পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১১ দিন ধরে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় তাৎক্ষণিক এবং সমানুপাতিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বজায় রেখেছে।

Pakistan Violates Ceasefire: পহেলগাম হামলার পর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ৪ এবং ৫ মে রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) জুড়ে বিনা উস্কানিতে ছোট অস্ত্রের গুলি চালানোর জবাবে পাল্টা গুলি চালিয়েছে। সোমবার এই বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন একজন সেনা আধিকারিক। 

পাকিস্তান সেনাবাহিনী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধার, নওশেরা, সুন্দরবনী এবং আখনুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে বিনা উস্কানিতে ছোট অস্ত্রের গুলি চালিয়েছে। সেনা আধিকারিকদের মতে, ভারতীয় সেনাবাহিনী সমানে এই গুলি চালনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এর আগে ৩ এবং ৪ মে রাতে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধার, নওশেরা, সুন্দরবনী এবং আখনুর জেলায় নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে ছোট অস্ত্রের গুলি চালিয়েছিল, যার জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী একটানা পাল্টা গুলি চালিয়েছিল।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, ২৫-২৬ এপ্রিল রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিনা উস্কানিতে ছোট অস্ত্রের গুলি চালানো শুরু হওয়ার পর থেকে লাগাতার এগারোতম দিন, যখন পাক সেনা গুলি চালায়। ৩০ এপ্রিল, ভারত পাকিস্তানে নিবন্ধিত সমস্ত বিমান এবং পাকিস্তানি বিমান সংস্থা পরিচালিত বিমানের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক (MoCA) অনুসারে, ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে ভারতের তরফে এটি আরেকটি বড় পদক্ষেপ, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়েছিল।

ভারত বিমানচালকদের জন্য একটি নোটিশ (NOTAM) জারি করেছে, ৩০ এপ্রিল থেকে ২৩ মে (আনুমানিক সময়কাল) পর্যন্ত সামরিক বিমান সহ সমস্ত পাকিস্তানি-রেজিস্টার্ড, পরিচালিত বা লিজ দেওয়া বিমানের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ২৯ এপ্রিল, প্রতিরক্ষা সূত্র অনুসারে, ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের ডিজি পাকিস্তানের বিনা উস্কানিতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য হটলাইনে কথা বলেছেন। সূত্র জানিয়েছে, ভারত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর বিনা উস্কানিতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে।

প্রতিরক্ষা মুখপাত্রের মতে, ৩ এবং ৪ মে-র রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোনও উস্কানি ছাড়াই জম্মু ও কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি এলাকায় গুলি চালিয়েছে। এই গুলিবর্ষণ নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে অবস্থিত পাকিস্তানি চৌকি থেকে করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা ২৪ এপ্রিল রাত থেকে শুরু হয়েছে, যখন ভারত পহেলগাঁও-এর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছিল। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই পাকিস্তান এলওসি-তে গুলি চালানো শুরু করে।

এদিকে, প্রকাশ্যে এলো আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রের খবর, ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় রয়েছে শতাধিক জঙ্গি। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (POK) এই রকম ৪২টি লঞ্চপ্যাডের হদিশ মিলেছে।

জানা গিয়েছে,পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দক্ষিণ পীরপঞ্জলে এই রকম ৩২টি লঞ্চপ্যাড চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও উত্তর পীরপঞ্জলে মিলেছে ১০টি জঙ্গি ঘাঁটির খবর। এই লঞ্চপ্যাডগুলিতে রয়েছে ১০০ থেকে ১৩০ জন জঙ্গি। দক্ষিণ পীরপঞ্জলে রয়েছে অন্তত ১০০ জন জঙ্গি। ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য উত্তর পীরপঞ্জলে অপেক্ষা করে রয়েছে ৩২ জন জঙ্গি।

সেনা সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরেরে এই লঞ্চ প্যাডগুলি থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করে আছে কয়েক শো পাক জঙ্গি (Pakistan terrorist)। জানা গিয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের যে লঞ্চপ্যাডগুলিতে জঙ্গিরা অপেক্ষা করছে সেই জায়গাগুলি হল- দুধানিয়াল, চেলাবন্দি, ম্যাচা ফ্যাক্টরি, গড়ি দুপাট্টা, বাশ, আলিয়াবাদ আর দক্ষিণ পিরপঞ্জলের মধ্যে যে সব জায়গায় জঙ্গি-ঘাঁটি রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- রাওয়ালকোট, ডুঙ্গি, তাতাপানি, হাজিরা, কোটলি, সেনসা, পালানি, নিকিয়াল, পলক-মিরপুর, তাগোশ।

অন্যদিকে, পহেলগাঁওয়ে হামলাকারী জঙ্গিরা ভারতের চেন্নাই হয়ে শ্রীলঙ্কা পালিয়ে যাওয়র মতলব আঁটছে। আরও জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে চেন্নাই থেকে শ্রীলঙ্কা (sreelanka) এয়ারলাইন্সের একটি বিমান উড়ে যায়। খবর, ওই বিমানে নাকি সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে ছয়জন জঙ্গি রয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তরফে এই সন্দেহ বার্তার কথা জানানো হয় শ্রীলঙ্কার বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষকে। সূত্রের খবর, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সন্দেহ, সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে যে ছয়জন জঙ্গি রয়েছে তারা পহেলগাঁও (Pahalgam attack) হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।