সংক্ষিপ্ত
দিল্লির রোহিণী কোর্টে শুটআউটের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন গ্যাংস্টার তিলু তাজপুরিয়া। জেলের অন্দরেই তাঁর প্রতিপক্ষ যোগেশ টোন্ডা নিজের দলবল নিয়ে এসে তিলুকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে সেই রড ঢুকিয়ে দেয় তিলুর শরীরে।
অনুব্রত মণ্ডল তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন ৬ নম্বর সেলে, তাঁর পাশের সেল, ৭ নম্বরেই বন্দি রয়েছেন তাঁর কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। আর, মঙ্গলবার সকালে ঠিক তার পাশের সেলেই ঘটে গেল রক্তারক্তি কাণ্ড। ৮ নম্বর সেলে বন্দি ছিলেন কুখ্যাত দুষ্কৃতী যোগেশ টোন্ডা, আর ৯ নম্বরে ছিলেন গ্যাংস্টার তিলু তাজপুরিয়া। এই যোগেশ টোন্ডার সাথে তিলু তাজপুরিয়ার শত্রুতা ছিল দীর্ঘ দিনের। মঙ্গলবার ভোরে যোগেশ তাঁর ৩ সহযোগী দীপক তিতার, রাজেশ সিং ও রিয়াজ খানকে নিয়ে জেলের লোহার গ্রিল টপকে উঠে হামলা করে তিলু তাজপুরিয়ার ওপর। লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে সেই রড তিলুর শরীর ফুঁড়ে ঢুকিয়ে দেয় যোগেশ টোন্ডা ও তার দলবল। রক্তাক্ত অবস্থায় দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসকরা তিলুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কুখ্যাত গ্যাংস্টার তিলু পূর্ব জীবনে পরিচিত ছিলেন সুনীল মান নামে। কে এই সুনীল মান, কোন কুকর্মে তিনি হয়ে উঠলেন গ্যাংস্টার তিলু তাজপুরিয়া?
বর্তমানে তিলুর বয়স হয়েছিল ৩৩ বছর। এই বয়সের মধ্যেই খুন, গোলাগুলি, স্মাগলিং সহ বিভিন্ন ধরনের দুষ্কর্মে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছিলেন দিল্লির এই কুখ্যাত গ্যাংস্টার। দিল্লির আলিপুরের কাছে তাজপুর গ্রামে ছিল সুনীল মানের বাড়ি। একাধিক অপরাধে জড়িত হয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন তিলু তাজপুরিয়া। ২০১৬ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর থেকেই তিনি কারাগারে বন্দি।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লির রোহিণী কোর্ট কমপ্লেক্সে একটি আদালতের ভিতরে ভয়াবহ গোলাগুলি চলে। সেই শুটআউট কাণ্ডে মারা যান জিতেন্দর মান ওরফে গোগি নামের আর এক কুখ্যাত গ্যাংস্টার। এই গোগিকে হত্যার সাথে যুক্ত থাকার দায়ে গ্রেফতার করা হয় তিলু তাজপুরিয়াকে।
৩০ বছর বয়সী গোগিও তিহাড় জেলেই বন্দি ছিলেন। ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর অপরাধের মামলার শুনানির দিন তিনি কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ওই আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। গোগি আদালতে প্রবেশ করার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে আইনজীবীদের পোশাক পরে এসে দুই বন্দুকধারী দুরন্ত বেগে একের পর এক গুলি চালাতে থাকে। নিমেষের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান গোগি। সঙ্গে সঙ্গে আততায়ীদের পালটা গুলি চালাতে থাকেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। ঘটনাস্থলে আইনজীবীদের পোশাক পরা দুই আততায়ীরও মৃত্যু হয়। দেখা যায় যে, এরা দুজনেই তিলু তাজপুরিয়ার গ্যাং-এর সদস্য ছিল।
দিল্লির আলিপুরের বাসিন্দা গোগি ছিলেন দিল্লির মোস্ট ওয়ান্টেড গ্যাংস্টার। ২০২০ সালের মার্চ মাসে তাঁর গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত রাজধানীতে তাঁর দুষ্কর্মের দাপট ছিল ভয়াবহ, খুন, ডাকাতি ও চাঁদার জুলুমবাজির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ১৯টি মামলা দায়ের হয়েছিল। ২০০৯-১০ সাল নাগাদ তিলু আর গোগি দিল্লির স্বামী শ্রদ্ধানন্দ কলেজে পড়াশোনা করাকালীন দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল একেবারে গলায় গলায়। কিন্তু, সেই সময়ে তাঁরা দুজনে কলেজের ভিন্ন ভিন্ন পার্টিকে সমর্থন করতেন। এই ভিন্ন সমর্থনই দুজনের বন্ধুত্বের মধ্যে কাল হয়ে দাঁড়ায়।
কলেজে নির্বাচনের সময় দুই আলাদা পার্টির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং দুই বন্ধুর মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে বাড়তে তা একেবারে শত্রুতায় গিয়ে পরিণত হয়। এই শত্রুতার জেরে দুজনের আলাদা গ্যাং তৈরি হয় এবং ২০১৩ সাল পর্যন্ত সেই গ্যাং-এর খুনোখুনিতে ২০ জনেরও বেশি দলীয় সহযোগীর প্রাণ যায়। ২০২১ সালে রোহিণী কোর্টে গোগি গুলি করে মেরে ফেলা হয়। এই হামলা করার পিছনে মাস্টারমাইন্ড হিসাবে কাজ করেছিল তিলু। এরপর আজ, গোগির মৃত্যুর ২ বছর সম্পূর্ণ না হতেই অন্য আরেক শত্রুগোষ্ঠীর হাতে খুন হয়ে গেল গ্যাংস্টার তিলু তাজপুরিয়া।
আরও পড়ুন-
'মা কালী'-র স্কার্ট ওড়ানো ছবি সরিয়ে ফেলে ক্ষমা চাইল ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রক, টুইটারে হিন্দু ধর্মকে সম্মান জ্ঞাপন
জুন মাসের মধ্যেই সমস্ত সরকারি কর্মীদের মাইনে বন্ধ? ৯ মে জরুরি বৈঠকের ডাক দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
আজ দক্ষিণ দিনাজপুরে জনসংযোগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘আমাদের অনুকরণ করছে’, কটাক্ষ দিলীপ ঘোষের