সংক্ষিপ্ত

১৯৭৭ সালে জনতা সরকার ক্ষমতায় এসে টাটাদের হাত থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি  নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। এরপর থেকেই পতন শুরু হয় এয়ার ইন্ডিয়ার।

একসময় আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করত এয়ার ইন্ডিয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্থার ঋণ বাড়ে, রুগ্ন হয় শিল্প। অবশেষে ধুঁকতে থাকা এয়ার ইন্ডিয়ার রুগ্ন শরীরে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে ত্রাতার ভূমিকায় নামে টাটা গ্রুপ (Tata Group)। ৬৮ বছর পর (68 years) এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India) দায়িত্ব নেয় টাটা। বিশ্বের তাবড় তাবড় সব বিমান সংস্থাকে এক কড়া চ্যালেঞ্জের মুখেও ফেলে দিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া। এই সংস্থায় কাজ করা কর্মীদের জন্য দ্বার অবারিত করে দিয়েছিল বিশ্বের নামি-দামি সব বিমান সংস্থা। কিন্তু, ১৯৭৭ সালে জনতা সরকার ক্ষমতায় এসে টাটাদের হাত থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি  নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। এরপর থেকেই পতন শুরু হয় এয়ার ইন্ডিয়ার।

২০০৭ সালে যখন এয়ার ইন্ডিয়াকে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় তখন এই সংস্থার আর্থিক ক্ষতির বিশাল অঙ্কটা সামনে আসে। সরকার এরপর থেকেই এয়ার ইন্ডিয়াকে বিক্রি করার জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিল। সংস্থার মোট আর্থিক ক্ষতির অঙ্ক ১ লক্ষ কোটি টাকাতে পৌঁছে যায়। এয়ার ইন্ডিয়াকে বিক্রি করতে না পারলে সংস্থাকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না বলেও একটা সময় সরকার তা স্পষ্ট করেছিল। 

কেন্দ্র সরকারের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাথমিক নথি জমা দিতে হবে, পাশাপাশি কেনার ব্যাপারে আগ্রহীদের এয়ার ইন্ডিয়ার ২৩,২৮৭ কোটি টাকা ঋণের ও অন্যান্য দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি, এই বিমান সংস্থার মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ কোনও ভারতীয়র কাছেই থাকতে হবে। 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ভারত সরকার এয়ার ইন্ডিয়ার ৭৬ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে চেয়েছিল। আগের বার যে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তাতে সম্ভাব্য ক্রেতার  ৩৩,৩৯২ কোটি টাকার ঋণ ও বর্তমান দায় নেবার কথা ছিল। মহারাজা মাসকটের জন্য বিখ্যাত এয়ার ইন্ডিয়ায় বর্তমানে স্থায়ী ও চুক্তি ভিত্তিক মিলিয়ে মোট কর্মী রয়েছেন ১৩,০০০ জন, যার মধ্যে পাইলটের সংখ্যা ১,৮৫০ বেশি এবং কেবিন ক্রু রয়েছেন ৪,৬০০ জন।

১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২১

সরকার জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়াকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এর জন্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে দরপত্র এবং নতুন মালিকের বিষয়ে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সেরে ফেলার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে কেন্দ্র। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই নিয়ে সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট করে। সেই মোতাবেক এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়াকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে কাজ শুরু করে কেন্দ্রের মোদী সরকার। 

সেই প্রক্রিয়া মোতাবেক এয়ার ইন্ডিয়া কেনার জন্য দরপত্র জমা করেন অসামরিক বিমান পরিবহণের এক খ্যাতনামা ব্যক্তি অজয় সিং। তাঁর হাত ধরেই জন্ম নিয়েছিল টাটা গ্রুপের অসামরিক বিমান পরিবহণের ব্যবসা। এছাড়াও তিনি স্পাইস জেটের প্রতিষ্ঠাতা। জানা যায় অজয় সিং এয়ার ইন্ডিয়া কেনার জন্য দরপত্র জমা করেছেন। এর সঙ্গে সূত্রের খবর মারফত জানা যায় যে অসামরিক বিমান পরিবহণের কাছে বহু দরপত্র জমা পড়েছে। সরকার এবার কার হাতে এয়ার ইন্ডিয়াকে তুলে দেবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে বলেও জানানো হয়। 

