বহুদিন ধরেই বাজারে নতুন ৫০ টাকার কয়েন চালু এবং ১০ ও ২০ টাকার কয়েন বন্ধের জল্পনা ছড়িয়েছে। তবে এবার সেই জল্পনারই অবসান করল অর্থ মন্ত্রক।
বহুদিন ধরেই বাজারে কিছু নতুন জলপনার সৃষ্টি হয়েছিল। এক, ৫০ টাকার কয়েন চালু হওয়ার সম্ভাবনা, এই বিষয়ে দৃষ্টিহীনদের পক্ষে আবেদনও জমা পড়ে আদালতে; দুই, ১০ ও ২০ টাকার কয়েন নাকি উঠে যাবে, অর্থমন্ত্রকেও এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তবে, সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লি হাইকোর্টে জানিয়ে দিয়েছে তার বক্তব্য।
আবেদনে কী ছিল?
বর্তমানে বাজারে ১, ২, ৫, ১০ এবং ২০ টাকার কয়েন প্রচোলিত রয়েছে। তবে, ৫০ টাকার কোনও কয়েন নেই। আইনজীবী রোহিত ডন্ড্রিয়াল এবং মিনি আগরওয়ালের দায়ের করা একটি অভিযোগপত্রে বাজারে ৫০ টাকার নোট আনার আবেদন রাখেন তারা। কারণ হিসেবে বলা হয়, ৫০ টাকার নোটের নকশার কারণে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা দুর্দশার মুখোমুখি হচ্ছেন, তাদের খেতে মূল্যের পার্থক্য করাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই কারণে ৫০ টাকার কয়েন প্রবর্তন করার দাবি তুলেছিলেন এই দুই আইনজীবী।
আবেদনকারীদের দাবি, এই ৫০ টাকার নোট ১০০ টাকা কিংবা ৫০০ টাকার নোটের থেকে দৃশ্যত আলাদা করা যায় না। বর্তমানে এগুলোর কোনও মুদ্রা বিকল্প হিসেবে বাজারে পাওয়া যায় না। ৫০ টাকার নোটে এমন কোনও স্পর্শগ্রাহ্য চিহ্ন নেই যার ফলে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা এই নোটগুলি চিনতে পারেন।
আবেদনের ভিত্তিতে কেন্দ্রের অবস্থান
এই দুই আইনজীবীর অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক স্বীকার করেছে যে মহাত্মা গান্ধী সিরিজের নতুন নোটগুলিতে ১০ টাকা, ২০ টাকা ও ৫০ টাকার ক্ষেত্রে স্পর্শগ্রাহ্য কোনও চিহ্ন নেই যা ১০০ টাকা, ২০০ টাকা কিংবা ৫০০ টাকার নোটে রয়েছে।
তবুও সরকার এই আবেদন খারিজ করেছে। সরকারের বক্তব্য নতুন মুদ্রা তৈরি করবো মুখে বলে দিয়েই তৈরি করা যায় না। আগে পরীক্ষা করে দেখা হয় যে, মানুষ ৫০ টাকার কয়েন ব্যবহার করবে কিনা এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য তা সহায়ক কিনা। তবেই সেই নতুন মুদ্রা তৈরি করা হয়।
এছাড়াও, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) -এর একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মানুষ মুদ্রার চেয়ে ১০ এবং ২০ টাকার নোট বেশি পছন্দ করেন। মানুষ মুদ্রাকে খুব ভারী এবং আকারে বড় বলে মনে করে। এই কারণে, সরকার এখনই ৫০ টাকার কয়েন চালু করার কোনও পরিকল্পনা করেনি।
তবে দৃষ্টিহীনদের জন্য সমাধান কী?
RBI -এর MANI অ্যাপ দৃষ্টিহীনদের সাহায্য করে। এই অ্যাপটি দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের নোটের মূল্য জানতে সাহায্য করে। এই অ্যাপের মাধ্যমে নোট স্ক্যান করলেই নোটের পরিমাণ জানা যাবে। তাই যে সমস্যার ভিত্তিতে আবেদন করা হয়েছিল, সমাধান মিলবে। সুতরাং এক্ষুনি ৫০ টাকার কয়েন বাজারে আনার দরকার নেই।
১০ ও ২০ টাকার কয়েন উঠে যাওয়ার জল্পনা নিয়ে কী বলছেন অর্থ মন্ত্রক?
১০ ও ২০ টাকার কয়েন উঠে যাওয়া নিয়ে অর্থমন্ত্রকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে জবাবে অর্থ মন্ত্রক জানান, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২,৫২,৮৮৬ লক্ষ ১০ টাকার নোট বাজারে প্রচলিত রয়েছে, যার মূল্য ২৫২৮৯ কোটি টাকা। আবার ২০২৪ -এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বাজারে ৭৯,৫০২ লক্ষ ১০ টাকার কয়েন রয়েছে, যার মূল্য ৭৯৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, আজও দেশে ১০ এবং ২০ টাকার কয়েন ও নোট ছাপা হচ্ছে।
এরপর ২০ টাকা নোট ছাপানো নিষিদ্ধ করা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অর্থ মন্ত্রক বলেন, এরকম কিছুই হচ্ছে না। বাজারে ১০ টাকা এবং ২০ টাকার নোট ও কয়েন কম পেলেও সেগুলি এখনও প্রচলিত রয়েছে এবং সেগুলি বন্ধ করা হয়নি।


