বিহারের আরজেডি-তে টিকিট বণ্টন নিয়ে বড়সড় রদবদল। লালু যাদবের দেওয়া প্রতীক তেজস্বী যাদব ফিরে আসার পর রাতেই ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এই ঘটনা দলে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ বা নতুন রাজনৈতিক কৌশলের জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
পাটনা: বিহারের রাজনীতিতে সোমবারের রাতটা আরও একবার নাটক, সাসপেন্স এবং জল্পনায় ভরা ছিল। রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD)-এ টিকিট বণ্টন নিয়ে গভীর রাতে বড়সড় রদবদল ঘটে। দিনের বেলায় যেখানে স্বয়ং লালু প্রসাদ যাদব বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে দলের নির্বাচনী প্রতীক (সিম্বল) তুলে দিয়েছিলেন, সেখানে রাত গড়াতেই সেই প্রার্থীদের রাবড়ি দেবীর ১০ সার্কুলার রোডের বাসভবনে ডেকে প্রতীক ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
এই পুরো ঘটনাটি শুধু কর্মীদেরই হতবাক করেনি, রাজনৈতিক মহলেও নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এখন আলোচনা চলছে যে এই পদক্ষেপটি কি আরজেডি-র অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের ফল, নাকি কোনো নতুন রাজনৈতিক কৌশল?
কোন কোন নেতার টিকিট কেড়ে নেওয়া হল
সূত্র অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যায় লালু যাদব যে ৪ জন নেতাকে প্রতীক দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মনেরের বিধায়ক ভাই বীরেন্দ্র, পারাবাত্তার ডা. সঞ্জীব, মাটিহানির বোগো সিং এবং সন্দেশ আসনের অরুণ যাদবের ছেলে। এই সমস্ত নেতাদের ছবি দিনের বেলায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, যেখানে তাঁদের লালু প্রসাদ যাদবের কাছ থেকে প্রতীক নিতে দেখা যায়। কিন্তু তেজস্বী যাদব দিল্লি থেকে পাটনায় ফেরার পরেই হঠাৎ খেলা ঘুরে যায়। রাত প্রায় ১০টা নাগাদ সবাইকে রাবড়ি দেবীর বাসভবনে ডেকে তাঁদের কাছ থেকে প্রতীক ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
প্রতীক দেওয়াই হয়নি, সাফাই দিলেন ফাতমি
বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হলে আরজেডি নেতা আলি আশরাফ ফাতমি মিডিয়ার সামনে এসে সাফাই দেন। তিনি বলেন, “কাউকেই কোনো প্রতীক দেওয়া হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছবিগুলো ঘুরছে, সেগুলো হয় ২০২০ সালের নির্বাচনের, নয়তো এআই দিয়ে তৈরি। লালুজি কাউকে প্রতীক দেননি।” যদিও, ফাতমির এই বক্তব্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, কারণ সন্ধ্যার ছবিগুলো অনেক সাংবাদিক এবং স্থানীয় নেতার মোবাইলে ছিল, যা আরজেডি-র মিডিয়া উইং নিজেই শেয়ার করেছিল।
রাত ২টা পর্যন্ত রাবড়ির বাড়িতে নেতাদের ভিড়
সোমবার রাত প্রায় ২টা পর্যন্ত রাবড়ি দেবীর সরকারি বাসভবনে নেতাদের ভিড় ছিল। ভেতরে কী আলোচনা হয়েছে তা কেউ জানে না, কিন্তু বাইরে অপেক্ষারত কর্মীদের মধ্যে নানা ধরনের জল্পনা চলছিল। অনেককে বলতে শোনা যায় যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে যেতে পারে এবং আরজেডি কোনো নতুন দল বা মুখের সঙ্গে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। কিছু কর্মী এমনও ফিসফিস করছিলেন যে, টিকিট বণ্টন নিয়ে দলের ভেতরে লালু যাদব এবং তেজস্বী যাদবের মধ্যে মতবিরোধ চলছে।
সঞ্জয় যাদব ও প্রিন্স পাসোয়ানের উপস্থিতিতে জল্পনা
রাত প্রায় আড়াইটার সময় রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় যাদব রাবড়ির বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। মজার বিষয় হল, তাঁর গাড়িতে প্রাক্তন সাংসদ প্রিন্স পাসোয়ানও বসেছিলেন। প্রিন্স পাসোয়ান সম্প্রতি কোনো জোটেই তাঁর দল মিশবে না বলে ঘোষণা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও রাবড়ির বাড়িতে তাঁর উপস্থিতি এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আরজেডি হয়তো কোনো নতুন রাজনৈতিক জোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এর রাজনৈতিক তাৎপর্য কী?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তেজস্বী যাদব এখন দলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে চাইছেন। টিকিট বণ্টনের ক্ষেত্রে তাঁর “ভিটো” এটাই প্রমাণ করে যে, এখন লালুর পুরনো বিশ্বাসভাজনদের বদলে নতুন টিম এবং নতুন কৌশলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এমন সম্ভাবনাও রয়েছে যে, কিছু আসনে আরজেডি মহাজোটের বাইরে গিয়ে কৌশলগত জোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সেই কারণেই টিকিটের তালিকা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।


