সংক্ষিপ্ত
বর্তমানে, লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচন আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায়শই বিভিন্ন সময়ে এগুলি ঘটে। এক দেশ এক নির্বাচন বিল ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট ব্যাঘাত কমাতে চায়।
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সংসদে বহু-আলোচিত 'এক দেশ এক নির্বাচন' বিল পেশ করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের সাথে, এই প্রস্তাবটি লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এটি ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।
এটি কীভাবে সারা দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে পারে তা দেখে নেওয়া যাক।
'এক দেশ, এক নির্বাচন' মানে কী?
২০২৪ সালে প্রকাশিত একযোগে নির্বাচন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির প্রতিবেদনে, এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য একটি বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে, নির্বাচনী সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, কমিটির সুপারিশগুলিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে।
'এক দেশ এক নির্বাচন' নামে পরিচিত এই ধারণাটি লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচনী চক্রে সামঞ্জস্য আনার প্রস্তাব দেয়। এই পদ্ধতিতে, ভোটাররা একই দিনে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার নির্বাচন করতে ভোট দেবেন। তবে, সারা দেশে নির্বাচনী ভোটগ্রহণ বিভিন্ন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এই ব্যবস্থা প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে, নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয় হ্রাস করতে পারে এবং নীতির ধারাবাহিকতা উন্নত করতে পারে বলে সমর্থকরা যুক্তি দেখান।
'এক দেশ, এক নির্বাচন'-এর ঐতিহাসিক পটভূমি:
একযোগে নির্বাচনের ধারণাটি ভারতের জন্য নতুন নয়। সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর, ১৯৫১ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচন একইসাথে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
উচ্চ স্তরের প্যানেল সুপারিশের মূল বৈশিষ্ট্য:
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের সভাপতিত্বে এজন্য উচ্চ স্তরের কমিটি, দোসরা সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ গঠন করেছিল। কমিটির প্রাথমিক আদেশ ছিল লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা। তার জন্য, কমিটি জনগণ এবং রাজনৈতিক স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করে এবং এই নির্বাচনী সংস্কারের সম্ভাব্য সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জগুলি মূল্যায়ন করার জন্য বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে।
'ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন' বিল কে সমর্থন ও বিরোধিতা করে?
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), জনতা দল (ইউনাইটেড), বিজু জনতা দল (বিজেডি), এআইএডিএমকে-এর মতো বেশ কয়েকটি দল এই প্রকল্পটিকে সমর্থন করছে৷ এই দলগুলি বিশ্বাস করে যে এটি সরকারের দক্ষতার উন্নতি ঘটাবে এবং রাজকোষের উপর আর্থিক চাপ হ্রাস করবে।
বিরোধীরা:
কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) এবং সমাজবাদী পার্টি (এসপি) এর মতো প্রধান বিরোধী দলগুলি এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করেছে।
কংগ্রেস এক দেশ এক নির্বাচন বিলকে সংসদীয় গণতন্ত্রের উপর এবং ভারতের ফেডারেল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আক্রমণ বলে অভিহিত করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা দেশে একযোগে নির্বাচনকে অসাংবিধানিক এবং ফেডারেলবাদ বিরোধী বলে কটাক্ষ করেছেন।
সমাজবাদী পার্টি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে নির্বাচনী রাজনীতিতে রাজ্য দলগুলির জন্য ক্ষেত্র প্রভাবিত হবে। এতে জাতীয় দলগুলোর সুবিধা হবে বলেও বলা হয়েছে।
কিছু দল, যেমন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), ভারতের মতো বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় একটি দেশে একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দিহান।