Operation Sindoor: পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয় জায়গায় জঙ্গিদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের ঘাঁটি লক্ষ্য করেই স্ট্রাইক চালানো হয়েছে।

Operation Sindoor: বুধবার ভোরে, ভারত পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীর (POK) -এ জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে টার্গেট করে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। অপারেশন সিঁদুর নামের এই অভিযানে বিমান, নৌ এবং স্থল বাহিনীর একযোগে হামলা চালায়। ২০১৯ সালে বালাকোট অভিযানের পর এটি ভারতের সবচেয়ে বড় আন্তঃসীমান্ত নির্ভুল হামলা। এই অভিযানটি ছিল ২২শে এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রত্যুত্তর, যেখানে একজন ভারতীয় নৌবাহিনীর আধিকারিক এবং একজন নেপালি নাগরিক সহ ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। হামলাকারীরা পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এর সাথে যুক্ত ছিল, একটি জঙ্গি গোষ্ঠী যা পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে লজিস্টিক এবং আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য অভিযুক্ত।

অপারেশন সিঁদুরে ব্যবহৃত অস্ত্র

এই অভিযানে মূলত নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম, দীর্ঘপাল্লার অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে ভারত, যার মধ্যে রয়েছে SCALP, HAMMER-এর মতো যুদ্ধাস্ত্র। (India Strikes in Pakistan)

SCALP (স্টর্ম শ্যাডো) : SCALP ক্ষেপণাস্ত্র, যা স্টর্ম শ্যাডো নামেও পরিচিত, এটি একটি দূরপাল্লার, আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র যার পাল্লা ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি এবং এটি দূরপাল্লার আঘাত হানতে সক্ষমতার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

হ্যামার (হাইলি এজাইল মডুলার মিনিশন এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ): হ্যামার স্মার্ট বোমাটি লস্কর এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত সুরক্ষিত বাঙ্কার এবং বহুতল ভবনের মতো সুরক্ষিত অবকাঠামো আক্রমণ করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। হ্যামার হল একটি নির্ভুল-নির্দেশিত, স্ট্যান্ডঅফ যুদ্ধাস্ত্র যা উৎক্ষেপণের উচ্চতার উপর নির্ভর করে ৫০-৭০ কিলোমিটার পরিসরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।

কামিকাজে ড্রোন: মূলত নজরদারি চালানোর কাজে ব্য়বহৃত হয়। যত ক্ষণ পর্যন্ত না লক্ষ্য নির্ধারণ হচ্ছে, তত ক্ষণ উড়ে বেড়ায় এই ড্রোন। এই ড্রোনকে Kamikaze Drone বা আত্মঘাতী ড্রোনও বলা হয়। স্বয়ংক্রিয় ভাবেও উড়তে পারে এই ড্রোন, আবার রিমোটের মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি, এই ড্রোনে বিস্ফোরক বা পেলোডও বসানো যায়। ড্রোনের মাধ্যমেই আঘাত হানা যায় লক্ষ্যে।

মূল লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত এবং আক্রমণ করা হয়েছে

অপারেশন সিঁদুরের সময় নয়টি ভিন্ন স্থানে আক্রমণ করা হয়েছিল, যার মধ্যে চারটি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে এবং পাঁচটি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত ছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে যে কোনও পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিতে টার্গেট করা হয়নি। পরিবর্তে, নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির পরিচালিত কেন্দ্রের গোড়ায় আঘাত হানা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে প্রায় ৯০০ জঙ্গি অবস্থান করছিল। এর মধ্যে বাহাওয়ালপুরের ঘাঁটিতে ২৫০ জন, মুরিদকেতে ১২০ জন, মুজাফফরাবাদ ও কোটলিতে ২০০ জন এবং শিয়ালকোট, গুলপুর, ভীমবের ও চক আমরুর ঘাঁটিগুলোতে হামলার সময় ৩০০ জনের বেশি জঙ্গি ছিল। যদিও এই ঘাঁটিগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর, তবে কতজন জঙ্গি হতাহত হয়েছে, সে বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

ভারতের হামলার কথা মেনে নিয়েছে পাকিস্তান। তারা দাবি করেছে, ভারত ৬টি স্থানে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের 'অপারেশন সিন্দুর' হামলায় ৮ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও ভারতের এই প্রত্যাঘাতের কথা স্বীকার করেছেন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কোটলিতে হিজবুল মুজাহিদিনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং মুজাফফরাবাদে লস্কর-ই-তৈবার প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয় জায়গায় জঙ্গিদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের ঘাঁটি লক্ষ্য করেই স্ট্রাইক চালানো হয়েছে।

জানা যাচ্ছে, বাহওয়ালপুরের মর্কাজ সুভান আল্লায় নামক জইশ-ই-মহম্মদের সদর দফতর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বরাবর সেখানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, নাশকতা চালানো হতো ভারতে।

মুরিদকে-র মর্কাজ তৈবায় লস্কর-ই-তৈবার ২০০ একর জায়গার উপর স্ট্রাইক চালিয়েছে ভারত। সেখানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি, সন্ত্রাসের দীক্ষা দেওয়া হতো, সেখানই নাশকতার পরিকল্পনা রচনা করা হতো।

কোটলির মর্কাজ আব্বাস শিবিরে আত্মঘাতী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ চলত। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র যেত সেখান থেকেই।

মুজফ্ফরাবাদের সৈয়দনা বিলাল ও সাওয়াই নাল্লা শিবির থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ ঘটাত লস্কর ও জইশ। সেখানে স্লিপার সেলের প্রশিক্ষণ চলত।

বরনালার মর্কজ আহলে হাদিথ শিবিরটি জঙ্গিদের কাজকর্ম পরিচালনা করত, সেটি ছিল জঙ্গিদের আঞ্চলিক রসদ ভাণ্ডার।

সরজলের তেহরা কালানে জইশের শিবিরে স্ট্রাইক চালানো হয়েছে। নতুন নিয়োগ করা জঙ্গিদের সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। অনুপ্রবেশ শেখানো হতো জঙ্গিদের।

সিয়ালকোটের মেহমুনা জোয়ায় হিজবুল মুজাহিদিনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে স্ট্রাইক চালানো হয়েছে। এখনও সেখান থেকে কার্য পরিচালনা করে হিজবুল।

পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার পরপরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের এই হামলার পর পাকিস্তান নীরব থাকবে না এবং এর উপযুক্ত জবাব দেবে।