সংক্ষিপ্ত

সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখ এবং হিন্দুত্বের জোরে বিজেপি নির্বাচনে জিততে পারবে না। বিজেপিকে স্থানীয় স্তরে নতুন নেতাদের এগিয়ে আনতে হবে।

ভারতীয় জনতা পার্টিকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএসের। আরএসএস তাদের মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে লিখেছে যে বিজেপিকে ভবিষ্যতে নির্বাচনে জয়লাভ অব্যাহত রাখতে হলে শুধুমাত্র মোদী জাদু এবং হিন্দুত্বের ইস্যু যথেষ্ট হবে না। শুধু তাই নয়, এই সম্পাদকীয়র মাধ্যমে কর্ণাটকে বিজেপির পরাজয়ের কারণও ব্যাখ্যা করেছে সংঘ।

আগামী বছর দেশে লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। এর আগে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনও হওয়ার কথা। এর মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড়, মিজোরাম এবং রাজস্থান। মধ্যপ্রদেশে এখন বিজেপির সরকার। ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে ক্ষমতায় কংগ্রেস। তেলঙ্গানায় বিআরএস এবং মিজোরামে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ক্ষমতায় রয়েছে। এই নির্বাচনের মধ্যেই সংঘের মুখপত্রে প্রকাশিত এই নিবন্ধটি রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠছে কেন সঙ্ঘ বিজেপিকে এমন পরামর্শ দিল? ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে এর রাজনৈতিক তাৎপর্য কী?

আগে জেনে নিন সঙ্ঘ তাদের মুখপত্রে বিজেপি সম্পর্কে কী লিখেছে?

আরএসএস তার মুখপত্র অর্গানাইজার-এ একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। এতে কর্ণাটক নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই সম্পাদকীয়টি লিখেছেন অর্গানাইজার সম্পাদক প্রফুল্ল কেতকর। এতে কর্ণাটক নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছিল কর্ণাটকে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করতে হয়েছে। নির্বাচনে হেরেছেন ১৪ মন্ত্রী। এটা চিন্তার বিষয়।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, 'যখন জাতীয় স্তরের নেতৃত্বের ভূমিকা ন্যূনতম হয় এবং নির্বাচনী প্রচার স্থানীয় স্তরে রাখা হয়, তখন কংগ্রেস লাভবান হয়। পরিবার-চালিত দল কংগ্রেস রাজ্য স্তরে একটি ঐক্যবদ্ধ মুখ তুলে ধরার চেষ্টা করেছে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখ এবং হিন্দুত্বের জোরে বিজেপি নির্বাচনে জিততে পারবে না। বিজেপিকে স্থানীয় স্তরে নতুন নেতাদের এগিয়ে আনতে হবে। কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে, তবেই বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিততে পারে।

সম্পাদকীয়তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় থাকা নয় বছরের কৃতিত্বের প্রশংসা করা হয়েছে। এতে লেখা হয়েছে, '২০১৪ সালে ভারতের অধিকাংশ মানুষ গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং তার সরকার উচ্চাকাঙ্খী লক্ষ্যগুলির সাথে সেই আকাঙ্ক্ষাগুলিতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে এবং অনেক ফ্রন্টে কাজ করেছে।

আয়োজক লিখেছেন, 'বিজেপি নেতৃত্ব নির্বাচনে জাতীয় ইস্যু আনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কংগ্রেস স্থানীয় ইস্যু ছাড়েনি। এটাই কংগ্রেসের জয়ের সবচেয়ে বড় কারণ। আরও বলা হয় যে কর্ণাটক নির্বাচনে জাতপাতের ইস্যুতে ভোট সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে এই রাজ্যটি প্রযুক্তির হাব। এমন পরিস্থিতিতে এটা চিন্তার বিষয়।

কী বলল কংগ্রেস?

সংঘের এই সম্পাদকীয়তে কংগ্রেসের বক্তব্যও এসেছে। বিজেপিকে সংঘের দেওয়া উপদেশের প্রতিক্রিয়ায়, কংগ্রেস নেতা এবং কর্ণাটকের ইনচার্জ রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন যে বিজেপি এবং আরএসএস মেনে নিয়েছে যে কর্ণাটকের জনগণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রত্যাখ্যান করেছে। যারা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে মহিমান্বিত করেন তাদের এ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

সঙ্ঘের এই পরামর্শের রাজনৈতিক তাৎপর্য কী?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, 'সঙ্ঘ কর্ণাটক নির্বাচনের উদাহরণ দিতে পারে, তবে সাম্প্রতিক অতীতে অনুষ্ঠিত সমস্ত রাজ্য নির্বাচনের উল্লেখ রয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিকে সতর্ক করার চেষ্টা করছে সংঘ। যাতে, কর্ণাটক এবং হিমাচল প্রদেশে বিজেপি যে ত্রুটি করেছে তার পুনরাবৃত্তি না করা উচিত। এই সম্পাদকীয়র মাধ্যমে বিজেপিকে তিনটি বড় বার্তা দিয়েছে সংঘ।

১. নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা:

সঙ্ঘ বলেছে যে প্রতিটি নির্বাচনে মোদীর নাম ব্যবহার করা ঠিক নয়। আর কতদিন মোদীর নামে নির্বাচন লড়বে বিজেপি? সেজন্য দলের স্থানীয় মুখ খোঁজা উচিত। স্থানীয় পর্যায়ে নতুন মুখকে শক্তিশালী করে দায়িত্ব দিতে হবে। নতুন মুখের আগমনে দলে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরি হবে, যা আগামী দিনে দলের জন্য উপকৃত হবে।

২. নির্বাচনে জাতীয় না হয়ে আঞ্চলিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে:

এটি আরেকটি বড় বার্তা। সাধারণত বিজেপি প্রতিটি নির্বাচনে জাতীয় ইস্যু তুলে ধরে। এটি অনেক জায়গায় উপকারী হলেও অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

৩. দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে:

২০১৪ সালে, প্রধানমন্ত্রী মোদী দুর্নীতির ইস্যুতে পুরো নির্বাচন লড়াই করেছিলেন। এরপর বড় জয় পায় দলটি। আজও এই ইস্যুটি বিজেপির মূল এজেন্ডায় রয়েছে। অন্যদিকে কর্ণাটকে ক্ষমতায় থাকাকালীন বিজেপি সরকার দুর্নীতির অনেক অভিযোগের সম্মুখীন হয়। কংগ্রেস এখন জাতীয় স্তরে তা তুলে ধরার চেষ্টা করবে। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি শাসিত সব রাজ্যেই বিশেষ যত্ন নিতে হবে। যাদের দুর্নীতির কলঙ্ক আছে, তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।