সংক্ষিপ্ত
আতঙ্কে মানুষ কত কিছুই না করে। আতঙ্ক যখন মানসিক রোগে পরিণত হয় তখন মানুষের মতো ভয়ঙ্কর প্রাণি আর হয় না। বেঙ্গালরুতে জোড়া খুনের ঘটনায় সামনে আসছে এমনই সত্য।
অফিসের বাইরে বেরিয়েছিলেন ফানিন্দ্র সুব্রহ্মণিয়াম এবং ভিনু কুমার। দুজনের একজন এয়ারোনিক্স মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড-এর এমডি এবং অন্যজন সিইও। বছরখানেক আগে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা এই সংস্থার পত্তন করেছিলেন ফানিন্দ্র ও ভিনু। কিন্তু, অফিসে যে তাঁদের জন্য যে ঘাতকরা অপেক্ষা করছিলেন তা তাঁরা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না। মঙ্গলবার বিকেলে যখন দুজনে অফিসে ঢোকেন, মুহূর্তের মধ্যে তাঁদের কেবিনে চড়াও হয় তিন আঁততায়ী তাদের হাতে থাকা ধারাল বড় দাঁ-র আঘাতে অফিসের মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন ফানিন্দ্র ও ভিনু।
বেঙ্গালুরু শহরের এই ঘটনা এই মুহূর্তে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে। পুলিশি তদন্তে যা উঠে এসেছে তাতে এই জোড়া হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সাবরিশ ওরফে ফেলিক্স বলে এক ব্যক্তি। ফানিন্দ্র ও ভিনু-র প্রাক্তন অফিসের সিনিয়র কর্মী ফেলিক্স। ফানিন্দ্র ও ভিনুর সঙ্গে ফেলিক্সের বেশ ভালোই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ফানিন্দ্র ও ভিনু যবে থেকে আগের সংস্থায় ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে এসে নতুন সংস্থা খোলার পর থেকেই ফেলিক্স নাকি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করছিল।
ফানিন্দ্র ও ভিনু-র আগের সংস্থাও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা নিয়ে কাজ করে। ফেলিক্সের মনে নাকি আশঙ্কা ছিল যে ফানিন্দ্র ও ভিনু তাদের কাস্টমার বেসকেও নতুন সংস্থায় গ্রাহক করাবে। সম্প্রতি ফেলিক্সের সংস্থা ব্যবসায়িক দিক থেকে ক্ষতির মুখ দেখতে শুরু করে এবং সেই সঙ্গে বহু গ্রাহক পরিষেবা ছেড়ে দিচ্ছেলেন।
ফানিদ্র্র ও ভিনু-কে আটকাতে না পারলে তাদের সংস্থার আরও ক্ষতি হয়ে যাবে বলে নাকি আশঙ্কা করছিল ফেলিক্স। আর সেখান থেকেই হয়তো ফেলিক্স হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র কষেছিল বলে মনে করছে পুলিশ। এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের পিছনেও যে কাহিনি উঠে এসেছে তা পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে।
জানা গিয়েছে, ফেলিক্সরা ২টি মোটরবাইক নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ফানিন্দ্র ও ভিনুর দফতরে যায়। তারা বাইরে আছেন জানাতে গেস্ট রুমে ফেলিক্স ও তার দুই সঙ্গী অপেক্ষা করতে থাকে। বিকেল ৪টার সময় ফানিন্দ্র ও ভিনু দফতরে ফিরে নিজেদের কেবিনে যান। যা ছিল দোতলায়। তিনতলায় কাজ করছিলেন সংস্থার ১০ কর্মী। আচমকাই তাঁরা এক তলা থেকে আর্তনাদ শুনতে পান। দৌঁড়ে নিচে নেমে ফানিন্দ্র ও ভিনু-র কেবিনে ঢুকে তাঁদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
রক্তাক্ত ধারালো বড় দাঁ দিয়ে ফেলিকস এবং তার সঙ্গীরা একের পর এক কোপ মারছিল ফানিন্দ্র ও ভিনু-র উপরে। কর্মীরা এগোতে গেলে ফেলিক্স তাদেরও খুন করার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। ফানিন্দ্র ও ভিনু পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, ভিনু এক তলার ফ্লোরে মুখ থুবড়ে পড়ে যান। ফানিন্দ দোতালার লবিতেই পড়ে গিয়েছিলেন। এই আতঙ্কের পরিবেশেই ফেলিক্স ও তার দুই সঙ্গী পালিয়ে যায়। তাড়াহুড়োয় অভিযুক্ত আঁততায়ীরা একটি মোটরবাইক ফেলেই পালিয়ে যায়।
ফানিন্দ্র ও ভিনু-কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু রাস্তার মাঝখানেই দুজনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পুলিশ তদন্তে সংস্থার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ফেলিক্স ও তার দুই সঙ্গীকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। অবিলম্বে যাতে তাদের গ্রেফতার করা যায় তারই চেষ্টা চালাচ্ছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। ইতিমধ্যে আবার ফেলিক্সের একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট সামনে এসেছে। যেখানে সে টেক্সট মেসেজ পোস্টে লিখেছে যে সে খারাপ মানুষদের আঘাত করে থাকে, ভালো মানুষদের তার কাছ থেকে কোনও বিপদ নেই।
বেঙ্গালুরু উত্তর-পূর্বের ডিসিপি লক্ষী প্রসাদ জানিয়েছেন যে, ফানিন্দ্র সুব্রহ্মণিয়ামের বয়স ৪০ এবং তিনি বেঙ্গালুরুরই আদি বাসিন্দা। তাঁর বাড়ি কে আর পুরমে। অন্যদিকে ভিনু কুমারের বয়স ৩৬। তাঁর বাড়ি কেরলে। যদিও বেঙ্গালুরুতে হেব্বাল কাম্পাপুরাতে থাকতেন।