সংক্ষিপ্ত

গাড়ি কীভাবে চলে তা জানার নেশাও কম ছিলো না মেয়ের। তাইবার এই জানার কৌতূহল নিছক ছেলেমানুষ মনের প্রশ্ন ভেবে সেই সময় বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা। কিন্তু তখন কে জানত এই ছোট্ট তাইবা আফরোজা একদিন আকাশ সমান উঁচুতে উড়বে (Pilot)।

পাটনা: ইচ্ছা থাকলে যে কোনও কিছুই অসম্ভব নয় তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন বিহারের (Bihar News) ছাপড়া জেলার আফরোজা। মনের জোর আর ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনও বাধা যে বাধা নয়, আকাশে উড়ে প্রমাণ করে দিয়েছে সে। তাইবা আফরোজ। বিহারেরে ছাপড়া জেলার বাসিন্দা। ছোটোবেলা থেকে দারিদ্রতাকে নিত্যসঙ্গী করে বেড়ে উঠেছে সে। ছোটোবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে যখন রাস্তায় বেরোত তখন থেকেই রাস্তার যানবাহনের প্রতি তার কৌতূহল ছিলো ভীষণ। গাড়ি কীভাবে চলে তা জানার নেশাও কম ছিলো না মেয়ের। তাইবার এই জানার কৌতূহল নিছক ছেলেমানুষ মনের প্রশ্ন ভেবে সেই সময় বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা। কিন্তু তখন কে জানত এই ছোট্ট তাইবা আফরোজা একদিন আকাশ সমান উঁচুতে উড়বে (Pilot)।

ছাপড়ার (Chapra) প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে এখন পাইলট। গাড়ির স্টিয়ারিং নয়, স্বপ্ন সফল করতে আফরোজা হাতে তুলে নিয়েছে ককপিটের ইয়োক (Taiba Afroz)। জালালপুরের আফরোজাকে গোটা শহর একনামে চেনে। তাইবা পাইলট। কারণ, শহরের মধ্যেই তিনিই প্রথম মহিলা পাইলট। তবে আফরোজার পাইলট হওয়ার শুরুর পথটা মোটেও মৃসণ ছিলো না। তাইবার বাবার রেশনের দোকান। করোনা পরিস্থিতিতে তাও সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা, করোনায় আক্রান্ত হন তাইবার বাবা। যমে মানুষে টানাটানিতে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেও কোভিডকালে কাজকর্ম সেভাবে না হওয়ায় একদিকে আফরোজার পড়াশোনা চালানোর খরচ, অন্যদিকে সংসার চালাতে গিয়ে প্রায় হিমশিম অবস্থা পরিবারের। যদিও মেয়ের স্বপ্নকে সফল করতে পিছুপা হটেননি আফরোজার মা-বাবা কেউই। তাই তো একমাত্র সম্বল সাধের জমি বিক্রি করে দিয়ে চালিয়েছেন মেয়ের পড়াশোনার খরচ। ততদিনে আফরোজা অবশ্য ভর্তি হয়ে গিয়েছিলো ভুবনেশ্বরের গভর্নমেন্ট এভিয়েশন ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে। পাড়া পড়শীদের চোখ রাঙানি, সমালোচনাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে তাইবা। ২০০ ঘণ্টার পরীক্ষা, কঠিন অধ্যাবসায় সাফল্যের পথ দেখিয়েছে আফরোজাকে। শেষপর্যন্ত জয়ের মুকুট উঠেছে আফরোজার মাথায়। ছাপড়ার আফরোজা আজ সফল পাইলট।

কেরিয়ারে সফল পাইলট হলেও থামেনি সমালোচকদের তীর্যক মন্তব্য। পাইলটের পোশাকে আফরোজাকে দেখে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ তাঁকে বোরখা পরা, ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে খোঁচা দিতে ভোলেননি। যদিও সেসবকে থোড়াই কেয়ার। নিজের লক্ষ্যে অবিচল তাইবা আফরোজা। স্বপ্ন তাঁর এখন একটায়, মেয়েকে পাইলট করে তুলতে যে বাবা-মা একদিন জমি বিক্রি করে দিয়েছিলো, তাঁদের এবার বিমানের সিটে বসিয়ে ককপিটের ইয়োক ধরে মেয়ে মা-বাবাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে মেঘেদের পাশ দিয়ে। আর এই আফরোজায় প্রমাণ করে দিলো মনের জোর থাকলে সবকিছু জয় করা যায়। কোনও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দাঁড়াতে পারে না বাধা হয়ে।