সংক্ষিপ্ত

মূলত যাদব সম্প্রদায় এবং মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের শক্তিতে বলিয়ান ছিল অখিলেশ যাদবদের সমাজবাদী পার্টি। সেখানে মায়াবতী-র জোর ছিল দলিত ভোটব্যাঙ্ক এবং সংখ্যালঘু ভোট। কিন্তু, পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকেই লক্ষ করা গিয়েছিল যে যাদবদের ভোটব্যাঙ্কের একটা অংশ বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে পড়েছে তা নয়, সেই সঙ্গে ব্রাহ্মণ ভোটও ঝুলিতে পুরে নিয়েছে গেরুয়া শিবির।

যে কোনও জনমত সমীক্ষায় সবার যেখানে আগ্রহ থাকে, তা হল কে সরকার গড়বে বা কে হবেন নতুন সরকারের মুখ! সন্দেহ নেই হ্যাসট্যাগ মুড অফ ইউপি ((#MoodOfUP)-তে এই প্রশ্নের সামনে আমাদেরও পড়তে হয়েছে। এশিয়ানেট নিউজ এবং জন কি বাতের মিলিত উদ্যোগে তৈরি হওয়া এই জনমত সমীক্ষা প্রকৃত অর্থেই তুলে ধরেছে একটা ছবি। ভোটের সাত মাস আগের এই জনমত সমীক্ষায় অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন। আমরা একটা কথাই বলব এই মুহূর্তে দেশজুড়ে এবং উত্তরপ্রদেশ জুড়ে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে তার ভিত্তিতেই এই সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েক মাসে এই তথ্যে অনেক বদলে আসতেই পারে। তবে, আমাদের তৈরি করা যে ১৪টি প্রশ্নমালা উত্তরপ্রদেশের ৬টি অঞ্চলের মানুষের সামনে মেলে ধরা হয়েছিল তারই ভিত্তিতে নানা তথ্য সামনে এসেছে। আর সেই তথ্যের আধারেই উত্তরপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে একটি ছবি তৈরি করা গিয়েছে। 

এশিয়ানেট নিউজ এবং জন কি বাত- যে প্রশ্নমালা তৈরি করেছিল, তাতে একটা প্রশ্ন অবশ্যাম্ভাবি হিসাবে উত্তরদাতাদের সামনে মেলে ধরা হয়েছিল। আর এই প্রশ্নটা ছিল- এবার কার জন্য আপনার ভোট দেবেন? যোগী আদিত্যনাথ না অখিলেশ যাদব না মায়াবতী। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবদের একটা সময় রাজ ছিল। মূলত যাদব সম্প্রদায় এবং মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের শক্তিতে বলিয়ান ছিল অখিলেশ যাদবদের সমাজবাদী পার্টি। সেখানে মায়াবতী-র জোর ছিল দলিত ভোটব্যাঙ্ক এবং সংখ্যালঘু ভোট। কিন্তু, পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকেই লক্ষ করা গিয়েছিল যে যাদবদের ভোটব্যাঙ্কের একটা অংশ বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে পড়েছে তা নয়, সেই সঙ্গে ব্রাহ্মণ ভোটও ঝুলিতে পুরে নিয়েছে গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে, দলিত ভোটব্যাঙ্কেও ফাঁটল ছিল- বেশকিছুটা অংশ ভোট বিজেপি-রক দিকে চলে গিয়েছিল। ২০১৭ সালে যখন যোগী আদিত্যনাথের সরকার উত্তরপ্রদেশের শাসন তখতে বসেছিল তখন থেকেই নানা বিতর্ক হয়েছে। দলিত হত্যা থেকে গোহত্যা নিয়ে বিতর্ক, গণপিটুনি, শিশুমৃত্যু- বারবারই সমালোচনার মুখে পড়েছে যোগী সরকার। কিন্তু, হ্যাসট্যাগ মুড অফ ইউপি ((#MoodOfUP)-র সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে মানুষ এখনও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যোগী আদিত্যনাথকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে ইচ্ছুক। আবার বলা হচ্ছে এই তথ্য এই মুহূর্তে মানুষের মানসিকতার উপরে। ভোট আসতে এই মানসিকতায় আরও বদল এলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। 

