সংক্ষিপ্ত

দুটি বিশ্বযুদ্ধে দেখার আর দুটি মহামারির দেখার স্মৃতি নিয়ে চিরঘুমে পাড়ি দিলেন পুপিরেই পফুখা। তিনি ছিলেন নাগাল্যান্ডের সবথেকে বয়স্ক বাসিন্দা। মৃত্যুর সময় বয়স হয়েছিল ১২১ বছর।

দুটি মহামারি দেখেন। দুটি বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী তিনি। এবার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিলেন পুপিরেই পফুখা। তিনি ছিলেন নাগাল্যান্ডের সবথেকে বয়স্ক বাসিন্দা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১২১ বছর। নাগাল্যান্ডের কোহিমা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায় কিগওয়েমা গ্রামে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর গ্রামের বাড়িতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। স্প্যানিশ ফ্লুর মত মহামারির সাক্ষী ছিলেন তিনি। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীভৎসতাও তিনি দেখেছেন। আর দেখেছেন করোনাভাইরাসের মহামারি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সাক্ষী ছিলেন ১২১ বছরের পুপিরেই।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। তাঁদের চার সন্তান ছিলেন। তারাও একে একে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। নাতি-নাতনিদের সঙ্গেই দিন কাটত ১২১ বছরের পুপিরেইয়ের। তাঁর নাতি নাতনির সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। ১৮ জন নাতি নাতনি তাঁর। যাদের মধ্যে ১২ জন জীবীত। আর পুতি পুতনির সংখ্যা ৫৬। রাজ্যের নির্বাচন কমিশন ১৯৮২ সালে যে ভোটার পরিচয়পত্র দিয়েছিল সেটাই তার একমাত্র নথি- যা বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সেই সময়ই তাঁর বয়স ছিল ৮০। কারণ দেশস্বাধীনের অনেক অনেক আগেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

পুপিরেইএর এক নাতনি জানিয়েছেন, তেমন কোনও অসুস্থতা ছিল না। শুধুমাত্র বয়সের ভারে নুজ্ব্য হয়ে পড়েছিলেন। দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। কিন্তু স্মৃতিশক্তি অটুট ছিল। বিশ্ব যুদ্ধের কথা যেমন বলতে পারেতেন তেমনই দূর্ভিক্ষের ভয়ঙ্কর কষ্টের দিনগুলির কথাও বলতে পারতেন তিনি। বয়সের কারণে ডায়বেটিশে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ক্ষ্মীণ হয়ে গিয়েছিল শ্রবণ শক্তি। একটা জায়গাতেই বসে থাকতেন। তাঁর নাতনি জানিয়েছেন নাগাল্যান্ডে আসা পর্যটকদের অনেকেই পুপিরেইকে একবার দেখার জন্য তাঁদের বাড়িরে ভিড় জমাতেন। বৃদ্ধা অবশ্য তাতে মোটেই বিরক্ত হতেন না।

গতমাসেই নাগাল্যান্ড বিধানসভার নির্বাচন হয়েছিল। সেই নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। নিজের ভোট নিজেই দিয়েছিলেন ১২১ বছরের বৃদ্ধা। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন ডিএনএ পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়েছিল তাঁর আসল বয়স। তাঁর নাতনি বলেছেন, তাঁদের গ্রামের মানুষের কাছেও বিষ্ময় ছিলেন এই মহিলা। কারণ তাঁকে কোনও দিনও কেউ হাসপাতালে যেতে বা ওষুধ খেতে দেখেননি। তাই তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যুতে অনেকেই হতাশ হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক গ্রামের অধিকাংশ মানুষই জানিয়েছেন পুপিরেইকে তাঁরা কোনও দিনও অসুস্থ হতে দেখেননি।

কিগওয়েমা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন, ৮০ দশক থেকেই পুপিরেইয়ের দৃষ্টশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করে। কিন্তু তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল খুবই তীক্ষ্ণ। অতীত জীবনের প্রায় সবকথাই তিনি মনে রাখতে পেরেছিলেন। তাঁর জীবন ঈশ্বরের আশীর্বাদ বলেও দাবি করেন তিনি। গ্রাম প্রধান জানিয়েছেন, তাঁর বাবার কাকার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। আর গ্রাম প্রধানের বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে তার বয়স হত ১০৩। পুপিরা ছিলেন তাঁর বাবার কামিকা।