সংক্ষিপ্ত
লাদাখে চিনা অনুপ্রবেশ একটি ভুল
চিন রীতিমত অস্বস্তিতে পড়েছিল
দক্ষিণেও চিনকে অস্বস্তিতে ফেলা যায়
সেক্ষেত্রে চাই বাহিনীর আত্মবিশ্বাস
জেনারেল সৈয়দ আটা হাসনাইনঃ লাদাখের সামরিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার আগে এই নিবন্ধে গত বছর শুরু হওয়া স্যান্ড অফ নিয়ে ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলি এবং একটি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়গুলি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আংশিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও আজও স্থবিরতা অব্যাহত রয়েছে পূর্ব লাদাখ সেক্টরে। তবে খুব কম ডি এককেলেশন হচ্ছে ওই এলাকায়।
লাদাখ, পৃথিবীর ছাদের নিকটবর্তী এলাকা। কিন্তু লাদাখের অশান্তি বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মহাসাগর ও ভূখণ্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলেছে। পর্বতমালার ঠিক যেখানে উপস্থিত তিব্বত আর জিনজিয়াং (চিনের সফটআন্ডারবিলি) এর সঙ্গে সুসংহত এবং ভারত মহাসাগরের (গিলগিট বাস্টিস্থানের তুলনা আরও বেশি স্থিতিশীল ) সবথেকে অনুকূল ওভারল্যান্জ সংযোগ প্রদানকে কৌশলগত গুরুত্ব দেয়।
'রক্তে ভেজা বাংলা চাই না', ভোট সন্ত্রাস নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা বলে মমতাকে নিাশানা রাজ্যপাল ধনকড়ের
চিন বুঝতে পেরেছিল যে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় পর্বতমালাগুলি বিচ্ছিন্ন। এর মধ্যে লাদাখ আরও বেশি বিচ্ছিন্ন। একটি জোর জবরদস্থির জন্য আদর্শ এলাকা হতেই পারে। তবে উত্তর মহিমাঞ্চলগুলি ভারত মহাসাগরের সঙ্গে একটি অভ্যন্তরীন সংযোগ স্থাপন করেছে। ভারতকে উত্তর দিকে হুমকি দেওয়া যেতে পারে ,তবে চিন এটা ভাবেনি যে ভারত তাকে দক্ষিণ সমুদ্র এলাকায় অস্বস্তিকর করে তুলতে পারে। যার মধ্য দিয়ে জ্বালানি পরিবহন লেনদেনগুলি প্রবাহিত করে এবং কনটেইনার ট্র্যাফিক প্রস্তুতিকৃত পণ্যগুলি বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যায়- এই এলাকা চিনের অর্থনৈতিক অবস্থার লাইফলাইন।
বেজিং সচেতন ছিল যে নয়াদিল্লির সুরক্ষা পদ্ধতিতে মহাদেশীয় ও প্রকৃতভাবে ভারতীয় সুবিধে সামুদ্রিক ক্ষেত্রে রয়েছে। মাইন্ডসেটগুলি পরিবর্তন করা সহজ নয়, কারণ মৌলিকভাবে বিভিন্ন স্তরের সমুদ্রে সামুদ্রিক শক্তি কুইড প্রয়োগের সক্ষমতা সম্পর্কে ভারতের আস্থা তুলনামূলকভাবে কম। এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর আত্মবিশ্বাসের অভাব নয়। পুরো দেশটির কৌশলগত সম্প্রদায় বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক পুননির্মাণের ও মার্কিন কৌশলগত উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুটি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থানান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই মানসিকতাটি কাটিয়ে উঠতে হবে।
'one nation one ration card' দ্রুত চালু হবে রাজ্যে, তেমনই ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী মমতার ...
মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইন্দো প্যাসিফিকের দিকে মনোনিবেশে জড়িত রিসেটের চলমান উত্তরণে জাপান তাইওয়ান দক্ষিণ কোরিয়া আর অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দেশগুলির মধ্যে ইতিমধ্যে পারস্পরিক সুবিধের জন্য আমেরিকার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা চুক্তি রয়েছে। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার।
ইন্দো প্যাসিফিকের সুরক্ষা ম্যাট্রিক্সের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরেও ভারত তার কৌশলগত স্বায়ত্বশাসন ধরে রেখেছে। তবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যখন সে পূর্বের ন্যাটো কোয়াড হিসেবে অবির্ভূত গতে পারে, তাতে প্রবেশের চেষ্টা, আলোচনা ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই হাইপোথিসিসটি পরিস্থিতির স্থির করে দেয় যতক্ষণ মধ্যপাচ্য ও আফগানিস্তান ফোকাসে থাকবে ততক্ষণ চিন ভারত থেকে কোনও হুমকি বুঝতে পারবে না। সাম্প্রতি বছরগুলিতে এটি ভারত মার্কিন সম্পর্ক সামাজিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে ছাড়িয়ে কৌশলগতভাবে উন্নতি করেছে, যা নানা ভাবে প্রমানিত হয়েছে।
মস্কো ও বেজিং সঙ্গে সুদৃঢ়় সম্পর্কসহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া ভারত যতক্ষণ আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের দিকে আত্মবিশ্বাসের মধ্যে থেকে যায় ততক্ষণ চিন সন্তুষ্ট ছিল। চিনের সবথেকে ভয় ছিল একটি ইন্দো মার্কিন জাপান সমীকরণ - যা একটি সুরক্ষা বোঝার জন্য তৈরি হয়েছিল। তবে সমুদ্রের রাজত্বকে কেন্দ্র করে এই স্কোয়াড এর আগে খুব বেশি অগ্রসর হয়নি। চিন আশাবাদী ছিল যে এই স্কোয়াডে অস্ট্রেলিয়া যুক্ত হবে না বলে। ২০১৭ সালে ডোকলাম-এর সময় চিনের কাছে এই ধারনা কিছুটা অস্পষ্ট ছিল। তবে সেই সময় থেকেই ভারত প্রভূত আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে গেছে।
বিশ্বকে নিজের শক্তি প্রদর্শন করতে চাইছিল চিন। সেটি ছিল বাহ্যিক দিক। তবে এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির বিরুদ্ধে 'উলফ ওয়ার কূটনীতি' গ্রহণ করেছিল। তবে শুধুমাত্র ভারতের বিরুদ্ধেই সীমিত সামরিক জবরদস্তি করেছে। তার একটি মাত্র কারণ হল- ভারতকে বেশি ব্যতিব্যস্ত করলে মার্কিন বিরোধের সমূহ সম্ভানা ছিল। যা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল ছিল চিন। আর তাই আমেরিকাকে না ঘাঁটিয়েই ভারতের ওপর চাপ তৈরি করতে চেয়েছিল চিন।
চিন ভারতে হিমালয়ের উঁচুতে ও বিচ্ছিন্নভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে মিলিত অবস্থায় খুঁজে পেয়েছে যে ভারত ভারসাম্য শক্তি হিসেবে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বলে বৃহত্তর বিস্ফোরণের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
চিনের কৌশলগুত বিপর্যয় মূলক অভিপ্রায় হিসেবে মহামারিটি এখনও উপলব্ধি না করেই পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই সিরিজের ক্রিয়াকলাপ ২০২০ সালে উলফ ওয়ার কূটনীতির একটি প্যাটার্ন দেখিয়েছিল। দ্বিতীয়টি সংঘাতমূলত বক্তৃতা করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি দেওয়া আর কূটনৈতিক ক্ষেত্র সমালোচনা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
G-7 বৈঠকের নেতাদের হুঁশিয়ারি চিনের, ছোট দলগুলি কখনই বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ...
এটি তাইওয়ানসহ বেশ কয়েকটি দেশের জন্য উদ্বেগ তৈরি করেছিল। কূটনৈতিক জবরদস্তির সঙ্গে একরকম সীমিত সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। চিন জানত যে পুরো অঞ্চল জুড়েই রয়েছে সুরক্ষা। আর সমস্ত কিছু বিবেচনা করেই চিন সামরিক ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ দেয়নি। কিন্তু বর্তমানে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং এই বিষয়টির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। প্রশান্ত মহাসগরীয় এলাকায় চিন নতুন কৌশল নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এই এলাকায় চিনের কৌশল কী হবে সেটাই এখন দেখার।
ভারতের নিরাপত্তা ইন্দো প্যাসিফির ম্যাট্রিক্সে যোগদানের অর্থ বহুল সমুদ্র সামরিক সহযোগিতা ও চিনের অ্যাকিলিসের গোটার একটি আঘাত করা। পাকিস্তানের সঙ্গে চিন উত্তর সীমান্ত ভারতকে ক্রামাগত বিরক্ত করে যাচ্ছে। একইভাবে দক্ষিণ সমুদ্র এলাকাতেও তাই। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ মায়ানমার সকলের সঙ্গেই যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে চিন।
ভারতের পক্ষে সামুদ্রিক আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক অবস্থার উন্নতি করাও সেরা বাজি বলে মনে করা হয়। তবে এটি মহাদেশীয় সীমান্তেগুলিতে জবরদস্তির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করাও জরুরি। আনিবার্যভাবে আসা বিপদ থেকে চিনের রাজনৈতিক ও কৌশলগত উদ্দেশ্যকে সামরিক লক্ষ্যে রূপান্তরিত করা যাবে।
আমি শেষ অংশে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছিল যে ২০২০ সালে এপ্রিলে চিনের ভুল হয়ে গেছে। এরমধ্যে ভারতের চ্য়ালেঞ্জ রয়েছে কোটাড বা এজাতীয় কোনও ব্যবস্থার একজন গুরুত্বপূর্ণ ও আবদানকারী সদস্য হিসেবে থাকা এবং এখনও চিনকে সীমান্ত কোনও ভ্রান্ত ধারনাযুক্ত সামরিক অভিযান চালানো থেকে বিরত রাখা।
সম্ভবত কোনও পর্যায়ে এটি একটি শীর্ষস্থানীয় হতে পারে আর এটাই আমাদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ সামপিকভাবে আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে একা থাকব।
(লেখকঃ জেনারেল সৈয়দ আটা হাসনাইন (অবসরপ্রাপ্ত) শ্রীনগরের ১৫ কর্পসের প্রাক্তন কমান্ডার এবং বর্তমানে কাশ্মীরের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, এই কলামটি প্রথম নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ১৪ জুন ২০২০ প্রকাশিত হয়েছিল )