হ্যাসট্যাগ মুড অফ ইউপি ((#MoodOfUP)-র সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে- উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ জানিয়েছেন তারা যোগী আদিত্যনাথের জন্যই ভোট দেবে। তবে, যোগী যে এক্কেবারের ক্লিন সুইপ করবেন এমনটা নয়, উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ জানিয়েছে তারা অখিলেশ যাদবের জন্য ভোট করবে। এর মানে হ্যাসট্যাগ মুড অফ ইউপি ((#MoodOfUP)-সমীক্ষায় জনপ্রিয়তার নিরিখে যোগী ও অখিলেশের মধ্যে ব্যবধান ১২ শতাংশের। এই প্রশ্নে উত্তরদাতারা আরও কারও নাম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সেভাবে উল্লেখ করেনি। ফলে এক্ষেত্রে অন্যান্য বলে একটি নাম তৈরি করতে হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে ১৬শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন। 


হ্যাসট্যাগ মুড অফ ইউপি ((#MoodOfUP) সমীক্ষায় যে বিষয়টি বারবার সামনে এসেছে তা হল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা। এই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যোগী অন্য সব সরকারের থেকে অনেক ভালো কাজ করেছেন বলেই মত উত্তদাতাদের। তাদের মতে অখিলেশ যাদবের মুখ্যমন্ত্রীত্বকালে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছিল। ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতাই এটা মনে করছেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৮ শতাংশ-এর ধারনা যোগী আদিত্যনাথের মুখ্যমন্ত্রীত্বে দুর্নীতির রমরমা অনেকটাই কমেছে। মায়াবতীর আমলে যে দুর্নীতি হয়েছে তা মনে করছেন উত্তরদাতাদের ২৪ শতাংশ। 

কে হতে পারেন উত্তরপ্রদেশের নয়া মুখ্যমন্ত্রী? এই প্রশ্নের আধারে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আর তা হল আইন-শৃঙ্খলা। এই প্রশ্নে দেখা যাচ্ছে উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ বলেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা যোগী অনেক এগিয়ে। ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন আইন-শৃঙ্খলা ভালো ছিল অখিলেশ যাদবের মুখ্যমন্ত্রীত্বে। মায়াবতীর জামানায় উত্তরপ্রদেশের আইন-শৃঙ্খলা ভালো ছিল এটা মনে করছেন মাত্র ১৩শতাংশ উত্তরদাতা। 


চলতি বছরের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। এর সঙ্গে অবশ্যেই একটা গুরুত্ব তৈরি করেছিল অসম এবং তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের মতে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বিধানসভা নির্বাচনগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে আরও একটি বিধানসভা নির্বাচন সামনে রয়েছে যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। আর এই বিধানসভা নির্বাচন হল উত্তরপ্রদেশের। বলতে গেলে ২০১৭ সালে বিশাল জয় নিয়ে উত্তরপ্রদেশে সরকার তৈরি করে বিজেপি। এমনকী, যোগী আদিত্যনাথ-কে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরে আরও এক বড় রাজনৈতিক চাল চেলেছিল গেরুয়া শিবির। প্রায় ৫ বছর শাসনকাল পূর্ণ করতে চলেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। ২০২২ সালের শুরুতেই সেখানে বিধানসভা ভোট। খাতায় কলমের হিসাব বলছে এখনও ৭ মাস রয়েছে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের মেয়াদ। তার আগেই উত্তরপ্রদেশের মনের মেজাজ বুঝতে ময়দানে নেমে পড়েছে এশিয়ানেট নিউজ। জনমত সমীক্ষায় নাম করা সংস্থা জন কি বাত-এর সঙ্গে এশিয়ানেট নিউজ একটা তথ্যানুসন্ধান চালায়। যার নাম হ্যাসট্যাগ মুড অফ ইউপি (#MoodOfUP)-যা আসলে একটি জনমত সমীক্ষা(Opinion Poll)। এই সমীক্ষার মধ্যে দিয়ে উত্তরপ্রদেশের মানুষের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আর্থ সামাজিক অবস্থা এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি-র অভিজ্ঞতার একটা ঝোঁকের সন্ধান করা হয়েছে। আর এইখান থেকে পাওয়া সমীক্ষার মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে মানুষের দৃষ্টিকোণের সন্ধান করা হয়েছে। ভোট আসতে আসতে সন্দেহ নেই যে এই মানসিকতা ও দৃষ্টিকোণের অনেকটাই পরিবর্তন ঘটবে- ফলে সেক্ষেত্রের তথ্যের তারতম্য হওয়াটাও এক্কেবারে নিশ্চিত।