সংক্ষিপ্ত

'আমি এখন আইএএস অফিসার', মেয়ের ফোন পেয়ে চোখ ভিজে গেল বাসচালক বাবার। অভাব-অনটনের সব বাধা পেরিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌছলেন দিল্লির মেয়ে প্রীতি।

'আমি এখন আইএএস অফিসার', মেয়ের ফোন পেয়ে চোখ ভিজে গেল বাসচালক বাবার। অভাব-অনটনের সব বাধা পেরিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌছলেন দিল্লির মেয়ে প্রীতি। দিনআনা দিনখাওয়া দিল্লির এই পরিবারের অনুমান, উচ্চ শিক্ষা অনেকটাই যেনও বিলাসিতার সমান। প্রীতির মা-বাবা ভেবেছিলেন, মেয়ের স্কুল শেষ হলেই বিয়েটা দিয়ে দেবেন। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া এই পরিবারের চিন্তাভাবনা বদলে দিল তাঁদের মেয়ে। সে প্রমাণ করেদিল যেকোনও অবস্থা, পরিস্থিতিতেই শিক্ষা বিলাসিতা নয়, সর্বোচ্চ আলো। স্কুল লাইফ থেকেই আইএএস হওয়ার ইচ্ছে দিল্লির মেয়ে  প্রীতির। কিন্তু বাবা অহরহ ভেবেই চলেছেন, বারো ক্লাস পেরোলেই বিয়ে দিয়ে দেবেন। তাহলে স্বপ্ন সত্যি হবে কী করে। শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে থাকননি প্রীতি। তাই শুধুই বারো ক্লাস করে থেমে থাকা নয়, সুদূর পিএইচডি-র শিখরও জয় করেন প্রীতি। এখন তিনি একজন আইএএস অফিসার। 

ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনা করতে ভালবাসতেন দিল্লির মেয়ে প্রীতির। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা সত্ত্বেও দশম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় প্রীতি ৭৭ শতাংশ নাম্বার পেয়েছিলেন। বাড়িতে যখন তাঁর বিয়ে নিয়ে তোড়জোড় চলছে, প্রীতি স্থির করেন নিজের পায়ে না দাড়িয়ে কিছুতেই  সংসার করবেন না।বাবা-মাকে সেই কথা বলার সাহস না থাকলেও অন্যপথ নিয়ে ছিলেন দিল্লির  বাসচালক বাবার মেয়ে প্রীতি। দ্বাদশের ফল ভাল হলে  বাবা খুশি হবেন, ভাবতেই পড়াশোনাও আরও ভালভাবে করা শুরু করলেন। পড়াশোনার সময়ও দিলেন বাড়িয়ে। ফলফলেও এল তার প্রভাবে। দ্বাদশ  শ্রেণীর পরীক্ষায় ৮৭ শতাংশ নিয়ে পাশ করলেন প্রীতি। আর এই রেজাল্ট পরিবাররে চিন্তাভাবনা বদলিয়ে দিল। 

আরও পড়ুন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের সামনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে কোয়াড, জাপানে সম্মেলনে বললেন মোদী

কলেজে যেতে চান প্রীতি, কিন্তু বাধা দিলেন না বাবা। বরং নুন আনতে পান্তা ফুরয় অভাবের এই পরিবারে সাহস করলেন বাবা। মেয়েকে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে বললেন। দিল্লির লক্ষ্মীবাই কলেজ ভর্তি হলেন প্রীতি। স্নাতক পরীক্ষায় ফল দ্বাদশ শ্রেনির থেকেও ভাল এল। এরপর স্নাতোকত্তর শেষ করে স্বপ্নের আরও কয়েক ধাপ সিড়ি এগোলেন প্রীতি। পেলেন পছন্দের জেএনইউ পড়ার সুযোগ। পিএইচডি শেষ করলেন সেখান থেকেই। প্রীতিদের আধিবাড়ি হরিয়ানার বাহাদুরগড়ে। বাবা দিল্লি ট্রান্স পোর্ট কর্পোরেশনে কাজ করেন। সেই সূত্রে তিনি থাকতেন দিল্লিতে। জেএনইউ-তে গবেষণার পাশাপাশি চলত ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি। তবে প্রীতি প্রথমবার হার মানলেও হাল ছাড়েননি। আরও দ্বিগুন জেদ নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। বাড়িয়ে দেন পড়ার সময়। আর তারপরেই সাফল্য আসে দ্বিতীয় বারে। ২০১৭ সালে প্রীতির সর্বোভারতীয় র ্যাঙ্ক ২৮৮ ।

 আরও পড়ুন, এলন মাস্কের ভারতীয় টুইটার বন্ধু প্রণয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত গল্প জুড়লেন তাঁরা

যে বাবা একটা সময় মেয়ের পডা়শোনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন, সেই বাবাই মেয়ের ফোন পেয়ে কেঁদে ফেললেন। প্রীতির কথায়,' ইউপিএসসির রেজাল্ট দেখে বাবাকে ফোন করেছিলাম। বাবা তখন বাস চালাচ্ছেন।  ফোনে বললাম বাবা, আমি এখন আইএএস অফিসার। কিছু সময় যেন বয়ে গেল নিস্তব্ধতায়। তারপর ফোনের ওপারে কেঁদে ফেললেন বাবা।' স্বপ্ন সত্য়ি করতে হলে লড়াই করতেই হবে, দাবি আইএএস প্রীতির।

আরও পড়ুন, আজও কি বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি কলকাতা-সহ বঙ্গে ? কী বলছে হাওয়া অফিস