সংক্ষিপ্ত

স্বয়ং মোদীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় ’দাদাগিরি’ করার অভিযোগ এনেছেন পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ। তিনি স্পষ্টতই কটাক্ষ করেছেন, ‘সব জায়গায় নিজেকে জাহির করাটা উন্মাদের লক্ষণ।’

‘লোকসভা ভোটের আগেই রাম মন্দির খোলার জন্য এতও তাড়াহুড়ো কেন?’ এই বিষয়ে আগেই বিজেপির প্রধান সেনাপতি নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছিলেন হিন্দু ধর্মগুরু শঙ্করাচার্যরা (Shankaracharyas)। তাঁদের এও জিজ্ঞাস্য ছিল যে, ধর্মীয় মন্দির খোলার অনুষ্ঠানে এতও রাজনৈতিক নেতাদের ডাকা হচ্ছে কেন? অযোধ্যার রাম মন্দিরের উদ্বোধন যে শাস্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে করা হচ্ছে, সেই জোরালো মন্তব্যের আবহে আরও একবার নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি দিলেন পুরীর শঙ্করাচার্য (Puri Shankaracharya)। 

 

স্বয়ং মোদীর (PM Modi) বিরুদ্ধে ধর্মীয় ’দাদাগিরি’ করার অভিযোগ এনেছেন পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ। তিনি স্পষ্টতই কটাক্ষ করেছেন, ‘সব জায়গায় নিজেকে জাহির করাটা উন্মাদের লক্ষণ।’ তাঁর এই ধরনের মন্তব্য শুনে কার্যত ক্ষুব্ধ হয়েছে গেরুয়া শিবির। সনাতনী ধর্মের শীর্ষ পদাধিকারীকে ‘হিন্দুত্ব বিরোধী’ বলার সাহস না দেখালেও, তাঁকে ‘বিজেপি বিরোধী’ ‘মোদী বিরোধী' , এমনকী ‘কংগ্রেসের শঙ্করাচার্য’ তকমা লাগানোর প্রচারেও নেমে পড়েছে পদ্ম-পক্ষের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং অন্যান্য নেতা-সমর্থকরা। তাতেও অবশ্য নিজের অবস্থান থেকে একচুল সরেননি স্বামী নিশ্চলানন্দ। তাঁর কথায়—‘আমার সঙ্গে যে বা যাঁরা দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন, তাঁরা নিজেরাই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। অস্তিত্ব হারিয়েছেন।’ তিনি বলেছেন, ‘মুঝসে যো টকরায়ে গা, চুরচুর হো জায়েগা!’ 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী অযোধ্যার মন্দিরের গর্ভগৃহে ‘রামলালা’ প্রতিষ্ঠা করবেন, তিনি ব্রাহ্মণ নন, তার ওপরে রাম মন্দির তৈরি করা এখনও সম্পন্ন হয়নি, লোকসভা ভোটে বিজেপির স্বার্থ-সিদ্ধির জন্যই রাম মন্দির ভোটের আগে খুলে দেওয়া হচ্ছে – এমনও মন্তব্য করেছেন অনেকে, এই সমগ্র বিষয়টি ক্ষুব্ধ করে তুলেছে হিন্দু ধর্মগুরুদের। 

(বিস্তারিত পড়ুন- 'রাম মন্দির উদ্বোধনে এত রাজনীতির লোকদের ডাকা হচ্ছে কেন?', ভোট নিয়ে মোদীকে খোঁচা হিন্দু ধর্মগুরুদের)

রাম মন্দিরের (Ayodhya Ram Temple) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে সরে এসেছেন ভারতের চারজন বিখ্যাত শঙ্করাচার্য। হিন্দু ধর্মের এই চার পদাধিকারীকে ‘সামলাতে’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তথা গেরুয়া শিবির আসরে নামলেও, শাস্ত্রের মর্যাদা রাখতে ‘যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত কিন্তু দিয়েই চলেছেন পুরীর শঙ্করাচার্য। সোমবার গঙ্গাসাগর মেলার শেষলগ্নে তাঁর প্রতিক্রিয়া—‘মূলায়ম সিং যাদব, লালুপ্রসাদ, নরসিমা রাও এমনকী জ্যোতি বসু আমার বিরোধিতা করেছিলেন। আমায় কিছু করতে হয়নি। নিজেরাই ক্ষমতাচ্যুত হয়ে অস্তিত্বহীন হয়েছেন। ’

কেন তাঁর প্রভাব অপরিসীম, এদিন সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। বলেছেন, ‘যাঁর কথায় লোভ, বিদ্বেষ, আর উদ্বেগ থাকে, সেই ব্যক্তির বাণীর কোনও প্রভাব পড়ে না। আমার বাণীতে এসব নেই বলেই আমার কথার প্রভাব আছে।’ দৃশ্যত অসন্তুষ্ট পুরীর শঙ্করাচার্য বলেন, ‘কংগ্রেসের লোক বলছে আমাকে! কিন্তু কংগ্রেসের সময় আমি কি জনসঙ্ঘের হয়ে কথা বলতাম? আপনারাই বলুন।’ তাঁর স্পষ্ট বার্তা—‘আমার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই। সেই কথা সোনিয়া, যোগী, মোদী প্রত্যেকে জানেন।’ কেমন হল এবারের গঙ্গাসাগর মেলা? যে জবাব স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর দিয়েছেন, তা নবান্নের শীর্ষস্তরকে খুশি করবেই। তাঁর কথায়—‘মেলার আয়োজনে রাজ্য সরকারের বিবেকের পরিচয় মিলেছে। সীমার মধ্যে থেকে মেলার আয়োজন করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। অযাচিত হস্তক্ষেপ করে মেলার মর্যাদা নষ্ট করার কোনও চেষ্টা হয়নি।’