ভারত সরকারের বিনিয়োগ এবং পাবলিক অ্যাসেট বিভাগ তথা ডিআইপিএএম-এর সচিব তুহিন কান্ত পাণ্ডে টুইট বার্তায় জানান, ট্যান্সাকশন অ্যাডভাইসারের কাছে এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির যাবতীয় দরপত্র জমা পড়ে গিয়েছে। সরকারের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে এয়ার ইন্ডিয়ার দরপত্র জমা নেওয়া এবং মালিকানাকে নির্বাচন করার সঙ্গে সঙ্গে এখন যে বিষয়টি-র উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে তা হল রিজার্ভ প্রাইস ফিক্সেশন এবং সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স। সরকারের এই সূত্রে জানানো হয়েছে যে একের বেশি দরপত্র জমা পড়েছে এয়ার ইন্ডিয়াকে কেনার জন্য। তবে এর থেকে বেশি কোনও তথ্য এই মুহূর্তে তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয় বলেও এই সূত্রে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। 

অজয় সিং-একটি কনসোরটিয়াম-এর পক্ষ থেকে দরপত্র জমা করেছেন বলেও সরকারের এই সূত্রে দাবি করা হয়। কে কেমন দরপত্র দিয়েছে- এই বিষয়টি পর্যালোচনা করতে এবং দরপত্রের গভীরতা খতিয়ে দেখতে অন্তত ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময় লাগবে বলেও সরকারের এই সূত্রে খবর মেলে। আর এই সময়ের মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়ার নতুন মালিকের নাম ঘোষণা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। 

১লা অক্টোবর, ২০২১

ব্লুমবার্গের তরফে দাবি করা হয় সরকারি বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে টাটা গোষ্ঠীর (Tata Sons) হাতে। এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India) দরপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন নিজেদের দর জমা করেছিল টাটা গোষ্ঠী। আর শেষ মুহূর্তে নিজেদের দরপত্রেই বাজিমাত করে এই গোষ্ঠী। কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের (Ministry of Civil Aviation) তরফে জানানো হয়, টাটা সন্সের জমা দেওয়া দরপত্রটি গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে এয়ার ইন্ডিয়ায় প্রায় ৮৪ শতাংশ শেয়ার চলে যাবে যাবে রতন টাটার (Ratan Tata) সংস্থার হাতে।

তবে সবাইকে চমকে দিয়ে শেষমুহুর্তে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা সংক্রান্ত যাবতীয় মিডিয়া রিপোর্ট (Media reports) অস্বীকার করে কেন্দ্র। ঋণগ্রস্থ এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য টাটা গ্রুপ বিড জিতেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ব্লুমবার্গ আগে জানিয়েছিল যে টাটা সন্স এয়ার ইন্ডিয়া অধিগ্রহণ করতে চলেছে। কিন্তু সেই রিপোর্ট খারিজ করে অর্থমন্ত্রক জানায় এয়ার ইন্ডিয়া ডিসইনভেস্টমেন্ট মামলায় ভারত সরকারের আর্থিক বিড অনুমোদনের ইঙ্গিত দিয়ে যে মিডিয়া রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তা ভুল।

উল্লেখ্য, ১৯৩২ সালে টাটা গোষ্ঠীর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল দেশের প্রথম বিমান সংস্থা। তখন এর নাম ছিল টাটা এয়ারলাইন্স। ১৯৪৬ সালে সেই সংস্থার নাম বদল করা হয় এয়ার ইন্ডিয়া। ১৯৫৩ সালে ওই সংস্থাটি কেন্দ্রীয় সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছিলেন জেআরডি টাটা। এই মুহূর্তে বাজারে এয়ার ইন্ডিয়ার ঋণের পরিমাণ ৪৩ হাজার কোটি টাকা। 

৮ই অক্টোবর, ২০২১

অবশেষে জন্মদাতার হাতেই ফেরে এয়ার ইন্ডিয়া। DIPAM সচিব তুহিনকান্ত পান্ডে এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলেন, যে টাটা গ্রুপ এয়ার ইন্ডিয়ার অকশনে (Air India Sale) বিড জিতেছে। এজন্য টাটাকে দিতে হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা (Rs 18,000 crore)। আশা করা হয় যে ডিসেম্বরের মধ্যে টাটাদের কাছে এয়ার ইন্ডিয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হবে। 

এয়ার ইন্ডিয়া পুরোনো কোনও কর্মীকে ছাঁটাই করা হবে না বলে জানানো হয় টাটা গ্রুপের পক্ষ থেকে। প্রথম এক বছর তাঁদের রেখে দেওয়া হবে। এই মুহূর্তে দেশের বিমানবন্দরে এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে ৪ হাজার ৪০০টি দেশীয় এবং ১ হাজার ৮০০টি আন্তর্জাতিক ল্যান্ডিং ও পার্কিং স্লট রয়েছে। একই সঙ্গে ৯০০টি জায়গা নেওয়া রয়েছে বিদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে। এসবই টাটা গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন হতে চলেছে।