সংক্ষিপ্ত
- চাঁদের বুকে বিক্রম ল্যান্ডারের খোঁজ পেয়েছে নাসা
- তবে নাসার নিজেদের পক্ষে বিক্রমের খোঁজ পাওয়া সম্ভব হয়নি
- ঘরে বসেই বিক্রমকে চিহ্নিত করেন এক ভারতীয় যুবক
- অথচ মহাকাশ বিজ্ঞানের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগই নেই
অবশেষে চাঁদের বুকে বিক্রম ল্যান্ডারের খোঁজ পেল নাসা। মঙ্গলবার, নাসার পক্ষ থেকে তাদের লুনার রিকনস্যান্য় অরবাইটর-এর তোলা বিক্রম ল্যান্ডারের ধ্বংসাবশেষ-এর একটি ছবি প্রকাশ করেছে। তবে নাসা-র মতো বড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-কে বিক্রমের খোঁজ দিয়েছেন কিন্তু এক ভারতীয় যুবক, শানমুগা সুব্রমনিয়ন।
কে এই শানমুগা সুব্রমনিয়ন?
এমনিতে মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে চেন্নাই-এর এই যুবকের কোনও সম্পর্ক নেই। পেশায় তিনি মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু নেশা, আবহাওয়া বিজ্ঞান ও মহাকাশ বিজ্ঞান। ফেসবুকে নিয়মিত রেডারের ছবি যাচাই করে তিনি চেন্নাইয়ের বৃষ্টি বাদলার পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন।
বিক্রমের খোঁজে এলেন কীভাবে?
গত ২৬ সেপ্টেম্বর নাসার পক্ষ থেকে বিক্রমের ল্যান্ড করার সম্ভাব্য এলাকার চন্দ্রপৃষ্ঠের একটি ছবি প্রকাশ করেছিল। জনগণের কাছে তারা আবেদন করেছিল, ওই এলাকার আগের ছবির সঙ্গে ওই ছবিটি তুলনা করে দেখতে কেউ বিক্রমের খোঁজ পান কিনা। নাসার মতো সংস্থা বিক্রম ল্যান্ডারকে খুঁজে পাচ্ছে না শুনেই কৌতূহল বেড়ে গিয়েছিল শানমুগার।
কীভাবে খোঁজ পেলেন বিক্রমের?
দুটি ল্যাপটপে পাশাপাশি বিক্রমের ল্যান্ডিং সাইটের চন্দ্রপৃষ্ঠের দুটি ছবি খুলে তুলনা করা শুরু করেন তিনি। একটিতে ছিল নাসার প্রকাশিত ছবিটি, আরেকটি একই জায়গার ছবি তবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তোলা। তাঁর চোখে পড়ে পরের ছবিটিতে কিছু সাদা সাদা বিন্দু রয়েছে, যা আগের ছবিতে নেই। ওই বিন্দুগুলিই বিক্রমের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে দাবি করে তিনি ৩ অক্টোবর তারিখে নাসা ও ইসরো দুই সংস্থাকেই টুইট করেন। বলেন, বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের বালির নিচেও চাপা পড়তে পারে।
সূত্র ধরেই তদন্ত নাসার
শানমুগাকে সঙ্গে সঙ্গে কিছু জানায়নি নাসা। ১৮ অক্টোবর তাঁকে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা একটি মেল করে জানায়, তাঁর খোঁজের সূত্র ধরে তাদের লুনার অরবাইটর ওই এলাকায় খোঁজ চালাবে। আর তারপর দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সোমবার নাসা বিক্রমের খোঁজ পাওয়ার কথা ঘোষণা করে। জানা গিয়েছে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অন্তত ২৫টি এলাকায় পরে রয়েছে বিক্রমের টুকরো।
শানমুগাকে স্বীকৃতি
নাসার পক্ষ থেকে এই খোঁজের জন্য শানমুগাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নাসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এলারও-টিম বা চন্দ্রযান-২'এর টিম, কারোর সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন না শানমুগা। একেবারে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তিনি প্রতিটি পিক্সেল ধরে খোঁজ চালিয়ে নাসাকে বিক্রমের ধ্বংসাবশেষ-কে চিহ্নিত করতে সহায়তা করেছেন। এটা একটা অভূতপূর্ব ঘটনা।
কী বলছেন শানমুগা?
শানমুগা জানিয়েছেন, এই কাজে তাঁকে পরিচিত কয়েকজন টুইটার ও রেডিট ব্যবহারকারীও সাহায্য করেছেন। ৩৩ বছরের এই মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। বিক্রমের ল্যান্ডিং সফল না হওয়াটা দুঃখের হলেও তাঁর মতে চন্দ্রযান-২ অভিযান'কে সফল বলা উচিত। তবে ইসরোর কাছে তাঁর একটা আবেদনও রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর হাত ধরে বিক্রমের খোঁজ পাওয়া গেল, শুধুমাত্র নাসা অনেক বেশি তথ্য প্রকাশ করে বলেই। নাসা তাদের তোলা ছবি না দিলে, তিনি এই কাজটা করতেই পারতেন না। তাঁর মতে ইসরো-রও আরও অনেক বেশি তথ্য জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত।