সংক্ষিপ্ত

আইআরসিটিসি নবরাত্রির সময় তার হিন্দু যাত্রীদের 'উপবাস খাবার' পরিবেশন করে কিন্তু রমজানের সময় এই ধরনের কোনও পরিষেবা পাওয়া যায় না।

অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। ছোট্ট হলেও, এই অভিজ্ঞতার কথা হয়ত কোনওদিনই ভুলতে পারবেন না শেহনওয়াজ আখতার। শতাব্দী এক্সপ্রেসে সফরকালে এমন অভিজ্ঞতা তাঁর সঙ্গে হবে, তা কখনও ভাবতে পারেননি হয়ত। আইআরসিটিসির পক্ষ থেকে এমন ব্যবহার তাঁর সারা জীবন মনে থাকবে। 

চলতি বছর ২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে রমজান। ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী চাঁদ দেখার ওপরই নির্ভর করে এই প্রথাটি। মনে করা হচ্ছে তিন এপ্রিল থেকেই রোজার উপবাস শুরু হয়েছে। সাধারণত রমজানের চাঁদ প্রথম দেখা যায় সৌদি আরব-সহ বেশ কিছু পশ্চিমী দেশে। প্রথম চাঁদ দেখা যায় ভারতের কিছু অংশেও। তার একদিন পর থেকে গোটা দেশেই দেখা যায় রমজানের চাঁদ। রমজান মানেই কঠিন আর কঠোর উপবাস। এই একটি মাস কঠোর নিয়মমানুবর্তিতার মধ্যে দিয়ে কাটান ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। সেই কারণেই মেনে চলতে হয় বেশ কয়েকটি  বিষয়। কারণ রোজা রাখা অত্যন্ত কঠিন।

এই রোজা রেখেই মঙ্গলবার হাওড়া রাঁচি শতাব্দী এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন শেহনয়াজ। সেদিন রোজা ভাঙার সময় বেশ সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি। কী খেয়ে উপবাস ভাঙবেন, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সেই সময় ট্রেনের আইআরসিটিসির কর্মীরা তাঁর হাতে দিয়ে যায় ইফতারের বিশেষ মিল। রীতিমতো অবাক হয়ে যান তিনি। 

অবাক হওয়ার মতো কাণ্ডই বটে। যেখানে ধর্ম নিয়ে অশান্তি নিত্যদিনের ঘটনা, যেখানে নবরাত্রির সময় উপবাস করা মানুষগুলোর জন্য বিশেষ নিরামিষ মিল তৈরি করে আইআরসিটিসি, অথচ আজ অবধি ইফতারের মিল পাননি কোনও মুসলিম যাত্রী, সেখানে রেকর্ড ভেঙে ইফতারের খাবার তৈরি করে দেওয়ার সৌজন্যে আইআরসিটিসির কর্মীদের প্রতি অভিভূত প্রত্যেকে। 

ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি) নবরাত্রির সময় তার হিন্দু যাত্রীদের 'উপবাস খাবার' পরিবেশন করে কিন্তু রমজানের সময় এই ধরনের কোনও পরিষেবা পাওয়া যায় না। তাই এদিনের ঘটনা বেশ অভিনব। উল্লেখ্য, আইআরসিটিসি ক্যাটারিং পরিষেবা নবরাত্রি উৎসবের মরসুমে একটি সম্পূর্ণ বিশেষ মেনু চালু করেছে। তবে এরকম কোনও পরিষেবা মুসলিম যাত্রীদের জন্য নেই। 

এই পরিষেবা পেয়ে বেশ খুশি ওই যাত্রী। তিনি গোটা অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপরেই ভাইরাল হয়ে যায় সেই পোস্ট। তিনি লেখেন, ট্রেনে উঠতেই তাঁকে চা দেওয়া হচ্ছিল, তবে সেই চা না খেয়ে তিনি খানিক্ষণ পরে তা নিয়ে আসতে বলেন। তিনি জানান যে তিনি উপবাস করছেন, তখন ওই আইআরসিটিসির কর্মীই জানতে চান যে তিনি রোজা রেখেছেন নাকি। তিনি হ্যাঁ বলতেই কিছু পরেই তার সামনে ইফতারের বিশেষ মিল চলে আসে। 

আইআরসিটিসি জানিয়েছে ওই ট্রেনের ক্যাটারিং ম্যানেজারের তত্বাবধানে গোটা বিষয়টি পরিচালনা করা হয়। তবে ওই ম্যানেজার গোটা কৃতিত্বই দিয়েছেন নিজের টিমকে। তিনি বলেন যখন কর্মীরা জানতে পারেন যে ওই ব্যক্তি রোজা করছেন, তখন নিজেদের খাবার থেকেই ওই যাত্রীর জন্য বিশেষ মিল তৈরি করে দেন কর্মীরা।