সংক্ষিপ্ত

  • রাজীব চন্দ্রশেখর-এর নয়া টুইট 
  • ভারত থেকে লুঠ করা ধনরত্ন ফেরতের দাবি রাজীবের 
  • ফেরত দিক ব্রিটেন, ফ্রান্স ও পর্তুগাল 
  • এই নিয়ে আলোচনার আহ্বানও জানিয়েছেন রাজীব 

১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের মধ্যেই দিয়ে ভারতের উপরে ইংরেজ শাসনের লাগামটা সুদৃঢ় হয়। এরপর প্রায় দু'শ বছর ধরে ভারতবর্ষ-কে শাসন করেছিল ইংরেজরা। এমনকী পর্তুগাল ও ফ্রান্সও ভারতবর্ষের বুকে তাদের ঔপনিবেশ শাসন কায়েম করেছিল। এই শাসনকালে ব্রিটেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্স অবিশ্বাস্য পরিমাণে অর্থ এবং ধন-রত্ন নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। এর সমস্তটাই তারা শাসক হিসাবে সংগ্রহ করেছিল। এই অর্থ পাচারকে  দেশগুলি কর আদায় এবং উপঢৌকন বলে চালানোর চেষ্টা করলেও, এর সমস্তটাই ছিল লুঠ করে আদায় করা। টুইটারে এই লুঠ হওয়া অর্থরাশি এবং ধন-রত্ন নিয়ে নতুন করে আওয়াজ তুলেছেন সাংসদ রাজীব চন্দ্রশেখর। বিজেপি সাংসদ টুইটারে স্পষ্টতই জানিয়েছেন, এবার এই নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। যাদের কাছ থেকে এই অর্থগুলি লুঠ করা হয়েছিল তা তাঁদের কাছে ফেরত আসা উচিত। 

 

 

 

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক স্তরের একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে একটি রিপোর্ট। এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটেন ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার লুঠ করেছিল। রিপোর্টে এও উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতে তাদের ঔপনিবেশিক শাসন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ব্রিটেন বারবার-ই দাবি করে অর্থনৈতিকভাবে তাদের কোনও লাভ হয়নি। উল্টে ভারত-কে শাসন করতে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ দণ্ড দিতে হত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ব্রিটেনের এই দাবি পুরোপুরি মিথ্যা। আসলে এই রিপোর্ট গড়ে উঠেছে অর্থনীতির ছাত্রী উৎসা প্যাটেলের গবেষণার উপরে। উৎসা তাঁর গবেষণাপত্র সম্প্রতি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত করেছেন। সেখানে উৎসা দেখিয়েছেন কীভাবে  ব্রিটেন ১৭৬৫ সাল থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে ভারতবর্ষ থেকে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্থ ও ধন-রত্ন নিজেদের দেশে পাচার করেছিল। 

উৎসার গবেষণা দেখিয়েছে, ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার ব্রিটেনের বার্ষিক গড় আয়ের ১৭ গুণ। এই গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে কীভাবে এই বিপুল অর্থ প্রায় দুই শতক ধরে নিজেদের দেশে পাচার করেছিল ব্রিটেন। উৎসা তাঁর গবেষণায় জানিয়েছেন, ইংরেজরা বাণিজ্যের নামে ভারত থেকে কাপড় ও চাল কিনত। এর জন্য তারা রূপো দিত ভারতীয় বণিকদের। ১৭৬৫ সালে মোঘল সম্রাটের কাছ থেকে পাকাপাকিভাবে সনদ পাওয়ার পর ব্রিটিশরা ভারতীয় বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে। এবার মোঘলদের হয়ে তারা সরাসরি কর আদায় করতে থাকে। দেখা যায় ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি যে কর আদায় করছে তা দিয়েই তারা ভারতীয় বণিকদের কাছ থেকে কাপড় ও চাল কিনছে। এর মানে ইংরেজরা প্রায় দুশ বছর ধরে মাছের তেলে মাছ ভেজে গিয়েছে। উৎসা তাঁর গবেষণায় দাবি করেছেন এটা সোজা কথায় চুরি। 

এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরই সাংসদ রাজীব চন্দ্রশেখর ব্রিটেনের কাছ থেকে লুঠ হওয়া অর্থ ফেরতের দাবি রেখেছেন। ইংরেজদের মতোই ফরাসী ও পর্তুগিজরাও বছরের পর বছর ভারতবর্ষকে ধন-রত্ন লুঠ করে নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল। বছর দুয়েক আগে ব্রিটেনের কাছে কোহিনূর ফেরত আনার দাবি-তে অনেকেই সরব হয়েছিলেন। এই নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপরেও চাপ তৈরি চেষ্টা হয়েছিল। ভারত সরকার এই বিতর্কে সেভাবে অংশ না নিলেও ব্রিটেন দাবি করে কোহিনূর হিরে তারা উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন। ঔপনিবেশিক শাসনকালে ব্রি়টেন, ফ্রান্স ও পর্তুগিজরা বিশ্বজুড়ে অর্থ লুন্ঠন চালিয়েছিল। সন্দেহ নেই সময়ের বদলের সঙ্গে সঙ্গে এই বিতর্কিত অধ্যায়গুলো বারবারই আলোচনায় ফিরে আসবে।