার উদ্দেশ্যেই এই প্রকল্প।  

আয়ুষ্মান ভারত -  এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি গরিব  পরিবারকে  এককালীন ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয় সরকারের তরফ থেকে  যা তারা  চিকিৎসার খাতেই খরচ করতে পারবেন।  অনেক গরিব মানুষই বাস করেন যারা  হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কি করবেন বুঝে উঠতে পারেন না।  চিকিৎসা করাতে গেলেও  খরচের  অঙ্কটা শুনে আবার পিছিয়ে আসেন।২০১৪র আগে  এই কারণেই প্রতি বছর  বিনা চিকিৎসায় মরতে হতো অনেক গরিব মানুষকে।  
আয়ুষ্মান ভারত-এর এই  নির্ধারিত বেনিফিট কভার থেকে প্রতিটি পরিবার প্রতি বছরে ৫ লাখ টাকা করে পান । পরিবারের কেউ যাতে বাদ না পড়েন তা নিশ্চিত করার জন্য এই প্রকল্পে পরিবারের আকার এবং বয়সের কোনও সীমা থাকবে না।  হাসপাতালে ভর্তির আগে থেকে পরবর্তী খরচ সবকিছু  অন্তর্ভুক্ত থাকে এই বীমায় ।  

মান কি বাত = মান কি বাত হলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দ্বারা সঞ্চালিত একটি রেডিও প্রোগ্র্যাম।  অল ইন্ডিয়া রেডিও , ডিডি ন্যাশনাল , ডিডি নিউসের দর্শকদের উদেশ্য করেই এই অনুষ্ঠানটি করা হয়।  ২০১৪র ৩রা অক্টোবরে ম্যান কি বাতের প্রথম শোটি হয়েছিল।  এখনো পর্যন্ত এর ৯২ টি এপিসোড সম্প্রচারিত হয়েছে।  শেষ এপিসোডটি অর্থাৎ ৯২ তম  এপিসোডটি সম্প্রচারিত হয় ২০২২ র ২৮ সে অগাস্ট। ২০১২  সালের জুলাই মাসে রাজ্যসভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর একটি বিবৃতি অনুসারে প্রোগ্রামটির মূল উদ্দেশ্য হল "প্রতিদিনে সরকার নাগরিকদের স্বার্থে কি কি করছে সে বিষয়ে নাগরিকদের অবগত করা। অনুষ্ঠানটি ভারতের "প্রথম দৃশ্যমান  রেডিও প্রোগ্রাম।

আত্মনির্ভর ভারত - করোনা অতিমারীর সময় যেভাবে ভারত মন্দার মধ্যে দিয়ে গেছে ,তাতে দেশীয় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে মারাত্মক।  এরপর থেকেই এই ব্যাকংশ টি লোক মুখে প্রচলিত হতে শুরু করে। যদিও এই শব্দ ব্যবহৃত হতো  ২০১৪ থেকেই।  এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতীয় অর্থনীতিকে বিশ্বের অর্থনীতির সাথে যুক্ত করার একটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট অনুযায়ী; "মোদির এই  নীতির লক্ষ্য হল আমদানিযত দ্রব্যগুলিকে  অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রবেশাধিকার করতে না দেওয়া , কিন্তু একই সাথে ভারতীয়  অর্থনীতিকে উন্মুক্ত রাখা  এবং বিশ্বের বাকি অংশের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেন বা  রপ্তানি করা. 

ডিজিটাল ইন্ডিয়া -ডিজিটাল ইন্ডিয়া হল ভারত সরকারের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম যাতে ভারতকে ডিজিটালভাবে সক্রিয় করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।  এবং ভারতের এই ডিজিটাল উন্নয়ন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করানোর একটি সামগ্রিক প্রচেষ্টাও করা হয়েছে।মোদী বিশ্বাস করেন   ভারতবর্ষের মানুষের   এইরকম ডিজিটাল  ক্ষমতায়ন  সমাজ এবং অর্থনীতিকে নতুন দিগন্ত দেখাবে।  তাই তার অনুপ্রেরণায়ই এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য নানান রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ভারতের  ই-গভর্নেন্স উদ্যোগগুলি ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি নাগরিক-কেন্দ্রিক পরিষেবাগুলির উপর জোর দিয়ে বিস্তৃত সেক্টরাল অ্যাপ্লিকেশনের উপর নজর দিয়েছিলো। যার আধুনিকীকরণ হলো ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্প। 

বেটি বাঁচাও বেশি পড়াও = লিঙ্গ-নির্বাচিত গর্ভপাত বা কন্যা ভ্রূণহত্যা ভারতের কিছু রাজ্যে ছেলে শিশুদের বিপরীতে জন্ম নেওয়া মেয়েদের অনুপাতকে তীব্রভাবে হ্রাস করেছিল । আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে  গর্ভবতী মহিলার   গর্ভাবস্থার  ভ্রূণের লিঙ্গ করা তাই একসময় অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত  করেছিল সরকার  ।এছাড়াও  মেয়ে শিশুদের প্রতি বৈষম্য -ভারতবর্ষে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।  এর জন্য অবশ্যই দায়ী ছিল বেশ কিছু প্রথা।  যৌতুক প্রথা তাদের  মধ্যে অন্যতম। মেয়েদের বিবাহ দেবার সময় যৌতুক দেওয়ার বিষয়টির জন্য বেশিরভাগ পরিবারেই মেয়েদেরকে বোঝা হিসাবে গণ্য করা হতো।  এর ফলে ভারতীয় সমাজের এক বিরাট সংখ্যক মহিলা পিছিয়ে পড়েছিল।  তাদের অগ্রগতির জন্যই "বেটি বাঁচাও বেশি পরাও " প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করার কথা ভাবে সরকার "

নমামী গঙ্গে - ২০,০০০ কোটি টাকা খরচ করে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার জন্য নামামী গঙ্গে নাম এই প্রকল্পটির কথা ভাবা হয়।  এটি প্রধানত গঙ্গা সংরক্ষণ মিশন।  পলি মাটি জমে  গঙ্গাবক্ষে চোরা পরে গঙ্গার গভীরতা হ্রাস পেয়েছিলো।  এছাড়াও আসে পাশের কারখানার বর্জ্য পরে যে হরে গঙ্গা দূষিত হচ্ছিলো সেটি থেকে ভারতবর্ষের এই পবিত্র নদীকে সংরক্ষন করার তাগিদেই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করার কথা ভাবা হয় ভারত সরকার কর্তৃক।