সংক্ষিপ্ত
মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে বরাই করে মোদী সরকার।
কিন্তু সেনাবাহিনীর উচ্চপদে মহিলাদের নিয়োগ সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিল তারা।
সেনাবাহিনীতে লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে হওয়া এক মামলায় এই কথা বলে কেন্দ্র।
এর পিছনে কী কারণ দেখালো কেন্দ্রীয় সরকার?
ক্ষমতায় আসার পর থেকে মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক কথা বলেছে মোদী সরকার। বিদেশ মন্ত্রক, প্রতিরক্ষামন্ত্রক থেকে অর্থমন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহিলাদের। প্রজাতন্ত্র দিবস থেকে শুরু করে সেনা দিবসের প্যারেডে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু, সেই মোদী সরকারই সুপ্রিম কোর্টকে জানালো সেনাবাহিনীর উচ্চ পদে মহিলা অফিসারদের নিয়োগ করা সম্ভব নয়, কারণ সেনার পুরুষ অফিসাররা এখনও তাদের কমান্ড মানতে প্রস্তুত নয়। এছাড়া মেয়েদের সাংসারিক দায়িত্বও থাকে।
অন্য কারণগুলি, তারা বলেছিলেন, সেনাবাহিনীকে কমান্ডিং পদে কেন বিবেচনা করা উচিত নয়, তা হ'ল গৃহকর্মী জীবন ও পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে নারীদের অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য 'বৃহত্তর ভূমিকা', পাশাপাশি তার অপহরণের ঝুঁকিও রয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টে সেনাবাহিনীতে লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে একটি মামলায় কেন্দ্র আদালতকে বলেছে, সেনার বিভিন্ন পদে থাকা অফিসাররা বেশিরভাগই পুরুষ। বাহিনীর সদস্যরাও তাই। এবং এঁরা মূলত গ্রামীণ পটভূমি থেকে আসা। তাই প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতিতে বিশ্বাসী এইসব পুরুষ সৈন্যের দল এখনও কমান্ডিং পদে মহিলা অফিসারদের মেনে নিতে মানসিকভাবে তৈরি নয়।
কেন্দ্রের তরফে আদালতে আরও যুক্তি দেওয়া হয়, গর্ভাবস্থার মতো শারীরিক বিষয়ের কারণে মহিলাদের দীর্ঘকাল কাজ থেকে দূরে থাকতে হয়। এছাড়া মহিলাদের 'যুদ্ধবন্দী' হওয়ার ঝুঁকিও থাকে, সরকার এবং সেনাবাহিনীর উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে। সেইসঙ্গে মেয়েদের বাড়ির কাজ করার চাপও থাকে। এইসব কারণেই মহিলাদের সেনাবাহিনীর উচ্চপদে নিযুক্ত করা যায় না।
কেন্দ্রের এইসব যুক্তির বিরোধিতা করে, মহিলা অফিসারদের পক্ষের আইনজীবী মীনাক্ষী লেখি ও ঐশ্বর্য ভাট্টি আদালতকে বলেন, সেনার মহিলা অফিসারদের মধ্যে অনেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমী সাহস দেখিয়েছেন। পাকিস্তানি এফ -১৬ বিমান-কে গুলি ধ্বংস করার জন্য গোটা ভারত জেনেছে উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের নাম। কিন্তু, তাঁকে দিকনির্দেশ করেছিলেন ফ্লাইট কন্ট্রোলার মিন্টি আগরওয়াল। এর জন্য তাঁকে 'যুধ সেবা পদক' দেওয়া হয়েছে। তার আগে মিতালি মধুমিতা যখন কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসে সন্ত্রাসবাদী হামলার সময় তাঁর সাহসিকতার জন্য 'সেনা পদক' পেয়েছিলেন।
সবশেষে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচুড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগীর বেঞ্চ রায় দেয়, যে কোনও ধরনের লিঙ্গ বৈষম্য নির্মূল করতে দুটি বিষয় প্রয়োজন - 'প্রশাসনিক ইচ্ছা এবং মানসিকতার পরিবর্তন'। যদি সরকারের ইচ্ছাশক্তি এবং মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে, তবে মহিলা অফিসারদের সেনাবাহিনীতে কমান্ড পদে নিযুক্ত করা যেতেই পারে। সেইসঙ্গে জানিয়েছে শুধু কমান্ডার নয়, যোদ্ধার মতো সেনায় আরও বেশ কয়েকটি পরিষেবা ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।