সংক্ষিপ্ত

বিভিন্ন পিএলআই বা প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভের মাধ্যমে কেন্দ্র উত্পাদন এবং রপ্তানির সুযোগকে আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে খবর। এক সরকারি আধিকারিকের মতে এজন্য কেন্দ্র সেমিকন্ডাক্টর পলিসি গ্রহণ করেছে।

এম পি সুকুমারন নায়ার- গোটা বিশ্ব জুড়ে এখন সেমিকন্ডাক্টর চিপগুলির ঘাটতি চলছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে ভারত। এই ঘাটতি বর্তমানে সবকটি শিল্পকেই প্রভাবিত করেছে। যেহেতু গাড়ি থেকে শুরু করে টিভি, ল্যাপটপ, ইয়ারবাড এবং এমনকি ওয়াশিং মেশিন পর্যন্ত সবকিছুই - সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করে, তাই সব ধরণের উৎপাদন শিল্পেই প্রভাব ফেলেছে সেমিকন্ডাক্টর চিপের ঘাটতি। 

এই প্রেক্ষিতেই নয়া দিগন্তের সন্ধান করছে ভারত। নরেন্দ্র মোদী সরকারের স্বপ্ন ভারতকে (India) পরিণত করা হবে ইলেকট্রনিক্স হাবে(electronics hub)। এই প্রকল্প রূপায়নের জন্য সরকার আগামী ছয় বছরে ২০টিরও বেশি সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন, কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ডিসপ্লে ফ্যাব্রিকেশন (ফ্যাব) ইউনিট স্থাপন করবে। এজন্য ৭৬ হাজার কোটি টাকার (76k crore) প্রকল্পের পরিকল্পনা (National Semiconductor Policy) করেছে কেন্দ্র সরকার বলে খবর। 

স্কিমটি সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব, ডিসপ্লে ফ্যাব, সিলিকন ফোটোনিক্স এবং সেন্সর ডিজাইন, সমাবেশ এবং তৈরিতে নিযুক্ত কোম্পানি বা গ্রুপগুলিকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছে সরকার। এই উপাদানগুলি ব্যাপকভাবে মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, নোটবুক, সার্ভার, স্মার্ট হোম, গেমিং, পরিধানযোগ্য এবং Wi-Fi অ্যাক্সেস পয়েন্ট অটোমোবাইল, ডায়াগনস্টিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, নিয়ন্ত্রণ অটোমেশন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

জানা গিয়েছে বিভিন্ন পিএলআই বা প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভের মাধ্যমে কেন্দ্র উত্পাদন এবং রপ্তানির সুযোগকে আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এক সরকারি আধিকারিকের মতে এজন্য কেন্দ্র সেমিকন্ডাক্টর পলিসি গ্রহণ করেছে। তিনি আরও জানান, সেমিকন্ডাক্টর পলিসি গ্রহণের পর কেন্দ্রের লক্ষ্য এক থেকে দুটি ফ্যাব ইউনিট গড়ে তোলা। এছাড়াও ডিজাইনিং এবং উত্পাদনের উপাদানগুলির প্রতিটির জন্য ১০টি ইউনিট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, অটোমোবাইল থেকে হ্যান্ডসেট তৈরির জন্য সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করা হয়।

প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় যেতে পারে। তার পরে, ইলেকট্রনিক্স ও আইটি মন্ত্রক (MeitY) এর ওপর কাজ শুরু করবে ও আবেদনকারীদের তালিকা তৈরি করবে বলে জানা গিয়েছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরে এই প্রকল্পের ওপর চূড়ান্ত কাজ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানিকে এই প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানানো হতে পারে বলে সূত্রের খবর। 

বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর বাজার ২০২২ সালে ১৭.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা ২০২০-২১ সালে ১০.৮ শতাংশ কমেছিল কোভিডের কারণে। সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতারা ইন্টেল, স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স, এসকে হাইনিক্স এবং মাইক্রোন টেকনোলজির মতো ইন্টিগ্রেটেড ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারার (আইডিএম)-দের অন্তর্ভুক্ত, যাদের নিজস্ব ডিজাইন, ফ্যাব্রিকেশন এবং অ্যাসেম্বলি ক্ষমতা রয়েছে। মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলির বিশ্ব বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে, তার পরে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান এবং চিন৷

গার্টনারের প্রধান গবেষণা বিশ্লেষক কনিষ্ক চৌহান জানাচ্ছেন, যদি এই নীতি আমাদের দেশে কিছু ফাউন্ড্রিকে (ফেব্রিকেশন ইউনিট) উৎসাহিত করতে পারে, তবে এই নীতি ভারতকে স্বনির্ভর করার রাস্তায় নিয়ে যাবে। স্যামসাং, এনএক্সপি এবং কোয়ালকমের মতো চিপ প্রস্তুতকারকদের চাহিদা অনুসারে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (TMSC) কাজ করে। এই কোম্পানির ফ্যাবগুলিতে একটি ওয়েফার ডিজাইন করা হয়, যাকে ফাউন্ড্রিজ বলা হয়।

চিপমেকাররা তারপরে Xiaomi এবং Cisco-এর মতো সরঞ্জাম প্রস্তুতকারকদের কাছে চিপগুলি প্যাকেজ, পরীক্ষা এবং বিক্রি করে। কেন্দ্র এই বাজার ধরতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। সরকার ৪০% এর মতো মূলধন ভর্তুকি দেওয়া সত্ত্বেও কোম্পানিগুলিকে বিনিয়োগে সাড়া দেয়নি। ফলে কেন্দ্রের আগের পদক্ষেপটি ব্যর্থ হয়েছিল। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলি সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতাদের আকৃষ্ট করতে বিশাল ভর্তুকি দিচ্ছে, ফলে ভারতের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কোরিয়ান জায়ান্ট স্যামসাং সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ১৭ বিলিয়ন ডলারের চিপ তৈরির কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।