সংক্ষিপ্ত
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের (LoK Sabha Elections 2022) সুর বেঁধে দিল ২০২২ সালের ৫ রাজ্যের নির্বাচন (Assembly Elections 2022)। বিজেপির (BJP) দুর্দান্ত জয়ের পর নয়াদিল্লিতে (New Delhi) কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে কী বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)?
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের (LoK Sabha Elections 2022) আগে সেমিফাইনাল হিসাবে ধরা হয়েছিল ৫ রাজ্যের নির্বাচনকে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh Elections 2022) মতো বড় রাজ্যের ভোট ছিল। আর সেই ৫ রাজ্যের মধ্যে ৪ রাাজ্যেই জয় জয়কার হয়েছে বিজেপির (BJP)। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা মেয়াদের মধ্যকালে মোদী সরকারের (Modi Govt) প্রতি মানুষের সমর্থনেরই সূচক। আর এই দুর্দান্ত জয়ের পর, নয়াদিল্লিতে (New Delhi) বিজেপির সদর দফতরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে অভিনন্দন ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। কী বললেন তিনি?
প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী জানান, মহিলারা যেমন বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তেমন সর্বস্তরের মানুষ বিজেপির পক্ষে মত দিয়েছেন। এমনকী, প্রথমবারের ভোটাররাও বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। এর জন্য তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, উত্তরপ্রদেশ রাজ্য আমাদের দেশকে অনেক প্রধানমন্ত্রী দিয়েছে। কিন্তু, ৫ সালের মেয়াদ পূর্ণ করার পর, কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে আর দ্বিতীয় মেয়াদে ফেরায়নি এই রাজ্য। যোদী আদিত্যনাথ, এই প্রথম দ্বিতীয় মেয়াদে কাজ করার সুযোগ পেলেন। একই ১৯৮৯ সালের পর থেকে পরপর দু'বার কেউ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে থাকতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ৩ রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বিজেপির ভোট প্রাপ্তির হার বেড়েছে। গোয়ার সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। জনমত ঢলে রয়েছে বিজেপির দিকে। অল্পের জন্য একক সংখ্যা গরীষ্ঠতা পায়নি। উত্তরাখণ্ডেও ইতিহাস গড়েছে বিজেপি। রাজ্য গঠনের পর থেকে, পর পর দুবার একই দল সরকার গঠন করতে পারেনি। এবার বিজেপি সেটাই করে দেখাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এর অর্থ একটি পাহাড়ি রাজ্য (উত্তরাখণ্ড), একটি উপকূলবর্তী রাজ্য (গোয়া), মা গঙ্গার আশীর্বাদ-প্রাপ্ত রাজ্য (উত্তরপ্রদেশ), এবং উত্তরপূর্ব ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য (মণিপুর) - দেশের চারদিক থেকেই মানুষ আশীর্বাদ করেছে বিজেপিকে। এই চার রাজ্যের সমস্যা ভিন্ন-ভিন্ন। কিন্তু চার রাজ্যেই বিজেপির নীতি, বিজেপির নির্ণয়ের উপর ভরসা রয়েছে সাধারণ মানুষের।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এর আগে দেশের একাধিক সরকার, গরীবদের নাম করে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। কিন্তু, আখেরে গরীবরা তার লাভ পায়নি। তাদেরকে সেইসব প্রকল্পের সুবিধা পেতে সরকারি দফতরে দফতরে ঘুরতে হত, আধিকারিকদের ঘুস দিতে হত। কিন্তু, বিজেপি সরকার গরীবদের ভরসা দিয়েছে। তাদের পাওনা অধিকারের সুবিধা তাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। আর তা না দিতে পারলে তাঁর রাতে ঘুমই আসে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, এর আগে বিরোধীরা বিজেপির বিরুদ্ধে জাতপাতের রাজনীতি করার অভিযোগ করত। উত্তরপ্রদেশেরও বদনাম করত। বলত, এখানের ভোটে জাতপাতের রাজনীতি ছাড়া কিছু চলে না। কিন্তু, ২০১৪, ২০১৭, ২০১৯ এবং এই ভোটে উত্তরপ্রদেশে মানুষ বিজেপিকে সমর্থন করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ এখন তারা শুধু বিকাশবাদকেই সমর্থন করছে। বিরোধীদের তারা উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছে। তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের জাতির গর্ব দেশ গড়ার জন্য, দেশ ভাঙার জন্য নয়।
এই সেমিফাইনাল জয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর চোখ চলে গিয়েছে ফাইনাল, অর্থাৎ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকেও। তিনি বলেন, ২০১৯-এর ভোটের পর, অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই বলেছিলেন সেই ফল বিস্ময়কর ছিল না। ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনেই এর ফল নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আশা করবেন, ২০২২ সালের নির্বাচনের পরও তাঁরা সেই কথাই বলবেন। ২০২২ সালের নির্বাচনের ফল ২০২৪ সালের সুর বেঁধে দিয়েছে।
৫ রাজ্যের মধ্যে একমাত্র পঞ্জাবেই ছাপ ফেলতে পারেনি বিজেপি। তারপরও সেখানকার বিজেপি কার্যকর্তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, সেই রাজ্যের কর্মীরা বিশেষ প্রশংসার যোগ্য। কারণ, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তারা যেভাবে বিজেপির পতাকা তুলে ধরেছেন, তাতে আগামী দিনে পঞ্জাবেও বিজেপি শক্তিশালী দল হয়ে তুলবে। তিনি বলেন, 'আমি দেখতে পারছি পঞ্জাবে বিজেপি এক নয়া শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হবে। সীমান্তবর্তী এলাকার রাজ্য হলেও, সেই রাজ্যকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার কাজ করে যাবেন সেখানকার বিজেপি কার্যকর্তারা'।
এরপর প্রধানমন্ত্রী তোলেন করোনা মহামারির কথা। বলেন, এই ভোট হয়েছে গত ১০০ বছরের মধ্যে সবথেকে কঠিন মহামারির সময়ে। গোটা বিশ্বের মানুষ এই মহামারির সঙ্গে যুদ্ধ করছে। ভারত বেঁচে গিয়েছে, কারণ বিজেপি সরকারের নীতি মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষদের জন্য ছিল। আর মানুষের কল্যানের কাজে সরকারের নিষ্ঠা ছিল। তিনি আরও জানান, এই নির্বাচন বুঝিয়ে দিয়েছে, ভারতবর্ষে বংশবাদের রাজনীতির দিন ফুরিয়েছে। শীঘ্রই দেশ থেকে বিদায় নেবে এই রাজনীতি। দিন ফুরিয়েছে দুর্নীতিগ্রস্তদেরও।