সংক্ষিপ্ত

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানী বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা চালানোর পর পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। অবশষে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এরপরই পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হয়ে একটি পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।  
 

পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে বোঝানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) ১৯৭১ সালের জুন মাস থেকে বিভিন্ন দেশে সফর শুরু করেন। পাকিস্তানী বাহিনী কিভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে এবং এর ফলে ভারত কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে বিষয়টি বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানের কাছে তুলে ধরেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭১ সালের ২৪শে মে ভারতের লোকসভায় এক বক্তব্যে ইন্দিরা গান্ধী বলেন (Indira Gandhi) , যে বিষয়টিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেটি ভারতেরও অভ্যন্তরীণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও প্রথমার্ধে ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) এই যুদ্ধ চান নি।  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ ও অস্থিরতা ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর থাকে। অন্যদিকে রাশিয়ার সাথে ভারতের চুক্তির পরেই পাকিস্তানের সামরিক সরকার বুঝতে পারে যে ভারতের সাথে একটি যুদ্ধ আসন্ন এবং সে যুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত হবেই। 

১৯৭১ সালের অগাস্ট মাসে রাশিয়ার সাথে একটি মৈত্রী চুক্তি করে ভারত (India)। ফলত যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সামরিক দিক থেকে সাহায্যের আশ্বাস পে ভারত। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে রাজ্যপাল ভবনে এসে পৌঁছান অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রদূত জন কেলি (John Kelly)। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর ডক্টর আব্দুল মোতালেব মালিক, অস্ট্রিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত, কেলিকে (John Kelly) তার আগমনে অভ্যর্থনা জানান। দু'জন মালিকের অফিসের দিকে হাঁটতে শুরু করলে কেলি আকাশে থাকা যুদ্ধবিমান দেখে কিছুটা শংকিত হয়ে পড়েন। মালিক সেটিকে বার্মা ভ্রমণকারী বেসামরিক বিমান বলে উড়িয়ে দেন এবং আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, ভারতীয় সেনারা 9Indian Force) সেখান থেকে অনেক দূরে রয়েছে। আচমকা কিছুক্ষনের মধ্যেই ভবন কেঁপে ওঠে এবং শোনা যায় বিস্ফোরণের শব্দ। ঢাকার গণহত্যাকে সমর্থনকারী মানুষটিই বাধ্য হয়ে আক্রান্ত অবস্থায় গভর্নরের পদ থেকে ইস্তফা দেন। 
 
যুদ্ধে পাকিস্তান F104A যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা শুরু করলে ভারত ও মিগ-২১ এফএলকে কাজে লাগাতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, 1971 সালের ডিসেম্বরে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্যাল লিমিটেড ভারতীয় বিমানবাহিনীকে ৮১ টি মিগ-21 এফএল (MIG-21 FL) সরবরাহ করেছিল। মিগ ২১ একটি সুপারসনিক ফাইটার (Supersonic Fighter)। এটি আকাশ থেকে থেকে আকাশে, আকাশ থেকে মাটিতে সবদিকেই কার্যকরি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ফাইটার বিমানই ছিল এই মিগ ২১ (MIG-21)। এই বিমানের ক্ষমতা এতই প্রখর ছিল যে এটি ২০ কিলোমিটার রেঞ্জে শত্রুদের সনাক্ত করতে সক্ষম ছিল। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ৪ নং ওরিয়ালের ফ্লাইং অফিসার জয়েন্দ্র সুকৃত রাজ পূর্ব পাকিস্তানের তেজগাঁওয়ে একটি পাকিস্তানি কানাডায়ার F-86E সাবেরকে গুলি করে ভূপাতিত করেন। ৬ ডিসেম্বর, উইং কমান্ডার বিষ্ণোই ২৮ তম স্কোয়াড্রন থেকে তেজগাঁওয়ের দিকে চারটি মিগ-২১-সহ (MIG-21) নেতৃত্ব দেন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র অপারেশনাল পিএএফ (Pakistan Air Force) এয়ারবেসে। প্রতিটি MiG-21 একটি জোড়া ৫০০ কেজি লোহার বোমা সরাসরি রানওয়েতে ফেলে এবং পাকিস্তান বিমান বাহিনীকে (PAF) ভূপাতিত করে। 

১৩ই ডিসেম্বর, চারটি মিগ-২১ (MIG-21) একটি অন্যতম কঠিন মিশনে বাদিনে পাকিস্তানি রাডার স্টেশনকে সফলভাবে ছিটকে দিতে সক্ষম হয়। দুর্ভাগ্যবশত, উইং কমান্ডার হেরসারন সিং গিলকে পাকিস্তানি বিমান বিধ্বংসী গুলিতে গুলি করে এবং বাদিনের অভিযানে তিনি নিহত হন। পাকিস্তানি স্টার ফাইটার ভারতীয় বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে স্কোয়াড্রন লিডার বিনয় কপিলা স্টারফাইটারের সামনে বাঁধার সৃষ্টি করেন  এবং তার Ub-16 রকেট পড থেকে একটি সালভো দিয়ে বের করে আনেন। এই যুদ্ধে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সমর বিক্রম  শাহ (Vikram Shah) পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ইন্টারসেপ্টরগুলির একজনকে নিযুক্ত করেছিলেন এবং তার ২৩ মিমি কামান দিয়ে মেঘহীন আকাশ থেকে গুলি করেছিলেন। তারপরে তিনি অন্য দুজনের পিছনে ধাওয়া করেন এবং তাদের মধ্যে একটি কে-১৩ মিসাইল দিয়ে উড়িয়ে দেন। এই যুদ্ধে সর্বোচ্চ স্কোরকারী মিগ-২১ এফএল পাইলট হয়ে ওঠেন লেফটেন্যান্ট সমর বিক্রম  শাহ (Vikram Shah)।